শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২২ জুন, ২০১৮, ০৬:০৬ সকাল
আপডেট : ২২ জুন, ২০১৮, ০৬:০৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নির্বাচন গাজীপুরে আলোচনায় খুলনা

ডেস্ক রিপোর্ট : একই দিনে তফসিল ঘোষণা হলেও খুলনার নির্বাচনের চল্লিশ দিন পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণা। ভোট সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ সিটির ভোটে নজর সকলের। কেমন হবে গাজীপুরের ভোট? এমন প্রশ্ন ভোটারদের মুখে মুখে। ভোটের আলোচনায় ঘুরে-ফিরে আসছে খুলনা প্রসঙ্গ।
দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ খুলনার ভোটে অনিয়ম-কারচুপি ধরা পড়েছে খোদ নির্বাচন কমিশনের তদন্তে। এর আগের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে প্রকাশ্যে দখল-জালিয়াতির দৃশ্য দেখা গেলেও খুলনার ভোটকে পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো ‘শান্তিপূর্ণ জালিয়াতি’ বলে মন্তব্য করে। এই ভোট দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে ভোট জালিয়াতির নতুন মডেল বলেও মনে করছেন অনেকে। গাজীপুরে কি খুলনা মডেলে ভোট হবে নাকি ভোটের উৎসবে সবাই নির্বিঘ্নে অংশ নিতে পারবেন- এমন প্রশ্নে বিভক্ত গাজীপুরবাসী। এখানকার ভোটারদের মনে নানা শঙ্কা, ভয় আর আতঙ্ক।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় ইব্রাহিম হার্ডওয়্যার স্টোরে বসেছিলেন স্বত্বাধিকারী ষাটোর্ধ্ব মো. ইব্রাহিম আলম। নির্বাচনের কথা তুলতেই নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা। প্রসঙ্গ পাল্টে একথা-সেকথা। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আবার নির্বাচন প্রসঙ্গ। একপর্যায়ে তিনি বললেন, ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে। কেন্দ্রে যাব। যদি দেখি আমার ভোট আগে কেউ দিয়ে ফেলেছে তা হলে চলে আসবো। কী আর করার থাকবে।
এর বেশ কিছুটা সামনে মাছিমপুরে নজরুলের বস্তি। এক কক্ষের বসতঘরগুলোতে কিছু নারীর আনাগোনা। সেখানে দু’সন্তান নিয়ে থাকেন স্বামী পরিত্যক্তা তাসলিমা। হোটেলে কাজ করে তিন মুখের আহার যোগান। ভোলার ভেলুমিয়ারচর থেকে আসা তাসলিমা টঙ্গীতে ভোটার। ভোট দিতে পারলে ভালো, দিতে না পারলে কোনো দুঃখ নেই। তার সাফ কথা গ্যাঞ্জাম করে ভোট দেয়ার দরকার নেই।
তবে একই বস্তির পোশাক শ্রমিক হাবিব খন্দকার তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান। তিনি বলেন, ভোট আমার অধিকার। আমার ভোট আমি দিতে চাই। ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা জানি না। কেন্দ্রে সমস্যা হলে চলে আসবো। তবে এখনও মেয়র পদে কাকে ভোট দিবেন সে সিদ্ধান্ত নেননি তিনি।
নোয়াখালী থেকে আসা করাতমিল শ্রমিক আবদুল করিম ছোটবেলা থেকেই টঙ্গীতে। বেলা ১২টার দিকে এক হোটেলে ভাত খাচ্ছিলেন। ভোটের কথা উঠতেই তিনি বলেন, সবার মধ্যে জল্পনা-কল্পনা চলছে সরকার সরকারি দলের প্রার্থীদের জেতাতে ভোট কেটে নেবে। জানি না কি হয়।
কিছুটা এগুতেই দেখা ৫৫ নং ওয়ার্ডের মাছিমপুরের ভোটার মো. আজম সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত ১৫ই মে যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল তার আগে নির্বাচনী উৎসব জমে উঠেছিল। মানুষ এখন ভোটের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। স্থগিতের পর নির্বাচনী উৎসবটাও এখন আর চাঙ্গা নেই। মানুষ খুলনার নির্বাচনে কারচুপি দেখেছে। এখানে তাই হবে বলে শঙ্কিত আমরা। ভোট দিতে পারবো কিনা সেই সংশয় আছে।
তিনি বিএনপি সমর্থক ৫৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আবুল হাশেমের নির্বাচনী ক্যাম্প দেখিয়ে বলেন, এই প্রার্থী ২০১৩ সালের প্রথম গাসিক নির্বাচনেও কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। সেবার ১২৩ ভোটে হারেন। এবার নির্বাচনে প্রার্থী হতে গিয়ে ভোটার তালিকায় দেখেন যে, তিনি মারা গেছেন। পরে নির্বাচনী কর্মকর্তারা তাকে ‘বাঁচিয়ে’ তুলে আবার নাম তালিকাভুক্ত করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেন। এভাবে জীবিতকে মৃত আর মৃতকে জীবিত দেখিয়েও কারচুপি চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও ভোট সুষ্ঠু হবে না বলে প্রচার-প্রচারণা ও তৎপর বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান আরো কয়েকজন।
