শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৫ জুন, ২০১৮, ০৯:২৮ সকাল
আপডেট : ২৫ জুন, ২০১৮, ০৯:২৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

লামায় ৪টি সিনেমা হলের মধ্যে ৩টিই বন্ধ

মো. নুরুল করিম আরমান, লামা: আবহমানকাল ধরে বাঙালির অন্যতম বিনোদন মাধ্যম সিনেমা হল। এক সময় সুযোগ পেলে সব বয়সের মানুষ পরিবার, বন্ধু স্বজনদের নিয়ে দেখতে যেতেন সিনেমা হলে। সিনেমা দেখেই তাদের মনের খোরাক মেটাতো। সিনেমা দেখার কথা উঠলেই বলা হতো ‘চলো বই দেখে আসি।’ সেদিনের সিনেমার গল্পের বুনন এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, সিনেমা মানুষের হৃদয়ে গেঁথে যেত। আবার প্রেক্ষাগৃহের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে, কখনো আবার কালোবাজারির হাত থেকে দ্বিগুণ দামে টিকিট কেটে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে চলচ্চিত্র উপভোগ করা খুবই সাধারণ ছিল। অথচ বর্তমানে বান্দরবানের লামা উপজেলার আড়াই লাখ মানুষের কাছে সিনেমা হল যেন এক সুদূর অতীত। কতদিন সিনেমা হলে যাওয়া হয়নি, এখন অনেকে মনে করে বলতে পারেনা। উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত এক সময়ের আলোচিত বিলাস বহুল ৪টি সিনেমা হলের মধ্যে এখন ৩টিই বন্ধ। দর্শক শূণ্যতায় হলগুলো একে একে বন্ধ হয়ে সেখানে গড়ে উঠছে মার্কেট, দোকান ও বসতবাড়ি। আবার চালুকৃত সিনেমা হলটিতে যে দর্শক যাচ্ছে, তাও যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারনা। বর্তমান ডিজিটাল যুগে উপজেলায় চিত্তবিনোদনের কোন ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আশির দশকের দিকে বান্দরবানের লামা উপজেলায় ৪টি সিনেমা হল স্থাপিত হয়। নব্বই দশকেও এসব সিনেমা হলগুলো সগৌরবে চলমান ছিল। হলগুলোতে সিনেমা দেখতে দীর্ঘ লাইন দিয়ে টিকেট কাটতে হত। কোনো সিনেমা মনে ধরলে কেউ কেউ দু’তিন বারও দেখতো। দুই হাজার সালের দিকে সিনেমা হলগুলির সামনে দিন দিন দর্শকের দেখা কমতে থাকে। ফলে একে একে বন্ধ হতে থাকে সিনেমা হলগুলো। ২০০৯ সালে লামা উপজেলার বনফুল সিনেমা হল, ২০০১ সালে কুমারীর বনগিরি সিনেমা হল, ২০১০ সালে আজিজনগরের ছবিঘর সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে চলমান লামা উপজেলার আজিজনগরের সুর বিতান সিনেমা হল, যা বর্তমানে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এর মধ্যে আবার নিয়মিত সবকটি শোও চলছে না এ সিনেমা হলে। মাঝে মধ্যে বন্ধ থাকে এ সিনেমা হলটি।

সম্প্রতি আজিজনগরের সুরবিতান সিনেমা হলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চলছে ‘বাংলার বাঘ’ নামের একটি সিনেমা। বিকেলের শো’তে ডিসি ও রিয়ার স্টল মিলে ৭৫০টি আসন থাকলেও মাত্র ৮ জন দর্শক উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ১২০ টাকা মূল্যের ‘ডিসি’তে ২৫০টি আসনের বিপরীতে দর্শক ছিলেন ২জন। আর ‘রিয়ার স্টলে’ ৫০০টি আসনের বিপরীতে দর্শক ছিলেন ৬জন। এ হলের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত আছেন সাব্বির আহমদ।

