শিরোনাম
◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ২০ জুন, ২০১৮, ১২:৩৫ দুপুর
আপডেট : ২০ জুন, ২০১৮, ১২:৩৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হুমকি নয় কৌশলী-রাজনীতির সময় এখন

মাসুদা ভাট্টি: ঈদ উদযাপন শেষ হলেই এক ধরনের ভয় কাজ করে। বিশেষ করে গত প্রায় দশ বছর যাবত এই হুমকি আমরা শুনে আসছি যে, ঈদের পর সর্বাত্মক আন্দোলন। এবং এদেশে সর্বাত্মক আন্দোলন অর্থই যে দেশের ক্ষতি, নাগরিকের নিরাপত্তাহীনতা তা আর নতুন করে বলার কিছু ঘটনা নয়। আমরা রাজনীতিবিদদের গাল দিয়ে থাকি, বলে থাকি যে, তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এবং ক্ষমতায় থাকার জন্য এমন কিছু নেই যে করতে পারেন না। নিজের সন্তানকে খুন করার ইতিহাসও আমরা জানি। কিন্তু রাজনীতি দেশে দেশে সে জায়গা থেকে সরে এসেছে অনেকখানিই। বাংলাদেশেও রাজনীতি আর নব্বইয়ের দশকের কিংবা ২০০১ সাল-পরবর্তী অবস্থানে নেই। বাংলাদেশের মানুষই সে জায়গা থেকে রাজনীতিকে সরিয়ে এনেছে। প্রশ্ন হলো, এই বিষয়টি কি দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বুঝতে পারছে?

রাজনীতি এখন আর রাজপথে নেই, কারণ রাজপথে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে কোনো রাজনৈতিক দল আর ফায়দা লুটতে পারবে না। জনগণই সেটা হতে দেবে না। হতে পারে সেই সব দেশে যেখানে ক্ষমতাসীন সরকার ব্যর্থ হয়েছে জনগণকে তার কাঙ্খিত সেবা দিতে কিংবা কোনো বিশ্ব-মোড়লের কোপানলে পড়ে কোনো সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা হয়েছেন এরকম দেশে রাজপথ দখল করে সরকার পতন ঘটানোর ঘটনা আজও ঘটছে কিন্তু তা বিগত দশকগুলোর তুলনায় একেবারেই অনুল্লেখযোগ্য। এর মূল কারণ হলো, বৈশ্বিক অর্থনীতির বিস্তার, তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার এবং জনগণকে আন্দোলনে নিরুৎসাহিত করার ধনতান্ত্রিক কৌশল। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

তাহলে ঈদের পরে ভয়টা কেন হয়? ভয়টা এ কারণেই হয় যে, এদেশে এখনও গণতন্ত্রকে সুসংহত করা সম্ভব হয়নি। না হওয়ার কারণ বহুবিধ, তবে সবচেয়ে বড় কারণ হলো, রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে বিশ্বাসের ভিত্তি নেই এবং এদেশে একটি সুসংগঠিত অ-রাজনৈতিক শক্তিও রাজনৈতিক দলগুলোর এই অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে  প্রায়শঃই দেশের স্বার্থবিরোধী কাজ করে থাকে। ফলে দেশের ভেতর নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে কখনও রাজনৈতিক মদদ, কখনও অ-রাজনৈতিক শক্তির হাত আর অনেক ক্ষেত্রেই ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির সন্ত্রাসী তৎপরতা বাংলাদেশকে একাধিকবার আক্রান্ত করেছে এবং ভবিষ্যতেও করতে পারে বলে সকলেই একবাক্যে বিশ্বাস করেন। প্রশ্ন হলো, ঈদের পরে যে সর্বাত্মক আন্দোলনের হুমকি আমরা পাচ্ছি তা কি এই আশঙ্কা থেকে আমাদের মুক্ত করতে পারে যে কোনো ভাবেই এই আন্দোলন জনগণের জানমালের কোনো ক্ষতির কারণ হবে না? আমার মনে হয় না যে, যারা এই হুমকি দিচ্ছেন তারাও কোনো ভাবে এই নিশ্চয়তা জনগণকে দিতে পারবেন না।

বাংলাদেশ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগুচ্ছিলো দু’-দু’টো সামরিক শাসনের যাঁতাকল থেকে বেরুনোর পরে। আধা-সামরিক রাজনৈতিক দল ও উগ্র ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের  জোট বাংলাদেশকে একটি অন্ধকার খাঁদের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো। জনগণ সেটা বুঝতে পেরে সর্বাত্মক আন্দোলনেই সেই সরকারের ধারাবাহিকতা বিনষ্ট করে। মাঝখানে এক উদ্ভট সরকার দেশের শাসনভার নেয়, কথিত অ-রাজনৈতিক শক্তিটির কাঁধে ভর দিয়ে। প্রমাণ হয়ে যায় যে, যারা এতোদিন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তারা আসলে গণতন্ত্রের আলখাল্লায় সবচেয়ে বড় অ-গণতান্ত্রিক গোষ্ঠী। তাদের এই আচরণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে নিঃশ্চিহ্ন করতে গিয়ে তারা যে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সুযোগ করে দিয়েছেন আরো বেশি নগ্ন ও কৌশলী হতে সেটা আমরা কেউ বুঝতে পারছি না  বা বোঝার চেষ্টাও করছি না।

রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে কৌশল জরুরী। এদেশে এখন রাজনৈতিক কৌশলের খেলা চলবে। রাজপথ এখন মুক্ত থাকবে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য। কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠীর শক্তি প্রদর্শনের ক্ষেত্র হিসেবে রাজপথ আর ব্যবহৃত হবে না এই বারতা যদি দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এখনও পেয়ে না থাকে তাহলে তারা নিজেদের কবর নিজেরাই খুঁড়বে। কোনো বৃহৎ দলের রাজনৈতিক মৃত্যু মানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, যেকথা আগেই বলেছি যে, ১/১১ না হলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো আত্মরক্ষায় এতোটা কূট-কৌশলী হতো না। আওয়ামী লীগের কৌশলী-রাজনীতির জবাবে বিএনপি’কে কৌশলীই হতে হবে। একপক্ষ রাজনৈতিক কৌশলের খেলা খেলবে আরেক পক্ষ অ-রাজনৈতিক, সন্ত্রাসী আর রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের খেলা খেলবে, সেরকম রাজনীতির দিন বোধ করি এদেশে আর নেই। বাংলাদেশ সে উচ্চতা পার হয়ে এসেছে, যেখানে ২১শে আগস্ট কিংবা ১৫ আগস্টও ঘটানো যায় কোনো রকম প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ছাড়াই।

লেখক: সিনিয়র নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়