মানিক দত্ত : পৃথিবীতে যে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা বলে দুটো দেশ আছে শৈশবে আমার জানার কথা নয়, জেনেছি চিনেছি ফুটবলের সৌজন্যে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে আলাদা কোন দেশ নয় সেটা জেনেছি অনেক পরে, চিনেছি আগেই ক্রিকেটের কল্যাণে।
আমার কাছে ফুটবলের দেশ নয় রাশিয়া, ক্রিকেটের দেশ নয়, অ্যাথলেটিক্সের দেশ নয়। যে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে পুরো পৃথিবী কাঁপিয়ে দিয়েছিল ওই বিপ্লবের দেশ হিসেবেও নয় প্রথম পরিচয়। রাশিয়া আমার কাছে ছিল রূপকথার দেশ। ছাত্রজীবনে ছিলাম একজন অংকন শিল্পী। মোটামুটি ছবি আঁকতে পারতাম।
শেরপুর মহকুমার চ্যাম্পিয়ন হয়ে জামালপুর জেলাতে গিয়েছি জেলা পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেছি, জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিভাগীয় পর্যায়েও গিয়েছি। অনেক পুরস্কারও পেয়েছি যারা অধিকাংশই ছিল রূপকথার বই। সেই রূপকথার বইয়ের মাধ্যমেই রাশিয়ার সঙ্গে প্রথম পরিচয়।
একটু বড় হওয়ার পর ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন’ নামে মাসিক ম্যাগাজিন আসতো বাসায় বড় দাদার (হিমাংশু কুমার দত্ত নীহার স্যার) কাছে। সেই গুলোও পড়তাম। ছবি আঁকার কথা যখন মনে হলো বলি সেই কথা।
এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছি এরশাদের সামরিক আইনের প্রথম দিকে। শেরপুর কলেজে ভর্তি হলাম। ছাত্র সংসদ নেই। তখন আমি ছাত্র রাজনীতি করি। করি বাকশালের জাতীয় ছাত্রলীগ। শেরপুর কলেজে পড়ার সময় মিছিল মিটিং সব বন্ধ। আমাদের সভাপতি আবুল হোসেন ভাই এর নেতৃত্বে কলেজ থেকে বের করা হলো এরশাদ বিরোধী মিছিল। মিছিলটি নিউ মার্কেট মোড়ের কাছাকাছি আসার সাথে সাথেই পুলিশের হানা।
আমরা ডাঃ শাহাদত সাহেবের চেম্বারের ভিতর দিয়ে দেয়াল টপকে এসআর মসজিদে প্রবেশ করলাম। কিন্তু আবুল ভাই গ্রেফতার হলেন। আমাদের সাধারণ সম্পাদক নাজিম, ছাত্রনেতা বেলাল, শুকুর এদেরকে নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম শেরপুর সরকারি কলেজে প্রবেশ করেই যে হাফ বিল্ডিংটি আছে ওর দেয়ালজুড়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকবো।
যেই সিদ্ধান্ত সেই কাজ। যেহেতু আমি আঁকতে পারি আমিই বঙ্গবন্ধুর হাত উচু করে আঙ্গুল উঠানো ছবিটি আঁকলাম। কলেজসহ সাড়া পড়ে গেলো এই কঠিন সময়ের মধ্যে এ কাজ কে করলো? পুলিশের বিভিন্ন শাখা খোঁজ নিতে লাগলো কে একেছে এই ছবি। তখন শেরপুরে রতন কুমার সাহা (রতনদা) আর আমি ছাড়া তেমন কেউ ছবি আঁকে না। পোস্টার ব্যানার দেয়াল লিখন (চিকামারা) আমরাই করতাম। বিশেষ করে আমাকেই বেশী করতে হতো রাজনীতিতে জড়িত থাকার কারণে। অ্যাডভোকেট একেএম মোছাদ্দেক ফেরদৌসী ভাই তখন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, বন্ধু অ্যাডভোকেট সুব্রত কুমার দে ভানু ছাত্রলীগ নেতা তাদের অনুরোধে ছাত্রলীগের পোস্টার ব্যানার আমাকেই লিখে দিতে হতো। আবুল ভাই যখন মুক্তি পেলো তখন আমি ঢাকায় পড়াশুনা করি। জগন্নাথ কলেজে ও ধানমন্ডি ল’কলেজে।