তিনি চলচ্চিত্র ব্যবসার মন্দাভাবের একাধিক কারণ রয়েছে বলে মনে করে তিনি আরও বলেন, আগে বিনোদনের তেমন ব্যবস্থা ছিল না। এতো চ্যানেল ছিল না। এখন নতুন নতুন হিন্দী ছবি চ্যানেলে দেখাচ্ছে। ঘরে বসে প্রাইভেট চ্যানেলে হিন্দী বাংলা ছবি দেখা যাচ্ছে, অথচ হলে দেখা যাচ্ছে না। কেন মানুষ হলে এসে সিনেমা দেখবে? এ সময় তিনি আরও বলেন, নব্বই দশকের দিকে টিভিতে সপ্তাহে একটি চলচ্চিত্র প্রচার করা হতো। কিন্তু নব্বই দশকের শেষ দিকে অনেকগুলো টিভি চ্যানেল চালু হওয়ার পর প্রতিদিনই চলচ্চিত্র প্রচার করতে থাকে। এছাড়া মোবাইল ও সিডিতে প্রতিনিয়ত দেখা যায় চলচ্চিত্র। অনেকদিন ধরে এখানে আছি। রাতের শো তো হয় না। ভালো ছবির কোনো বিকল্প নেই। ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ, অবাধে মোবাইল সিডিতে চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধে ব্যবস্থা নিলে হলে দর্শক আসবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি।

গবেষকদের মতে, মানুষ এখন চায়ের দোকানে বসে টিভি ও সিডির মাধমে মিনি সিনেমা হল তৈরী করে, সেখানে তাদের চিত্তরঞ্জনের খোরাক মেটাচ্ছেন। মোবাইল আর আকাশ সংস্কৃতির গ্রাসে মানুষ ভুলতে বসেছে রূপালী পর্দার সেই সোনালী দিনগুলির কথা। আবার বেশ কয়েক বছর যাবৎ সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মিত না হওয়ায় মানুষ ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে সিনেমা হলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাকী দুই সিনেমা হলগুলোও যা চলছে তাও অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে। তবে ভাল মানের সিনেমা ও উপযুক্ত পরিবেশ হলে আবারও মানুষকে হলমুখী করা যাবে বলে মনে করেন তারা।

সিনেমা হলের ব্যবসায় মন্দা ভাবের নেপথ্যের কারণ কী? রয়েছে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য। দর্শকদের মতে, হলে যাওয়ার পরিবেশ নেই, ভালো মানের ছবি নেই। হল মালিকরা বলছেন, সিনেমা হল চালাতে যা ব্যয় হয়, তার একাংশও উঠে না। অন্যদিকে চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রযোজক, পরিবেশকদের অভিযোগ আকাশ সংস্কৃতির সহজ লভ্যতা ও হল মালিকদের অসহযোগিতা চলচ্চিত্র শিল্পের দুর্দিনের কারণ। সমাধানের জন্য সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে বলে অভিমত চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। এদিকে দর্শকদের প্রায়শ: অভিযোগ করতে দেখা যায়, সিনেমা হলে গিয়ে খুব সহজেই কিছু সময় পর বুঝা যায়, ছবিটি কোনো হিন্দী ছবির নকল। নির্মাণের দিকে দিয়ে তারা হিন্দী ছবির ধারে কাছেও যেতে পারেনি। পকেটের পয়সা খরচ করে এভাবে প্রতারিত হতে চান না তারা। প্রতিটি চলচ্চিত্রই দেখা যায় কোনো না কোনো ভারতীয় তথা দক্ষিণ ভারতের, বলিউড ও টালিউডের ছবির আদলে তৈরি করা হয়েছে।

বন্ধ বনফুল সিনেমা হলের মালিক মরহুম আলহাজ মো. আলী মিয়ার ছেলে মো. ইউছুপ আলী ও তৈয়ব আলী বলেন, একসময় লামা ৪টি সিনেমা হল চালু ছিল। এসব সিনোম হলগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণেই রমরমা ব্যবসা হতো। অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু মানুষ স্যাটেলাইট চ্যানেল গুলোর সুবাদে ঘরে বসে সব ধরনের সিনেমা দেখার সুযোগ পাওয়ায় মানুষ এখন সিনেমা হলে যাওয়া কমে যায়। এতে দর্শক সংকটের কারণে বিদ্যুৎ বিল কর্মচারিদের বেতন ভাতা পর্যন্ত তোলা যায় না। এতে করে একে একে হলগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। এতে সংশ্লিষ্টরা অনেকে বেকার জীবনে আছেন। অনেকে পেশা ত্যাগ করে ফিরে গেছেন অন্য পেশায়। তারা আরও বলেন, দর্শকের অভাবে বাধ্য হয়ে বনফুল সিনেমা হলটি ভেঙ্গে এখন আলী মিয়া শপিং কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়েছে। প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে রুচিসম্মত সিনেমা বানানোর জন্য নির্মাতাদের উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়েছেন হল মালিকরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়