তরিকুল ইসলাম : বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে এড়িয়ে মার্কিন প্রশাসন স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপ করায় নড়েচড়ে বসেছে ঢাকা। ট্রাম্প প্রশাসনের আচমকা এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও এর পরোক্ষ প্রভাব বাংলাদেশকে পেয়ে বসবে বলেই মনে করছেন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরা।
এ নিয়ে চলতি মাসের শুরুর দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক বিষয়াবলি দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত অনুবিভাগের তরফে বিস্তর আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র।
সূত্র বলছে, ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন তাদের দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক মিত্রদের বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটি বিশ্ববাণিজ্যে প্রভাব পড়বে। আমেরিকা যদি এ সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা না করে তবে এটি একটি নেতিবাচক উদাহরণ হিসাবে থেকে যাবে।
এতে করে বিভিন্ন দেশ তাদের প্রতিবেশী বা প্রতিপক্ষ দেশের প্রতি এমন সিদ্ধান্ত নিতে থাকবে। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কূটনীতিকদের পর্যালোচনা সভায় উঠে এসেছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে কানাডা, ইইউ এবং মেক্সিকোর স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়বে। এতে উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশের কারখানার ওপর প্রভাব পড়বে।
দেশটি নিরাপত্তার অজুহাতে বৈশ্বিক বাণিজ্য সংস্থা ডব্লিউটিওকে এড়িয়ে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটিই উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থাকে এড়িয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো যদি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এভাবে দ্বিপক্ষীয় সিদ্ধান্ত নিতে থাকে বিশেষ করে শুল্ক আরোপের খড়গ যদি নেমে আসে তবে এক সময় বিশ্ববাণিজ্য সংস্থাটি অকার্যকর হয়ে পড়বে।
বাণিজ্যে ভারসাম্যের জন্য বৈশ্বিক ফোরামগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি বলেই মনে করছে বাংলাদেশ। বিশ্ব বাণিজ্য কমলে বাংলাদেশের রপ্তানিও কমে যাবে। বিশ্ব মন্দার প্রভাব পড়বে প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদের উপরও। বিদেশে শ্রমবাজারে ধস নামলে রেমিটেন্স থেকে আয়ের উৎস কমে যাবে।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবুর রোজ সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানান, আমদানিকৃত স্টিলের ওপর ২৫ ভাগ এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ১০ ভাগ কর শুল্ক আরোপ করে হয়েছে। আমরা একভাবে কানাডা ও মেক্সিকো এবং আরেকভাবে ইইউর সঙ্গে সমঝোতা করার লক্ষ্যে কাজ করে যাব।
কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে উত্তর আমেরিকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি-নাফটা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা চলছে। ইউরোপের সঙ্গেও কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে তবে তা যথেষ্ট নয়।
যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে অগ্রহণযোগ্য, বদ্ধ বাণিজ্যিক নীতি, এবং দীর্ণ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জেন ক্লদ ঝাঙ্কার। সে সময় তিনি বলেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে এর উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। ঘোষণাও দেন।
আর এই শুল্কারোপ যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরের প্রতিবেশীদের সঙ্গে করা নাফটা চুক্তিরও বিরোধী। বিশ্ববাণিজ্য যুদ্ধের এই সময়ে ট্রাম্পের এই শুল্কারোপ আটলান্টিকের উভয় পাড়েই বিরূপ প্রভাব ফেলবে। স্টিলে শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন এমন ধারণা আগে থেকেই ছিলো।
আপনার মতামত লিখুন :