ঢাকায় জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা নুরল ফজল বুলবুল ভাই, জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু ভাই এবং ওয়াহেদুজ্জামান চাঁন ভাইদের সাথে ঘুরি। বিশেষ করে ওয়াহেদুজ্জামান চাঁন ভাই এর সাথে বেশী। তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। পুরান ঢাকায় অবস্থিত পুরাতন একটি বিল্ডিং এর দু’তলায় বাকশালের অফিস। সেই অফিসে মাঝে মাঝে যেতাম। আবুল ভাই আমাকে খবর পাঠালেন শেরপুর আসতে, পৌর টাউন হলের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু এবং এরশাদ মুখ মন্ডল দিয়ে জিহ্বা বের করা রক্ত চক্ষু একটি ড্রাগন আকতে হবে। তখন টাউন হলের ছিল রাস্তার পাশটুকু সম্পূর্ণ উচু দেয়াল। শেরপুর এসে একদিন সারারাতে ছবি দুটি আঁকলাম। নীচে লিখলাম ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তিপাক’। কাজ শেষ করে ভোরে চকবাজারস্থ শহীদ মিনারের টিউবওয়েল এ হাত মুখ ধুয়ে যার যার বাড়ীতে চলে গেলাম, পুলিশ পড়ে গেল চাপে।
সারা রাতে এ কাজটি করা হলো অথচ কেউ টের পেলো না, কে করলো এই কাজ। ধরো তাদের। সকালে ঘুম থেকে উঠেই খবর পেলাম আবুল ভাই গ্রেফতার। নাজিম, বেলাল, শুকুরসহ আমাদের সকল নেতা-কর্মী গা ঢাকা দিয়েছে। পুলিশের একজন এসআই আমাকে লোক মারফত খবর পাঠালেন পুলিশ আমাকে খুঁজছে। যত দ্রুত পারি যেন সরে পরি। তখন এখনকার মত শেরপুর টু ঢাকা এত গাড়ী চলে না। মহানগর নামে একটি দুটি বাস চলে তাও আবার টাঙ্গাইল হয়ে। খুব ভোরে জামালপুর হয়ে ট্রেনে চলে গেলাম ঢাকায়। খবর পেলাম আমাদের নেতা-কর্মী সব মাঠে নেমেছে। তখন জাতীয় ছাত্রলীগ শেরপুরে খুব শক্তিশালী। যে কোন রাজনৈতিক দলকে মোকাবেলা করার মত শক্তি ছিল। শেরপুর ছাত্রদল মিছিল করার সময় কে যেন টাউন হলে অঙ্কিত বঙ্গবন্ধুর ছবির উপর রং ছিটিয়ে দেয়। জাতীয় ছাত্রলীগের সকল নেতা-কর্মী মিছিলবের করলো। ছাত্রদলের সাথে হলো মারামারি। খবর পেলাম বন্ধু গৌতম বসাকের মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালে। শেরপুর আসলাম। তখন অনেকেই প্রস্তাব দিতে লাগলেন শেরপুর শহরের সকল দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকতে।
ভালো ছবি আঁকতে পারতাম বলে বন্ধু-বান্ধবসহ অনেকেরই ব্যবহারিক খাতা আকতে হয়েছে আমাকে। আমার একমাত্র ছেলে মুবাশ্বির রাহিব যৌথ এবার এসএসসি পরীক্ষা দিবে। আমার স্ত্রী কলেজ শিক্ষিকা আজিজা আক্তার আমাকে বলছে যৌথ কয়েক দিন যাবৎ তোমাকে বলতে চাচ্ছে ওর ব্যবহারিক খাতাটা এঁকে দিতে। জীবনে অনেক খাতা এঁকেছি অথচ আমার ছেলেকে বলতে হলো ‘বাবা অনেকদিন হয় আঁকি না, এখন কি সুন্দর হবে।
এখন আসি রাশিয়া ও ফুটবলের কথায়। পুরস্কার পাওয়া সেই বই থেকে জেনেছি কি এক অপরূপ নতুন রাজ্য, কেমন অপূর্ব সব ছবি আঁকা। সেই বইয়ের মাধ্যমেই রাশিয়ার সঙ্গে প্রথম পরিচয়। আর সেই রাশিয়াতে যাচ্ছি বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখতে। আমি ব্রাজিলের সমর্থক হিসেবে ব্রাজিলের খেলা তো অবশ্যই দেখবো। বিশ্বকাপ। অনেক খেলারই বিশ্বকাপ হয়। ক্রিকেট বিশ্বকাপতো বাংলাদেশেও অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেখিছি অনেক খেলা। ক্রিকেট বিশ্বকাপ বাংলাদেশও খেলে।
