স্পোর্টস ডেস্ক : শিরোপা ধরে রাখার মিশনে মাঠে নেমে মেক্সিকোর বিপক্ষে হেরে বসে গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন জার্মানে। এরপরই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের শঙ্কা জাগে মুলার-ক্রুস-ওজিলদের। কাজানের মাঠে গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে হেরে সেই শঙ্কা বাস্তবে রূপ নিলো আর আসরের গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে পড়ল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। আর এই বিদায়ে জার্মানি নিজেদের ইতিহাসে ১৯৩৮ সালের পর প্রথমবারের মতো গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলো।
শিরোপা আশা নিয়ে শুরু করে গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিয়েছে বলে নয়, জার্মান ভক্তদের দুঃখের কারণ দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে যাচ্ছেতাই জার্মান পারফরম্যান্স। ইউরোপের শক্তিশালী দলগুলোর মধ্যে জার্মানি অন্যতম। তাদের এই বিদায় মেনে নিতে পারছে না অনেক নামীদামী ফুটবল বোদ্ধারাও। সব মিলিয়ে বিদায়ী জার্মানির এমন করুণ বিদায়ের পেছনে পাঁচটি কারণ খুঁজে বের করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এএফপি।
প্রথমত, তারকা ফুটবলারদের বাজে পারফর্ম
জার্মান কোচ জোয়াকিম লো তার দলের প্রতিষ্ঠিত এবং পুরনো সদস্যদের ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেননি এবং পুরনোরাও কোচের আস্থার প্রতিদান দেননি। যেমন মেসুত ওজিল এবং স্যামি খেদিরার কথাই উল্লেখ্য। মেক্সিকোর কাছে হেরে যাওয়া ম্যাচে বাজে ফর্মের কারণে দুজনকে দ্বিতীয় ম্যাচে একাদশে রাখেননি লো। তৃতীয় ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামালেও শুরু থেকেই নিষ্প্রভ ছিলেন ওজিল-খাদিরা। এমনকি আসল রুপে দেখা যায়নি রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা জার্মান মিডফিল্ডার টনি ক্রুসকেও। শুধু সুইডেনের বিপক্ষে জয়সূচক গোল ছাড়া তিন ম্যাচেই যেন নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন ক্রুস।
দ্বিতীয়ত, বিশ্বকাপের আগেই ছন্দহীন জার্মান ফুটবল
কিছুদিন আগেই জার্মানির সঙ্গে ২০২২ সাল পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করেছেন লো। অথচ দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে হেরে বিদায়ের পর অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে জার্মানির হয়ে তার একযুগের স্বর্ণসময়। মেক্সিকোর কাছে হার দিয়ে শুরু, সুইডেনের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের গোলে জয়, আর শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে এমন হার! বাছাইপর্বে ১০ ম্যাচে সব কটিই জিতে রাশিয়ার টিকিট নিশ্চিত করলেও বিশ্বকাপের আগে প্রীতি মাচগুলোতেও ছন্দহীন ছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। এমনই অবস্থা শেষ করে ভালো খেলেছিল জার্মানরা সেটিও মনে করে বলতে হবে। বিশেষ করে গত ১২ মাস ধরে জার্মানদের ফুটবল অনেকটাই স্রোতহীন স্থির হয়েছিল।
তৃতীয়ত, তরুণ ফুটবলারদের সুযোগ না দেওয়া
জার্মানদের হয়ে পরীক্ষিত তরুণ তুর্কীদের কাজে না লাগানোর বিষয়টিকেও একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করছে এএফপি। গত বছর সিনিয়র কোনো তারকা ছাড়াই কনফেডারেন্স কাপ জেতে জার্মানি। তরুণ সেই সদস্যদের মধ্যে একমাত্র টিমো ওয়ার্নারকেই সিনিয়র টিমের সঙ্গে সুযোগ দেয়া হয়েছে। অথচ কনফেডারেসন্স কাপ জেতায় যারা আলো ছড়িয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম লেয়ন গোরেটযকা, নিকলাস সুয়েলে, জুলিয়ান ব্র্যান্ডট বা সিবাস্তিয়ান রুডিদের ঠিকমতো সুযোগ দেন লো। তারা সুযোগ পেয়েছে একমাত্র সিনিয়র কোনো তারকার কার্ড বা ইনজুরি সমস্যা থাকলে।
অনেকের মতে, ম্যানচেস্টার সিটির লেরয় সানে, যে সবশেষ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মৌসুমের সেরা তরুণ ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছিল এমন খেলোয়াড়দের সুযোগ দেয়া উচিত ছিল জার্মান কোচের।
চতুর্থত, কোচের অতিরঞ্জিত বক্তব্য
কাজের আগে ডামাডোল পেটানো বা অতিকথনের কারণে কখনো যা ভাবা হয় তার উল্টোটা হয়। বিশ্বকাপ শুরুর আগে টনি ক্রুস এবং জেরমে বোয়েটেং দুজনই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিল, জার্মানরাই রাশিয়া বিশ্বকাপের “অ্যা টুর্নামেন্ট টিম”।
তাদের অতিকথনের কারণেই হোক বা যে কারণেই হোক আসর থেকে ছিটকে পড়ায় জার্মানদের বাস্তবতা এখন পুরোটাই ভিন্ন।
বাছাইপর্বে ১০ ম্যাচের সব জিতে রাশিয়া মিশনের আসলেও জার্মানি সর্বশেষ করে ভালো খেলেছে সেটি মনে করতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে যেতে হয়েছে জার্মানির মাটস হামেলকে। “মেক্সিকোয় ম্যাচটার পরই আমরা নিজেদের এই অবস্থায় এনে ফেলেছি। আমরা ভালো খেলেছি এমন সর্বশেষ ম্যাচটা ছিল গতবছরে।”
পঞ্চমত, আক্রমণভাগের চেয়ে দুর্বল রক্ষণভাগ
রাশিয়া মিশনের রক্ষণভাগের দুর্বলতা বেশ ভালোই ভুগিয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের। কোচ জোয়াকিম লোর প্রথম পছন্দ সেন্টার ব্যাক ম্যাটস হামেলস এবং জেরমে বোয়েটেং উভয়েই ম্যাচগুলোতে ছিলেন ধীরগতির। এএফপি
আপনার মতামত লিখুন :