৫৫ নং ওয়ার্ড পেরুতেই ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা। মধুমিতা এলাকায় বসে দুপুরে টেলিভিশন দেখছিলেন রয়েল ইউনিভার্সিটির বিবিএর ছাত্র হৃদয় আহমেদ সানি ও অনলাইন প্রতিষ্ঠান ত্রি-লিংকের কর্মচারী শামীম আহমেদ। তারা বলেন, এই ওয়ার্ডে নির্বাচন নিয়ে আগে কোনো সময় তেমন সমস্যা হয়নি। তবে এবার মানুষের মধ্যে কিছুটা ভীতি কাজ করছে। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে কারচুপির নিউজ টেলিভিশনে দেখে অনেকে ভাবছে এখানেও তা-ই হতে পারে। তবে মধুমিতা বাজারের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ী আবদুুল মজিদ তার এলাকায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে পুরোপুরি আশাবাদী। যদিও অন্য ওয়ার্ডের বিষয়ে তার ধারণা নেই।
ওই বাজারে ভ্যানে করে আম বিক্রি করছিলেন আলী আহমেদ। আলী আহমেদ বললেন, সবাই বলাবলি করছে ভোট ঠিকমতো হবে না। পাশে থাকা এক বাসার ভাড়াটিয়া আমজাদ হোসেন বলেন, ভোটারদের মধ্যে ভয়-ভীতি কাজ করছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকের মধ্যেও একই শঙ্কা রয়েছে।
গাসিকের ৫৫ ও ৫৬ নং ওয়ার্ড থেকে কিছুটা দূরে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের দত্তপাড়ার এক সেলুনের কারিগর মনছুর আলী বলেন, আমি ভোট দেয়ার জন্য ঈদে বাড়ি যাইনি। আমাদের এলাকা ঠাণ্ডা। আশা করি ঠিকমতো ভোট হবে।
এর বিপরীতে মহাসড়ক পার হয়ে কিছুটা গেলেই ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের দক্ষিণ আইচপাড়ার বাসিন্দা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র ছাত্র নকীব নতুন ভোটার। তিনি বলেন, ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। সরকারদলীয় সমর্থকরা বলছে ভোট সুষ্ঠু হবে। কেউ কেউ বলছে সুষ্ঠু হবে না। আমরা আমাদের ভোট ঠিকঠাকভাবে দিতে চাই।
৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ রোডের বাসিন্দা সুমী আক্তার একজন পোশাক শ্রমিক। তিনি বলেন, একটু আশঙ্কা তো রয়েছে। ভালোভাবে ভোট হলে দিতে যাব। এখন আমাদের কাছে এসে কেউ কেউ ভোট চাচ্ছে। কিন্তু কাকে ভোট দেবো তা বলি না। তাতে অন্যরা মন খারাপ করবে। শত্রু হবে।
আবু সায়েম এক কাউন্সিলর প্রার্থীর জন্য কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, গাজীপুর-টঙ্গীর অধিকাংশ মানুষ অন্যান্য জেলা থেকে আগত। অনেকেই ঈদ করতে বাড়ি গেছে। তাই এখন মানুষের আনাগোনা কম। আগামী দু’-একদিনের মধ্যে মানুষের উপস্থিতি বাড়বে। এছাড়া স্থগিত হওয়ার আগে প্রথমবার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে অনেকের টাকা খরচ হয়ে গেছে। এজন্য এবার ভোটের কয়েকদিন আগেও নির্বাচন খুব একটা জমে উঠেনি।
টঙ্গী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের কাছে কথা হয় একজন প্রবাসীর সঙ্গে। তিনি নাম প্রকাশ না করে বলেন, এখন তো সবাই চুপ। কেউ মুখ খুলছে না। কথা বলছে না। ভয়ে কথা বলতে পারছে না। ভীতির পরিবেশ বিরাজ করছে। কেউ সঠিক কথা বললেই তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের তৎপর নেতাকর্মীদেরকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। গ্রেপ্তারের কথাও শোনা যাচ্ছে। এভাবে কী নির্বাচন হয়?
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার নির্বাচন পরিস্থিতি দেখতে গতকাল গাজীপুর পরিদর্শন করেন। তিনি মানবজমিনকে বলেন, মানুষ কোনো কথা বলছে না। মনে হয় শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। মানুষ নিরাপত্তাবাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়েও সংশয়ের মধ্যে আছে। বিরোধী শিবিরের প্রচার-প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না। তবে আমরা আশা করবো নির্বাচন কমিশন এখানে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোট আয়োজন করে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবে।
সূত্র : মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়