ফলাফল কিন্তু খারাপ না। কিন্তু ক্রিকেট খেলে কয়টি দেশ। বড়জোর ২০টি দেশ। ফুটবলের ব্যাপারটা দেখুন খেলাটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা’র সদস্য সংখ্যা জাতিসংঘের সদস্য সংখ্যার চেয়েও বেশী। দু’শ এরও বেশী। এর মধ্যে শতভাগ না হলেও আশিভাগ দেশের মানুষ ফুটবল খেলাকে ভালোবাসে। প্রাণের খেলা মনে করে। দেখুন ফিফার র্যাংকিং এ বাংলাদেশ ১৯৭ নম্বরে। তার পরও ফুটবল আমাদের প্রাণের খেলা। বাংলাদেশে ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন দেশের ফুবটলকে এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হলেও এখনো বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের খেলা ফুটবল। আমি শেরপুর জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে বলছি ফুটবলকে জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে আলাদা করা কোনভাবেই সঠিক হয়নি। আর যখন আলাদা করেছেন তবে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন (ডিএফএ) গুলোকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়না কেন ? মাঝে মাঝেই খবরের কাগজ বা টিভির খবরে বাফুবে প্রকাশ করে ডিএফএ গুলোতে ৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে, হচ্ছে ইত্যাদি। কিন্তু তা আর দেয়া হয় না। সবাই তো আর পরের খবর রাখে না। দিল কি দিল না। কিছু দিন আগেও সরকার কর্তৃক অনুদানের টাকা যা প্রতিটি ডিএফএর ভাগে পড়ে তিন লক্ষ টাকার উপরে কিন্তু দেয়া হয়েছে এক লক্ষ টাকা করে। ডিএফএ গঠিত হওয়ার পর অর্থাৎ বাফুফে আলাদা হওয়ার পর এত বছরে সর্বমোট দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছে। ডিএফএগুলোর আগ্রহের কমতি নেই। অর্থের অভাবে প্রতিবছর লীগ অনুষ্ঠিত করা সম্ভব হয় না অনেক ডিএফএ’রই। তবে শেরপুর জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন প্রতি বছরই ফুটবল লীগ আয়োজন করে থাকে। এবারও জুলাই মাসের ২০-২৫ তারিখে শুরু করবে। অনেক জেলাতে ডিএফএ এবং ডিএসএর মধ্যে সম্পর্ক ভালো না থাকাটাও সমস্যা। কিন্তু শেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক। জেলা ক্রীড়া সংস্থা আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করে থাকে। শেরপুর জেলার অনেক ফুটবল খেলোয়াড়ই এখন বয়স ভিত্তিক জাতীয় দলের খেলোয়াড়। শেরপুর জেলাতে স্পন্সরের বড় অভাব। আমি ডিএফএর সভাপতি হিসেবে বিত্তবানদের ফুটবলের উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা কামনা করছি। আমাদের মেয়ে ফুটবল দলও কিন্তু খুব ভালো। মেয়েদের ফুটবল দল গঠনে কোচ হিসেবে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন ফুটবল কোচ মোঃ মজিবুর রহমান এবং সৈয়দ বদরুল হক রেজভী। আর ছেলেদের প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন ফুটবল কোচ সাধন বসাক, ফুটবল প্রশিক্ষণে শেরপুর পৌরসভা এবং পৌর মেয়র ক্রীড়ামোদী শেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন ভাইয়ের অবদান উল্লেখ করার মত।
