আদম মালেক : শিল্প ও আবাসিক বর্জ্যরে দূষণে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে কার্প জাতীয় মাছের অন্যতম প্রজননকেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদী। দূষণের কারণে কয়েক বছর ধরে হালদায় কমেছে মাছের রেণু উৎপাদন। বেশ কয়দিন যাবৎ ভাসছে মরা মাছ। দূষণের মাত্রা এভাবে বাড়তে থাকলে আশপাশের ফসলি জমির উর্বরতা শক্তিও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।
হালদা দূষণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায় হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, নদীর পানিতে অ্যামোনিয়া বৃদ্ধির কারণে দূষণ বাড়ছে। মাছ মারা যাচ্ছে । হালদা দূষণের এ ধারা অব্যাহত থাকলে তার প্রভাব পড়বে আশপাশের জনজীবনেও।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া জানান, হালদার যেসব স্পটে মাছ মারা যাচ্ছে সেসব স্থানে পানি পরীক্ষা করে দশমিক তিন থেকে দশমিক ছয় পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যদিও পানিতে এর সহনশীল মাত্রা ০.০২ পিপিএম। সেখানকার পানিতে পাওয়া গেছে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ১৪ থেকে ২৮ গুণ বেশি অ্যামোনিয়া। যা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য ও মাছের প্রজনন নিয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অন্তত ১০টি কারণে প্রতিদিন দূষণের কবলে পড়ছে হালদা নদী। এর মধ্যে রয়েছে, আবাসিক, শিল্প ও ট্যানারির বর্জ্য, নদী থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলন, নদীর তীরে একের পর এক গড়ে ওঠা ইটভাটায় নদীর মাটি ও পানির ব্যবহার, ফটিকছড়ির চা-বাগানগুলোর জন্য নদীর পানি ব্যবহার, নদীতে রাবার ড্যামের (বাঁধ) প্রতিবন্ধকতা, নদীর অন্তত ১১টি স্থানের বাঁক সমান করে ফেলা, নদীর তীরে তামাক চাষ ও যন্ত্রচালিত নৌযান থেকে তেলের নিঃসরণ।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে হালদায় গাঙ্গেয় প্রজাতির বিপন্ন ডলফিনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে নদীর পানিতে মাত্রাতিরিক্ত অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি পায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।
সূত্র জানায়, হালদা পাড়ের কারখানাগুলোর বেশির ভাগেরই ইটিপি (তরল বর্জ্য শোধনাগার) নেই। যেসব কারখানার ইটিপি রয়েছে, সেগুলোও সব সময় চালু করা হয় না। তাই কারখানা ও ট্যানারির দূষিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ছে।
হাটহাজারীর খন্দকিয়া, কাটাখালী, বাথুয়া, কৃষ্ণখালী, শাহ মাদারী ও চট্টগ্রাম নগরের বামনশাহী খাল বেয়ে বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও গৃহস্থালির বর্জ্য সরাসরি পড়ছে হালদায়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চলমান অন্যান্য আবাসিক এলাকার মাস্টার ড্রেনটি বামনশাহী খালের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে বামনশাহী ও হাটহাজারীর কুয়াইশ খালের মাধ্যমে নগর ও হাটহাজারীর বিশাল এলাকার বর্জ্য হালদায় গিয়ে মিশছে।
আপনার মতামত লিখুন :