শিরোনাম
◈ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর ◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের  ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ সম্প্রসারণের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা  ◈ হিট স্ট্রোকে রাজধানীতে রিকশা চালকের মৃত্যু

প্রকাশিত : ২১ জুন, ২০১৮, ১০:২৪ দুপুর
আপডেট : ২১ জুন, ২০১৮, ১০:২৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না শেয়ারবাজার, অস্তিত্ব সংকটে ব্রোকারেজ হাউস

ডেস্ক রিপোর্ট: বছরের পর বছর ধরে সূচক নিম্নমুখী। ঘুরে দাঁড়াচ্ছেই না দেশের শেয়ারবাজার। ২০১০ সালে ভয়াবহ পতনের পর থেকে শেয়ারবাজারে মূলত মন্দা চলছেই। ২০১০-এর ডিসেম্বরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের দর (ডিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক ছিল ৮ হাজার ৯১৮ পয়েন্ট (ডিজেন)। তা কমে বর্তমানে ৫ হাজার ৩৪৪ পয়েন্টে (ডিএসইএক্স) নেমে এসেছে।

এ অবস্থায় শেয়ারবাজার থেকে খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। ধীরে ধীরে বাজার ছেড়ে গেছেন অনেক বিনিয়োগকারী। অনেকে বিনিয়োগ কমিয়ে এনেছেন। ফলে প্রতিদিনের লেনদেন হার ৩০০-৪০০ কোটি টাকার ওপর উঠছে না। এতে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ত্রাহিদশা। আয় কমে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, হাউসগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজার নিয়ে পলিসি বা নীতিগত কোনো পরিবর্তন না এলে এ সংকট ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। জানা গেছে, ব্রোকারেজ হাউসগুলোর আয়ের মূল অংশই হলো লেনদেনের ওপর প্রাপ্ত কমিশন। বর্তমানে লেনদেন অনেক কমে যাওয়ায় এ প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় ব্যাপকভাবে কমে গেছে। লোকবল ছাঁটাই ও খরচ কমিয়েও হাউস চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

২০১০ সালে যেখানে ডিএসইতে প্রতিদিন গড় লেনদেন ছিল প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা, সেখানে বর্তমানে গড় লেনদেন নেমে এসেছে সর্বোচ্চ ৪০০ কোটি টাকায়। লেনদেনের কমিশন থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়ে ব্রোকারেজ হাউস ও স্টক এক্সচেঞ্জ পরিচালনার জন্য অন্তত দৈনিক ১ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন স্টক এক্সচেঞ্জ কর্মকর্তারা। তা না হওয়ায় দিনে দিনে লোকসানের অঙ্কটা বড় হয়ে যাচ্ছে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর। স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন হওয়ায় বছরের ডিভিডেন্ড দিয়েই চলতে হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ডিভিডেন্ড দিয়ে কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ বহন করছে। আর স্টক এক্সচেঞ্জ চলছে ব্যাংকে রাখা এফডিআরের সুদের ওপর নির্ভর করে।

মার্জিন লোনের চাপেও ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক সংকটে রয়েছে। বর্তমানে শীর্ষ ৩২ মার্চেন্ট ব্যাংক গ্রাহকদের কাছ থেকে মার্জিন ঋণ বাবদ পাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এখন মার্জিন ঋণের বিপরীতে কেনা শেয়ারগুলো বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে। এমনিতেই এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মূলধন কম। তার ওপর বড় অঙ্কের অর্থ মার্জিন ঋণে আটকে থাকায় এ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওতে বিনিয়োগ করার সক্ষমতা অনেক কমে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর পোর্টফোলিও বিনিয়োগ কমে গেছে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে লেনদেন কমে যাওয়ায় তাদের ব্রোকারেজ চার্জ থেকে আয়ও কমে গেছে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চলতি ২০১৮ সালের শুরু থেকে দেখা গেছে, শেয়ারবাজারে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ৬০০ কোটি টাকার কিছু বেশি। এ সময় গড় লেনদেন ছিল ৪০০ কোটি টাকার ঘরে। জানুয়ারির শুরুতে যেখানে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা সর্বশেষ তা হয়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এ ছয় মাসে বাজার মূলধন কমেছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা।

জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান বলেন, অনেকদিন ধরেই বাজারে লেনদেন কম। এ লেনদেন দিয়ে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই বাজারে লেনদেন বাড়াতে হবে। অন্যথায় ব্রোকারেজ হাউসগুলো এভাবে লোকসান দিতে থাকলে পুঁজিবাজারের ওপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমানে স্টক ডিলাররা ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পান। এটি বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকায় উন্নীত করা দরকার। এতে তাদের বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়বে। ফলে বাজারে লেনদেনও বাড়বে।

জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ২০১০ সালে শেয়ারবাজারের মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে। তারপর শেয়ারবাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। বাজারে সাপোর্ট দিয়ে ভালো আইপিও নিয়ে আসা বা মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবহার করা যায়নি। বর্তমানে আমাদের টিকে থাকতে হলে প্রতিদিন হাজার কোটি টাকা লেনদেন হতে হবে। কিন্তু হচ্ছে ৩০০-৪০০ কোটি টাকা। এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে। আমরা নতুন কোনো ব্রোকারেজ শাখা খুলতে পারছি না।

তেমনি অনেক শাখা আমাদের বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুজিস্তা নূরই নাহরিন বলেন, কিছু পলিসি পরিবর্তন দরকার। বর্তমানে তলানিতে রয়েছে শেয়ারবাজার। ফলে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর অস্তিত্ব সংকট এখন মারাত্মক পর্যায়ে। এ পরিস্থিতির কীভাবে উন্নতি হবে তা নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত। এখানে শুধু যে আমাদের মতো হাউসগুলো জড়িত তা নয়, দেশের কয়েক লাখ বিনিয়োগকারীর ভাগ্য জড়িত।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এম হাফিজুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো মার্জিন ঋণের কারণে ব্যাপক সমস্যার মধ্যে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকভাবে চলতে পারছে না। এ প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড়াতে না পারলে বাজার দাঁড়াতে পারবে না। এ অবস্থায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কম সুদে ঋণ দিয়ে হলেও সহযোগিতা করতে পারে। সূত্র: বিডি প্রতিদিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়