শিরোনাম
◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন

প্রকাশিত : ২০ জুন, ২০১৮, ০৩:৩০ রাত
আপডেট : ২০ জুন, ২০১৮, ০৩:৩০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কে আপন, মা না বাবা?

 মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ 

১। ক্যালেন্ডারের পাতায় কড়া নেড়ে চলে গেল বিশ্ব বাবা দিবস ।আমাদের দেশে দিবস সংস্কৃতির এখন দারুণ চল । বাবা দিবস, মা দিবস, ভ্যালেন্টাইন দিবস এমন কি বিশ্ব ডিম দিবস পালিত হ”েছ সাড়ম্বরে । বাবা দিবস পালন করে কি বাবার প্রতি সত্যি ভালবাসা প্রকাশ করা সম্ভব ? এই সময়কালে শুধু অস্তিত্বের প্রয়োজনেই নয়, অর্থখ্যাতি-প্রতিপত্তি-ডিগ্রী-পদ-পদবী ক্ষমতা অর্জনের মূষিক দৌড়ে প্রায় পুরো সময়টা আমরা ব্যস্ত থাকছি ,অস্থিরতায় ভুগছি । আমাদের ফ্ল্যাট বাসার আয়তন যত বড় হচ্ছে, আসবাবপত্র যত সুরম্য হচ্ছে তেমনই আমাদের বাবা-মাদের প্রতি সময় দেয়ার কাল ক্ষীণ হতে হতে তাঁদের অবস্থান হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে । তাই কেউ বা কেউ বাবা দিবসে তার বাবার প্রতি ভালবাসা প্রকাশে ফুল, চকোলেট, কেক অথবা প্রয়োজনীয় অর্থ তুলে দেয় তবে সেটিতে দোষ নেই । অন¯ে’র পানে চলে যাওয়া বাবাকে নিয়ে সৌখিন কোন ফেসবুকারের দুইকলম লেখবার সময় যদি দুফোটা জল গড়িয়েই পরে তবে সেই জল লুকাবার ছল নাই বা করা হল !

২। ‘বাবা না মা আপন?’ এই প্রশ্নটি শর্তমধুর নয়,,সুর চিরও নয়, বরং কিঞ্চিত শালীনতা বিবর্জিত ।কিন্তু, ছোট বেলায় আমাকে মামা-চাচা নিকটজনেরা দুষ্ট দুষ্ট কণ্ঠে জিজ্ঞেস করতো, ’কে তোমাকে বেশি ভালবাসে ,বাবা না মা?’ শৈশবের মধ্যে লুকানো মানুষটা দিব্যি বুঝতে পারতো এটি দুষ্টুমি । ভালবাসায় আমার অবস্থানটি যে নিরপেক্ষ সেটি বোঝাবার জন্য আমি বলতাম ‘দুজনকেই সমান ভালবাসি’। প্রিয় পাঠক, আমি জানি আপনিও ছোট বেলায় এই দুষ্টমিষ্ট প্রশ্ন আপনিও মুখোমুখি হয়েছিলেন।

৩। প্রকৃতি মা এবং বাবার শরীরের এনাটমীকে যোজন যোজন পার্থক্যে তৈরী করেছেন। সন্তান ধারণ, জরায়ুতে ‘দশ মাস দশ দিন’ ধরে সেটিকে বয়ে বেড়ানো ,প্রসবের মত কষ্টকর বিষয় একমাত্র মায়ের এনাটমীতেই সম্ভব । স্তন্যপানের মত মহৎ বিষয়টি প্রকৃতি শুধু মাকেই সৌভাগ্য দান করেছে। এই ‘চযুংরড়ষড়মরপধষ চযবহড়সবহড়হ’ শিশুকে সংগত কারণেই মায়ের অনেক কাছে যেমন নিয়ে আসে তেমনই মাকে সন্তানের নিবিড় কাছে নিয়ে যায়।

৪। প্রাচ্যের প্রায় সবদেশের মহিলারা শিক্ষিত, উপার্জনক্ষম । স্বামী -স্ত্রী দুজনেকেই সারাদিন অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় । ক্লান্ত ও বিরক্ত শরীরে যখন তারা বাসায় ফেরেন তখন সন্তানদের আদরে আদরে ভরিয়ে দেয়া সবসময় সম্ভব নাও হতে পারে । এই প্রজন্মে বাংলাদেশের নারীদের কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটেছে । রাজনৈতিক অঙ্গণ, জনপ্রশাসন, সামরিক বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, বিচার বিভাগ এমন কি ব্যবসায়ে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসা খাত, শিক্ষা খাতে নারীর অগ্রগণ্যতা অনেক আগে থেকেই। গার্মেন্টস খাতে দেশের মোট জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী কর্মীর অংশগ্রহণও যুগান্তকারী ঘটনা ।কিন্তু, তারপরেও রসুইঘরের জোয়াল যেন একমাত্র নারীদের কাঁধেই চাপিয়ে দেয়া হয়েছে । এইসব নারীরা স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রের বিশাল দায়ভার যেমন বহন করেন তেমনই প্রকৃতি প্রদত্ত নিয়মে সন্তান পেটে ধারণ করেন ।

