শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২০ জুন, ২০১৮, ০৩:১২ রাত
আপডেট : ২০ জুন, ২০১৮, ০৩:১২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বাজেটে সংসার খরচ বাড়বে

মোহাম্মদ আবু নোমান : বড় বাজেট যেন বড় ধরনের প্রতারণা ও বরাবরের মতো লোক দেখানো না হয়। গত বছর বাজেটের ২১ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়নি। এজন্য বাজেট হতে হবে স্বচ্ছ, বস্তুনিষ্ঠ ও বাস্তবায়নযোগ্য। তবে এটা নিশ্চিত, নির্বাচনী বছর বলে একটা সুষ্ঠু জনবান্ধব বাজেট পেশ করার চেয়ে সরকার নিজের গাঁ বাচানোর চেষ্টায় বেশি মনোযোগ দিয়েছে। বাজেটে করের চাপ না বাড়লেও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসসহ সংসার খরচ বাড়বে। সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও শিক্ষা খাতে, এটি ইতিবাচক। দেশি উৎপাদন ও প্রযুক্তিকে বিশেষ ছাড় দেওয়ার প্রস্তাবনাও রয়েছে।

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে এক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীরা এখন যেসব সুবিধা ভোগ করছেন, তারা জীবনে কখনো এমন সুযোগ-সুবিধা পাননি। তাদের বেতন ৪০ হাজার টাকা থেকে এক লাফে ৮২ হাজার টাকা হয়েছে। তাদের পেনশনে বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়েছে। আমার মনে হয় তাদের আর দাবি নেই। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী বলেন, কোন মুখে আপনারা বলেন, এই দেশে গরিব মারার বাজেট হচ্ছে, ধনীকে তেল দেওয়ার বাজেট হচ্ছে? বোঝাতে চাচ্ছেন দেশের উন্নয়ন কিছুই হয়নি।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইউ আর নট লুকিং ইনটু দ্য বাজেট। ইউ আর নট অ্যাট অল ক্রিটিসাইজিং দ্যা বাজেট। ইউ হ্যাভ সাম সেট কোশ্চেনস, ইউ হ্যাভ কাম উইথ দ্যাট টু প্রেজেন্ট হিয়ার। আপনারা বাজেট দেখেননি। আপনারা কোনোভাবেই এ বাজেটের সমালোচনা করতে আসেননি এখানে। আপনাদের কিছু গৎবাঁধা প্রশ্ন আছে। সেই প্রশ্ন করতেই এখানে এসেছেন।

দারিদ্র্যের হারের বিষয়ে অপর এক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশ। আপনাদের যখন জন্ম হয়েছে কিংবা জন্মের আগে, দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৭০ শতাংশ। বোঝেন, কোথায় ছিল বাংলাদেশ এবং এখন কোথায় এসেছে? এই কিছুদিন আগে দেশে ৩০ শতাংশ মানুষ ছিল গরিব। ৭ বছর আগে সাড়ে ৩০ শতাংশ দরিদ্র ছিল, আজ ২২ দশমিক ৪ শতাংশ। যারা চূড়ান্ত গরিব, তাদের সংখ্যা ছিল ১৮ শতাংশ।’

অর্থমন্ত্রীর কথা দিয়েই বলা যায়, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ৪০ হাজার থেকে এক লাফে ৮২ হাজার টাকা, বৈশাখী ভাতা অন্যান্য সুবিধা লিখে লেখার কলেরব বড় করতে চাই না। শেষে বলেছেন, এর আগে কখনই এমন সুযোগ পায়নি। আমার মনে হয় তাদের আর দাবি নেই ইত্যাদি। প্রস্তাবিত বাজেট আবার সহজ শর্তে গৃহ ঋণ সুবিধা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তার মানে ষোল আনায় ভরপুর সরকারি চাকরিজীবীরা। সরকারি চাকরিজিবীদের বেতন বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে জিনিস পত্র, বাড়ি ভাড়া, গাড়ি ভাড়া, বিদ্যুৎ, পানি গ্যাস, স্কুলের বেতন সবই বেড়েছে, সে কথা কিন্তু অর্থমন্ত্রী বলেননি।

