শিরোনাম
◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস ◈ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ঢাকা ফিরছিলেন রফিক, পথে প্রাণ গেল সবার ◈ স্থায়ী জামিন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছি ড. ইউনূসের আইনজীবী ◈ উপজেলার ভোটে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : ওবায়দুল কাদের  ◈ শ্রম আইন লঙ্ঘন: ড. ইউনূসসহ ৪ জনের জামিন ২৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি ◈ ময়মনসিংহে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ২৬ ◈ ফরিদপুরে বাস-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত বেড়ে ১৩  ◈ ইরানের হামলার জবাব দেবে ইসরায়েল: সেনাপ্রধান ◈ সৌদিতে কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা ◈ কৃষি খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে তিন  বছরে সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ

প্রকাশিত : ২৫ জুন, ২০১৮, ০১:১২ রাত
আপডেট : ২৫ জুন, ২০১৮, ০১:১২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাবাদের স্বপ্ন চাপা পরে যায় বাসের চাকায়!

কামরুল হাসান: রাজীবের বায়না এই ঈদেই তাকে নতুন বাইক কিনে দিতে হবে। এ নিয়ে রোজার শুরু থেকেই আবদার শুরু করে দিয়েছে সে। মধ্যবিত্ত পরিবার। সেকান্দার সাহেবের ছেলের আবদার পূরণের সামর্থ্য নেই কিন্তু ছেলে নাছোড়বান্দা। বাসায় শুরু করে দিয়েছে উৎপাত। ঘরের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সবকিছুই নষ্ট করতে শুরু করে দিয়েছে।

সর্বশেষ রাজীব হাতিয়ার হিসেবে নিজের জীবনটাকেই বেছে নেয়। পিতা-মাতাকে সোজা সাপটা জানিয়ে দিয়েছে ঈদের আগে মোটরসাইকেল কিনে না দিলে আত্মহত্যা করবে সে।

ছেলের এমন পাগলামি মা-বাবা সহ্য করতে না পেরে ধার দেনা করে ঈদের দুইদিন আগে কিনে দেয়া হল ছেলের শখের মোটরসাইকেল। রাজীবের আনন্দ জেন আর শেষ হয় না। বন্ধুদের নিয়ে ঈদের দিন ঘুরে বেরাচ্ছে লোকাল এরিয়া ছেড়ে হাইওয়েতে। রাস্তা ফাঁকা পেয়ে আবেগকে ধরে রাখতে পারেনি। টপ স্প্রিডে ছুটে চলছে ওদের মোটরসাইকেল। শুধু রাজীব নয় ওর সাথে আছে আরো এক ঝাঁক তরুণ যাদের বয়স ১৫ থেকে ১৮ বা ২০ হবে। দল বেঁধে ফাঁকা রাস্তায় রেস দিচ্ছে। মাথায় নেই কোন হেলমেট। হেলমেট পরলে নাকি মানুষ হাসাহাসি করে। এজন্য লজ্জায় হেলমেট পরেনি তারা।

ঈদের দিনটাই যে রাজীবের জীবনের শেষ দিন তা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি কেউ। রাস্তায় বিপরীত দিক থেকে আসা বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে চাপাঁ পরে যায় পৃথিবীর সব আশা আকাঙ্খা ও চাওয়া-পাওয়া।

বিভৎস সেই দৃশ্য। মাথার মগজটা ঠিক ডান দিক থেকেই ফেটে বের হয়ে গেছে বা পায়ের হাটু থেকে নিচ পর্যন্ত নেই। বাইকের পিছনে যে ছিল তার অবস্থা আরো ভয়াবহ। বাসের চাকার নিচে পড়েছিল সে। শরীরে নিচের অংশটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

রাজিবের বাবার একমাত্র ছেলে ছিল সে। মোটরসাইকে দুর্ঘটনায় প্রাণ নিল একমাত্র ছেলের। বাবার স্বপ্নগুলো চাপা পরে রইলো বাসের চাকায়।

উপরে ঘটনা কাল্পনিকভাবে উপস্থাপন করলেও বাস্তবতার সাথে তফাৎ খুজেঁ পাওয়া যাবে না। বর্তমান তরুণ সমাজের একরোখা স্বভাব, একাদ্রতা সব প্রজন্মকে ছাড়িয়ে গেছে। এরা যেমন মেধাবী তেমনি অন্য অংশেও প্রচন্ড এ্যাডভান্স, হিংসাত্মক মনোভাবে জড়িত।