আমি মনে করি শেরপুর জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সকল কর্মকর্তাদের যোগ্যতা এবং আগ্রহ থাকাতে আর্থিক অনটনের মধ্যেও কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। বাফুফে আয়োজিত সকল খেলায় শেরপুর জেলা অংশ গ্রহণ করে থাকে। মাত্র কয়েক দিন আগেও স্কুল ফুটবলে শেরপুর জেলা গাজীপুর ভেন্যু চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আমি শেরপুর জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি, সাংবাদিক হাকিম বাবুল সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও সহ সভাপতিবৃন্দ, যুগ্ম সম্পাদকসহ কমিটির অনেকেই প্রাক্তন ফুটবল খেলোয়াড় আবার অনেকেই দক্ষ সংগঠক। অনেকেই একটা ভুল ধারণা বহন করেন। যেটা হলো আমরা অনেকেই মনে করে থাকি ভালো খেলোয়াড় হলেই তার কর্মকর্তা হওয়ার যোগ্যতা হয়। আসলে তা কিন্তু নয় সাধারণত একজন ভালো দক্ষ খেলোয়াড় কোচ হলে ভালো হয় এবং ভালো দক্ষ ক্রীড়া সংগঠকই হবে কর্মকর্তা। এটাই হয় এবং এটাই হওয়া উচিত। একজন ভালো খেলোয়াড় হলেই ভালো কর্মকর্তা হবে তা কিন্তু নয়।
তাহলে তো বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার সুযোগ পাওয়ার কথা। দেখুন বর্তমান বাফুফের কমিটিতে অধিকাংশই এক সময়ের আকাশচুম্বী খেলোয়াড় রয়েছেন। তারা কি করতে পারছেন। দিনে দিনে বাংলাদেশের ফুটবল নীচের দিকে যাচ্ছে। লেখার প্রথমাংশেই উল্লেখ করেছি ফিফার তালিকায় বাংলাদেশ ১৯৭, বেশ কিছু দিন আগেও ছিল ১৬৮। ২/১ বৎসরের মধ্যে কত নীচে নেমে গেছে। কথাগুলো বললাম এ কারণে দু/একজন ইয়ার্কির ছলে বলে থাকেন ‘ও’ কর্মকর্তা কিভাবে হলো। ‘ও’ তো ফুটবলার ছিল না। বাংলাদেশের একজন লোক আছে যে ফুটবলে লাথি দেন নাই? আমি ভালো নাম করা ফুটবল খেলোয়াড় ছিলাম না।
খেলেছি শেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত অনুর্ধ্ব-১৪ বৎসর বয়স্ক ফুটবল প্রতিযোগিতায়। বর্তমানে আমি যে ক্লাবের সভাপতি সবুজ সেনা ক্লাব সেই ক্লাবের হয়ে খেলছি কয়েক বছর। শেরপুর সরকারি কলেজে পড়ার সময় বিজ্ঞান বিভাগের হয়ে এবং জগন্নাথ কলেজে পড়ার সময় দর্শন বিভাগের খেলোয়াড় হয়ে অংশ গ্রহণ করেছি। তবে লেখা পড়া শেষ করে শেরপুর আসার পর সবুজ সেনা ক্লাবকে পুনঃগঠন করি। সবুজ সেনা বর্তমানে ক্রিকেটে প্রিমিয়ার এবং ফুটবলে উল্লেখযোগ্য দল।
কাকলি স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। শেরপুরে এমন অনেক কর্মকর্তা আছেন যারা দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক। যারা ডিএসএ বা ডিএফএ’র কর্মকর্তা হয়েছেন তারা কিন্তু আর্থিক সম্মানী বা ভাতা ছাড়া কাজ করেন। বেতন ভাতা পান না। খেলার নেশায় কাজ করেন। এটাও একটা নেশা। আমার স্ত্রীতো আমাকে বলে তোমার সংসার তো ক্রীড়া সংস্থা, বাড়ীর খবর রাখার সময় নাই। তার পরও কিন্তু অনেকে মনে করে থাকেন আমরা যারা ক্রীড়া সংস্থার সাথে জড়িত তাদের আর্থিক লাভ আছে। ক্রীড়া সংস্থায় ক্রীড়া সামগ্রী আসে বিক্রি করে ফেলে। আসলে এখন কিন্তু ক্রীড়া সংস্থার কোন ক্রীড়া সামগ্রী আসে না। আসে জন প্রতিনিধিদের কাছে। সেটা অনেকেই জানেন না। আমরা যদি কোন খেলোয়াড়ি পোষাক পড়ি অনেকেই মনে করেন সেটা ক্রীড়া সংস্থা হতে প্রাপ্ত।
