ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশের যে অর্থনীতি, মানুষের যে গড়পড়তা আয়, এবং ঢাকা শহরের যে ধরনের দুর্বল অবকাঠামো এবং বিনোদন সুবিধা, সেখানে ঢাকা যে বিদেশিদের জন্য এতটা ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে, তা অনেকের কাছেই অবাক লাগবে। কিন্তু মার্কার নামের একটি সংস্থা আবারও বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নগরীগুলোর তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় ২০৯টি নগরীর বিশ্বের অনেক উন্নত এবং ধনীদেশের বড় বড় নগরীকে পেছনে ফেলে ঢাকার অবস্থান ৬৬ নম্বরে।
কেন ঢাকা নগরী এত ব্যয়বহুল, এর একটা ব্যাখ্যার জন্য বিবিসি বাংলা অর্থনীতিবিদ ড: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছে। তিনি বিবিসিকে বলেন, এর একটা কারণ বাংলাদেশে বিদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে, সুতরাং তাদের জন্য চাহিদাও বাড়ছে। তাদের প্রথম চাহিদার জায়গা হলো বাসস্থান। বিদেশিদের অনেকে অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে চান না। তারা আলাদা বাড়িতে থাকতে চান। সেটার খরচ ঢাকা শহরে অত্যন্ত বেশি। আর এখন যেসব বিলাসবহুল নতুন অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হচ্ছে, সেগুলোর ভাড়াও অন্য যে কোন নগরীর তুলনায় বেশি। যাতায়ত খরচ, অন্যান্য খরচও তুলনামূলকভাবে বেশি। সব মিলিয়ে ঢাকা বিদেশিদের জন্য ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ঢাকায় বসবাসরত বিদেশিরা প্রাত্যহিক জীবনের যেসব জিনিসপত্র কেনেন, তার সবটাই আমদানি করা। বাংলাদেশি পণ্যের মান নিয়ে বিদেশিদের সন্দেহ আছে। তারা মানসম্মত বিদেশি পণ্য কিনতে চান। যার পুরোটাই ডলারে আমদানি করতে হয়। ফলে তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
"আগে বিদেশিরা সংখ্যায় কম ছিলেন, চাহিদা কম ছিল, শহরও ছোট ছিল। তারা এক ধরণের নিয়ন্ত্রিত বাজারে ডিউটি ফ্রী কেনাকাটার সুযোগ পেতেন। এখন বিদেশিরা সংখ্যায় যেমন বেশি, তাদের ভৌগোলিক বিস্তৃতিও অনেকে বেশি। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শুরু করে ভারত পাকিস্তান,ইউরোপ, আমেরিকা থেকে শুরু করে এমনকি আফ্রিকা থেকেও অনেকে এসে এখন ঢাকায় থাকেন। ব্যবসা বাণিজ্য করেন। এদের চাহিদা অনুযায়ী বাজারে পণ্য এবং সেবার সরবরাহ কম।"
বাংলাদেশ যদি বিদেশিদের জন্য এতটা ব্যয়বহুল হয়, সেটা বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে?
ড: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলছেন, এটা একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। "কারণ ঢাকা শহরে আগের চেয়ে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে। বিদেশিরা্ আসছেও বেশি। কেউ স্থায়ীভাবে, কেউ সাময়িকভাবে। ঢাকা কিন্তু সেই অর্থে সাংস্কৃতিভাবে সেরকম আকর্ষণীয় জায়গা নয়। অনেকে সাম্প্রতিকালে নিরাপত্তা সংক্রান্ত আশংকার মধ্যে আছেন। একদিকে সাংস্কৃতিক বিনোদনের অভাব, আরেকদিকে নিরাপত্তার অভাব। এর সঙ্গে যদি এটি ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে, তুলনামূলকভাব ঢাকার আকর্ষণ কমে যাবে। সেজন্যেই আমরা লক্ষ্য করছি, অনেকে ব্যাংককে বসে, বা দিল্লি বসে বা এমনকি কাঠমান্ডুতে বসে ঢাকার সঙ্গে ব্যবসা করতে চান। বা ঢাকা এসে মিটিং করে আবার চলে যেতে চান। কাজেই বিষয়টি আমাদের জন্য মধ্য মেয়াদে সুখকর নয়।"
ড: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে যে নতুন বিকাশমান মধ্যবিত্ত শ্রেণী তৈরি হচ্ছে, তারাও এখানে একটা চাপ তৈরি করছে। কারণ বিকাশমান মধ্যবিত্ত এখন মানসম্পন্ন পণ্য চায়, মানসম্পন্ন সেবা চায়।
"লোকের হাতে টাকা গেলে চাহিদা বাড়ে। বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে আসলে চাহিদা বাড়ে। এই চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যদি সরবরাহ না বাড়ে, তাহলে অবশ্যই এটা সমস্যা সৃষ্টি করবে। আমাদের দেশে যদি ট্রাফিক জ্যামে সবাই আটকে থাকে, তখন আমি যদি হেলিকপ্টারে যাতায়ত করতে চাই, তখন হেলিকপ্টারের দাম বেড়ে যাবে। কারণ এটিই তখন বিকল্প হিসেবে অনেকে দেখবেন।" - বিবিসি
আপনার মতামত লিখুন :