অথচ সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে এসেছে, ‘কর্মজীবী মানুষের আয় কমছে’। সার্বিকভাবে এতে সমাজে আয় বৈষম্য ও অসাম্য-বিভেদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণেই সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য এখন সর্বোচ্চ। এরপরও যদি বলা হয়, মানুষ এখন অনেক সুখী, জিডিপি বেড়েছে, মাথা পিছু আয় বাড়ছে, তাহলে এসব তামাশাই মনে হয় না? ২০১৩ সালে একজন কর্মজীবী প্রতি মাসে গড়ে ১৪ হাজার ১৫২ টাকা মজুরি পেতেন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এসে তা কমে ১৩ হাজার ২৫৮ টাকা হয়েছে। প্রকৃত আয় কমেছে আড়াই শতাংশের উপরে, অথচ ব্যয় বেড়েছ দুই/তিনগুণ। অন্যদিকে পুরুষদের চেয়ে নারী কর্মজীবীদের আয় আরো বেশি কমেছে। সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে।

অথচ দুঃখজনক বিষয়, বাজেটে বস্তিবাসী ও ভাসমান মানুষের জন্য গৃহনির্মাণের কোনো উদ্যোগের কথা নেই। বিরাটসংখ্যক ছিন্নমূল মানুষের চিন্তা বাদ দিয়ে তেলা মাথায় তেল দিতে গৃহহীন নিম্নবৃত্ত ও শ্রমিকের ঘামের মূল্য না দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের ওপর সহজ শর্তে গৃহ ঋণ সুবিধা দেয়ার নামে জামাই আদরে আবারও সুদৃষ্টি দেওয়া হলো। তা ছাড়া ইতোপূর্বে শতভাগ পে-স্কেল, বৈশাখী ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সরকারি চাকরিকে লোভনীয় করে তোলা হয়েছে। সব সুবিধাই সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য। অথচ সরকারের দিক থেকে বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য কোনো উদ্যোগ নেই। নতুন এমপিও ভুক্তিরও ঘোষণা নেই। উল্টো মধ্যবিত্তের মাথায় করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। অবস্থা এমন যে, নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা দেশ থেকে বের হয়ে যাক। কারণ উচ্চবিত্তের দেশে সরকারি চাকুরিজীবী ছাড়া মধ্যবিত্তের থাকার কোন অধিকার নেই।

প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যক্ষ কর আরোপ করা হয়নি ঠিকই। কিন্তু পরোক্ষ করের ওপর ভর করেই বিশাল অঙ্কের বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এতে যাদের আয় কম নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে তাদের ওপর করের চাপ বাড়বে। প্রস্তাবিত এ বাজেটের পরোক্ষ কর (ভ্যাট) আদায়ের লক্ষ্য মাত্রাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের মধ্যে ভ্যাট থেকেই আদায় হবে ১ লাখ ১০ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের (সংশোধিত) বাজেটের চেয়ে ২৬ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা বেশি। এ ভ্যাট আদায় হবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে।

ওষুধের কাঁচামাল, পোল্ট্রি সামগ্রী, দেশি কাপড়সহ অনেক দেশি জিনিসের দাম কমবে বলে বলা হয়েছে। তবে সব কিছুই নির্ভর করে বাস্তবায়নের ওপর। তা ছাড়া সংবাদপত্র শিল্পে ঝুঁকিভাতা নেই, ওয়েজ বোর্ড এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। পোল্ট্রি খাদ্যের দাম কমানো হলো, এখন সর্বসাধারণ দেখার অপেক্ষায়Ñ মুরগি, ডিম মাছ, মাংসের দাম ছাড়াও গুঁড়া দুধ, পাউরুটির দাম কতটা কমে।

বাংলাদেশের বাজেটের বড় দুর্বলতা হলো, তার বাস্তবায়নে ধীরগতি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতা, দক্ষ জনশক্তির অভাব, অর্থ ছাড়ের দীর্ঘসূত্রতাসহ নানা জটিলতা। এছাড়াও রাজনৈতিক পরিবেশ বিনিয়োগবান্ধব না হলে বাজেট চ্যালেঞ্জিং হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক/সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়