যেমন ব্রাজিলের সমর্থক হিসেবে আমি ব্রাজিলের গেঞ্জি পড়ে বের হয়েছি একজন বললেন কি মানিক ব্রাজিলের গেঞ্জি শুধু এসেছে অন্য কোন দলের আসে নাই? বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখার জন্য রাশিয়া যাচ্ছি নিজ খরচে। যারা জানেন আমি রাশিয়া যাচ্ছি খেলা দেখতে। অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন তোমাকে একাই কি টিকিট দিয়েছে ? বা কাকে কাকে নিয়ে যাচ্ছে ? এমনকি আমার বাসায় কাজ করছে রাজমিস্ত্রি তিনিও আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন ‘দাদা কত দিনের জন্য আপনাকে নিয়ে যাচ্ছে, সরকারিভাবে যাচ্ছেন ভালোই তো’। বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখতে যাওয়া মানেই নিজচক্ষে লিওনেল মেসি যদিও মেসিকে কাছ থেকে দেখেছি, নেইমার, ক্রিস্তিয়ানো, রোনালদোদের দেখা।
টেলিভিশনের পর্দার সামনে বা বড় পর্দার সামনে কত রাত কেটেছে তাঁদের পায়ের জাদুতে। তাঁদের ফুটবলশৈলীতে বিভোর থেকেছি। সেই ফুটবলাররা খেলবেন আমার সামনে। তবে সবার সাথে দেখা হবে তা কিন্তু নয়। সবাইকে দেখাও সম্ভব নয়। ব্রাজিলের খেলা অবশ্যই দেখবো। তার সাথে সাথে আরো কয়েকটা খেলা দেখার চেষ্টা করবো। এই রাশিয়া যাত্রা মানে সোনালী হলুদ জার্সিধারী ব্রাজিলকে খেলতে দেখা। স্মৃতির নিউরনে ঝিলমিলিয়ে উঠে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের শেষবারে উঠে যাওয়া, ৯০ বিশ্বকাপে ক্যামেরুনের অদম্য উল্লাস, ৯৪ বিশ্বকাপে বুলগোরিয়ায় স্বপ্ন যাত্রা, ৯৮ ক্রোয়েশিয়া কিংবা ২০০২ আসরে তুরস্কের সেমি-ফাইনালে ওঠে যাওয়া। এবার প্রথম চমক আর্জেন্টিনার সাথে আইসল্যান্ডের ড্র করা ও মেসির পেনাল্ট্রি মিস করা এবং সুইজারল্যান্ডের সাথে ব্রাজিলের ভালো খেলেও ড্র করা। এবার ৩২টি দল অংশ নিচ্ছে বিশ্বকাপে। সব দলেরই খেলা দেখা তো আর হবে না। তবে ৪/৫টি খেলা দেখার ইচ্ছে আছে। ৩২টি দলের মধ্যে ট্রফি জয়ের আশা বড়জোর ৮টি দলের। এর মধ্যে আমার আশা ব্রাজিলের, যেহেতু আমি ব্রাজিলকে সমর্থন করি। ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। বাকিদের প্রত্যাশার তার নানা সূরে বাধা। কেউ প্রথম রাউন্ড পেরোতে পারলে খুশি কেউ বা আরেকটু এগোতে চায়। তবে শিরোপা প্রত্যাশী দলগুলোর জন্য ট্রফির চেয়ে কমে তুষ্ট হওয়ার উপায় নেই। গতবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ফাইনালে হেরে যাওয়া কিংবা সেমি ফাইনালে থেমে যাওয়া ব্রাজিলের কথা মনে করে দেখুন। এবারের বিশ্বকাপের ৩২ দলের অংশ গ্রহণে রাশিয়ায় ১১ শহরের ১২টি ভেন্যুতে তাই নিয়মিত মঞ্চস্থ হবে আনন্দ বেদনার মহাকাব্য। আমার জন্য কিন্তু তা নয়। আমার কাছে বিশ্বকাপ ফুটবল শুধুই আনন্দের কারণ নিজ চর্মচক্ষে দেখবো খেলা। স্মৃতির সিন্দুকে আজীবনের জন্য ভরে রাখা। প্রস্তুত থেকো ব্রাজিল তোমার দলের সমর্থক আসছে। আসছি রাশিয়া, দেখা হবে ব্রাজিল।
(লেখক: সভাপতি, জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন জেলা ক্রীড়া সংস্থা, শেরপুর)