৫। প্রায় সব ধর্মগ্রন্থে’, শিশু শিক্ষার পাঠে পিতামাতার প্রতি ভালবাসা ও সন্তানের কথা বলা আছে । তবে প্রায় সর্বক্ষেত্রেই মা-কে উঁচু স্থানে বসানো হয়েছে । শিশুর জন্য যেমন মায়ের কোল সবচেয়ে বড় আশ্রয় তেমনি পিতাও তেমনই ‘হিরোইক আইকন’। শিশুর হাতেখড়ি সাধারণত মায়ের কাছেই যেমন হয়, তেমনই উচ্চতর শিক্ষার জগত বাবাই উন্মুক্ত করেন । সন্তান পিতার পদবী ধারণ করে অচ্ছেদ্য নামের কারণে যেন কেবলমাত্র বাবারই আজীবন সন্তান থেকে যান । বিজ্ঞান ভিন্নকথা বললেও প্রচলিত অর্থে সন্তানের রক্তে বাবার রক্ত প্রবহমান ।

৬। স্যাটেলাইট যুগের অভিশাপ হিসেবে প্রায় ঘরেই দাম্পত্য কলহের কথা শোনা যায় । শিশুর সামনেই বাবা-মা কলহ, উচ্চস্বরে অশ্লীল কথাবার্তা, শারীরিক নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে । ভেঙে গেছে অসংখ্য জতুগৃহ। এইসব ঘটনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয় সন্তানেরা । কোনপক্ষ ছেড়ে কোনপক্ষের হাত ধরবে সেটি নিয়ে ভয়ংকর দ্বিধায় পরে শিশুমানস। এসব নিয়ে বিশ্বের ধ্রুপদ ছায়াছবি ক্রামার ভার্সেস ক্রামার, মাসুম, বাংলাদেশের দীপু নম্বর টুসহ অসংখ্য ছায়াছবি নির্মিত হয়েছে। বৃদ্ধ বিধবার ভয়াবহ একাকীত্ব নিয়ে অপর্ণা সেনের ৩৬ চৌরঙ্গী লেন চলচ্চিত্রটি দেখবার জন্য লাখো লাখো দর্শক মুখ থুবরে পরেছে।

সম্প্রতি, বহুবিবাহ শুধু পুরুষই নয়, মেয়েদের ভিতরে ছড়িয়েছে - এমন ঘটনাও পত্রিকাতে দেখা গেছে । পরকীয়া প্রেমে উন্মত্ত কিছু নারী শুধু স্বামীকেই নয়, শিশুপুত্রকে খুন করেছে - এমন ঘটনাও শোনা গেছে । বিশ্ববরেণ্য নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপীয়র সম্ভবত দূরদৃষ্টি দিয়ে ৪০০ বছর পর বাংলাদেশে ঘটতে যাওয়া স্মরণকালের ঘৃণ্য ঘটনা বুঝতে পেরেছিলেন। রচনা করেন অমর নাটক ‘ম্যাকবেথ’। এই নাটকে ম্যাকবেথের পিতৃব্যর সাথে তার মা অসম সম্পর্ক গড়ে তোলেন। খুন করা হয় ম্যাকবেথের বাবাকে । স্বামীহন্তাকে বিয়ে করে ম্যাকবেথের মা। পিতা হত্যার প্রতিশোধে উন্মত্ত হয়ে ম্যাকবেথ একের পর এক ভয়াবহসব ঘটনা ঘটায় ।

৭। পেশা এবং নেশার কারণে আমার অন্তত ২০টি জনপদ দেখবার সৌভাগ্য হয়েছে। খুব কাছের থেকে তাঁদের ‘পারিবারিক বন্ধন’ দেখবার, বুঝবার সৌভাগ্য হয়েছে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানুষের মনোজগতে প্রবলভাবে একাকীত্ব আর অবিশ্বাসের বিষ ঢুকে যায় । দেখা যায় জিপসি কালচার, হিপ্পি কালচার, পাঙ্ক কালচার ইত্যাদি। ‘প্রেমহীন ভালবাসাবাসি’ অনেক সুখের ঘর যেমন ভাঙ্গে তেমনই লিভ টুগেদারও বাড়তে থাকে । ‘অচিহ্নিত বাবার’ লাখো লাখো সন্তান শুধু ক্ষয়িষ্ণু মায়েরই না, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য বিশাল দায় হয়ে দাঁড়ায়। এখন প্রাচ্যের অনেক দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে । পারিবারিক বন্ধনের নিগড়ে সবাই ফিরে আসছে। বাবা এবং মায়ের যুগপৎ ভালবাসায় ঋদ্ধ হয়ে বড় মমতা আর নির্ভরতায় বড় হচ্ছে উন্নত দেশের শিশুরা ।

৮।‘ভায়ের-মায়ের এত স্নেহ, কোথায় গেলে পাবে কেহ’-এর দেশ বাংলাদেশ । বাবা -মা উভয়ের ভালবাসা অতলান্ত। তার কোন সীমা -পরিসীমা বা তলদেশ নেই । তাই বাবা-মা’র কার ভাগে ভালবাসা কতটুকু পড়ল এই বিভাজন অসম্ভব, অপ্রয়োজনীয় । বাবার যেমন বিকল্প নেই, মায়েরও তেমন বিকল্প নেই। শিশুর মানবিক গুনাবলীসহ আগামীদিনের আদর্শ নাগরিক হয়ে গড়ে উঠবার জন্য উভয়ের ভালবাসা সমভাবে প্রয়োজন ।

লেখক: উপ-অধিনায়ক, আর্মড ফোর্সেস ফুড এন্ড ড্রাগস ল্যাবরেটরী/সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়