চট্টগ্রামে শতাধিক ‘বড় ভাই’য়ের নেতৃত্বে বেপরোয়া সন্ত্রাসী গ্রুপ
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও আধিপত্য বিস্তারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের শতাধিক বড় ভাই। এই বড় ভাই মানে সকল অপকর্মের মাস্টার মাইন্ড। অক্সিজেন থেকে পাহাড়তলী, হালিশহর থেকে পতেঙ্গা, আগ্রাবাদ থেকে বাকলিয়া, চকবাজার থেকে চান্দগাঁও সর্বত্র বিভিন্ন ওয়ার্ডে তারা রয়েছে তত্পর। এদের অপকর্মে নগরবাসীর জীবন অতিষ্ঠ। ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে ব্যাহত। সাধারণ মানুষ আতংকিত। কথিত এই বড় ভাইরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলে উঠতি বয়সী কিশোর-তরুণদের নিয়ে গড়ে তুলেছে সন্ত্রাসী গ্রুপ।
এরকমই একটি বেপরোয়া গ্রুপের হাতে তুচ্ছ ঘটনায় গত রবিবার রাতে নগরীর পল্টন রোডে ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছে নিরীহ গাড়ি চালক অনিক (২৬)। অপরদিকে ক’মাস আগে নগরীর গণি বেকারি কেন্দ্রিক আরো একটি বড় ভাই গ্রুপের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে সামান্য কথা কাটাকাটির জের ধরে আইডিয়াল স্কুলের সামনে নৃশংসভাবে খুন হয় চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের একজন নিরীহ ছাত্র। তার অপরাধ ছিল সে এসব বেপরোয়া সন্ত্রাসীদের অপকর্মের প্রতিবাদ করেছিল।
নগরীর ভয়াবহ সব অপকর্মের হোতা কথিত বড় ভাইরা নানা সময় রাজনৈতিক দলের পরিচয় প্রদান করলেও এসব দল থেকে এদের কোনো স্বীকৃতি নেই। কখনো বা তারা বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠভাজন হিসাবেও পরিচয় প্রদান করে। কখনো বা এদের দেখা যায়, নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কাউন্সিলর কিংবা কোনো নেতার অনুষ্ঠান সমাবেশে।
এরা নগরীতে ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি বেচা-কেনা, ফ্ল্যাট কেনা-বেচা, সাধারণ ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি বড় বড় স্বনামধন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও বড় অংকের চাঁদা আদায় করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এরা কিশোর-তরুণদের দিয়ে যে সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে তুলেছে- এই গ্রুপগুলো প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় দলে দলে মোটরবাইকে দাপিয়ে বেড়ায়। কথায় কথায় নানা স্থানে তৈরি করে হাঙ্গামা হট্টগোল। নগরীতে মোটরবাইক গ্যাং নামে পরিচিত বড় ভাইদের অনুসারী সন্ত্রাসীদেরকে দিনের বিভিন্ন সময় এক সাথে বেপরোয়া গতিতে মোটরবাইকে নানা এলাকায় চলাচল করতে দেখা যায়। এদের পরনে দেখা যায়, থ্রি কোয়ার্টার ট্রাউজার, টি-শার্টসহ বিচিত্র পোশাক।
নগরীর অক্সিজেন, বাকলিয়া, কাট্টলী, পাঠানটুলি, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগী মানুষ ও ব্যবসায়ীরা জানান, বড় অংকের চাঁদা আদায় করতে সক্ষম হলে মোটরবাইক গ্রুপের কিশোর-তরুণ সন্ত্রাসীরা পেয়ে যায় লাখ টাকা পুরস্কার। আবার কেউ কেউ পায় নতুন মোটরবাইক, দামি স্মার্ট ফোন। এসব কিশোর-তরুণ সন্ত্রাসী ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণেরও সুযোগ পায় বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত রবিবার ঈদের পরদিন বিকালে নগরীর পল্টন রোড সংলগ্ন ব্যাটারিগলিতে নিহত অনিকের ছোট ভাই রনিকের সাথে মোটর সাইকেলের হর্ন বাজানো নিয়ে হাঙ্গামা বাঁধে ঐ এলাকার বড় ভাই নিয়ন্ত্রিত মোটরবাইক গ্যাং সদস্যদের। এর জের ধরে ২০/২৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে মোটরবাইক গ্যাংয়ের সদস্যরা রাতে পল্টন রোড এলাকায় রনিকের বড় ভাই অনিকের উপর হামলা চালায়। পুলিশ জানায়, বড় ভাই গ্যাংয়ের ‘কুখ্যাত’ সদস্য মহিউদ্দিন তুষারের এক সহযোগী ছুরিকাঘাতে অনিককে হত্যা করে। এর আগে তুষার গুলি ছুঁড়ে আতংক সৃষ্টি করে। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, অনিক হত্যাকারী মোটরবাইক গ্যাংটি নগরীতে ইয়াবা পাচারের সাথেও জড়িত।
মহানগরী পুলিশের চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা বলেন, অনিক হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত যে ১২ জনের নামে মামলা হয়েছে তারা যেকোনো সময় ধরা পড়বে। হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা গা ঢাকা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মনির আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের পরিচয়ে এক শ্রেণীর বড় ভাই পরিবহন সেক্টরেও চাঁদাবাজির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এবার রমজান মাসের আগে কথিত বড় ভাই পরিচালিত চাঁদাবাজরা কদমতলীতে প্রতিটি ট্রাকে ৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে স্লিপ বিলি করে। এখানে ৩ হাজার ট্রাক থেকে দৈনিক দেড় লক্ষ টাকা তোলার টার্গেট করে। ‘আমি সদরঘাট থানা পুলিশের সহায়তা নিয়ে অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে এসব চাঁদাবাজকে কদমতলী থেকে বিতাড়িত করি।’ সূত্র: ইত্তেফাক
আপনার মতামত লিখুন :