প্রতি বছরই ঈদের আগে এবং ঈদের দিনসহ কয়েকদিন প্রচুর পরিমানে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। এবারের ঈদের আগেরদিন ঈদের দিন এবং ঈদের পরের দিন মিলিয়ে প্রায় ৫০টির উপরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হয়েছে অনন্ত ২০ জনের মত (বিভিন্ন অনলাইনের দুর্ঘটনার নিউজ এর ভিত্তিতে অনুমান নির্ভর)।

এবারের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যাটা অন্যান্য বারের চেয়ে একটু বেশিই মনে হচ্ছে। এবারে চলুন জেনে নেই মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনার হার বেশি হবার কারণ কি ?

গতি: প্রথমই যে বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে ধরা যায় তা হলো ওভার স্প্রিড বা দ্রুত গতিতে চালানোর প্রবনতা। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণও এটি।

অদক্ষ চালক: দুর্ঘটনায়পতিত বেশিরভাগই উঠতি বয়সী তরুণ। তাদের বয়স ১৫ থেকে ১৮ এর মধ্যে। মোটরসাইকেল চালানোর দক্ষতা ভালভাবে রপ্ত না করেই অদক্ষতার সাথে মোটরসাইকেল পরিচালনা করে। ফলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

হিংসাত্মক মনোভাব: উঠতি বয়সি ছেলেদের মধ্যে সবসময় একটি হিংসাত্মক মনোভাব তৈরি হয়ে থাকে সর্বোচ্চ গতি তৈরিতে। বন্ধুদের প্ররোচণায় হোক আর নিজের মধ্য থেকে হোক সবার উপরে স্প্রিড উঠানোটাকে একটি ঐতিহ্য মনে করে।

হেলমেট ব্যবহার না করা: বেশিরভাগ দুর্ঘটনায় পরা তরুণদের মাথায় হেলমেট ছিল না। কয়েকজন তরুণের সাথে এ বিষয় কথা বললে তারা বলে হেলমেট পড়লে সবাই তাকিয়ে থাকে যা তাদের লজ্জায় ফেলে দেয়। এজন্য তারা হেলমেট ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না।

পারিবারিক মূল্যবোধ: সমাজ গঠনে পারিবারিক মূল্যবোধ যেমন অপরিহার্য ভূমিকা রাখে তেমনি সন্তাকদে সঠিকভাবে পরিচালনার দায়িত্বও পরিবারের। পরিবার থেকে সন্তানকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা।

প্রতিযোগীতামূলক মনোভাব: রাস্তায় মোটরসাইকেল চালানো অবস্থায় তরুণদের মাথায় একটি প্রতিযোগীতামূলক মনোভাব তৈরি হয়। যা তাকে স্প্রীডে চালাতে উদ্ভুদ্ধ করে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।

করনীয়:

পরিবারের করণীয়: এরকম অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা রোধে প্রথম যাদের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন তা হলো পরিবার। পরিবার থেকে সন্তানকে এমন মানুষিকতা তৈরি করে দিতে হবে যেখানে একটা বিবেকবোধ জাগ্রত থাকে। সন্তাককে বাস্তবতাকে বুঝাতে সহয়তা করতে হবে। সন্তানের আবদার পুরনে সহনীয় হতে হবে। বড় ভাই বা বাবার মোটরসাইকেল সন্তানকে সহজে না দেয়া এবং দিলেও সঠিকভাবে চালানোর নির্দেশনা দেয়া।

রাষ্ট্রের করণীয়: বাইক কেনা থেকে শুরু করে চালানো পর্যন্ত কোন অবস্থাতেই যেন অপ্রাপ্ত বয়স্ক কারো কাছে না যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। রাস্তায় চেক পোষ্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। হেলমেট পরে বাইক চালাতে আরো ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা। কোন অবস্থাতেই যাতে অদক্ষ কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স না পায় না নিশ্চিত করা।

এক একটি তরুণ, এক একটি স্বপ্ন। যে স্বপ্নের সাথে জড়িয়ে থাকে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র। একটি সামান্য ভুলে অতল গহীনে হাড়িয়ে যেতে পারে এই স্বপ্নটি। স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের যে যার জায়গা থেকে যা করণীয় সেটাই করা উচিত। দিন শেষে তরুণদের ভাবাতে হবে তারও একটা পরিবার আছে। দিন শেষে তারা তার জন্য অপেক্ষা করে।

সূত্র: বিডি২৪লাইভ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়