শিরোনাম
◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১০ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির ◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস ◈ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ঢাকা ফিরছিলেন রফিক, পথে প্রাণ গেল সবার ◈ স্থায়ী জামিন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছি: ড. ইউনূসের আইনজীবী

প্রকাশিত : ১৮ জুন, ২০১৮, ০৭:০১ সকাল
আপডেট : ১৮ জুন, ২০১৮, ০৭:০১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হুজুগে বাঙাল বিনা যুদ্ধে নাহি দেবে সূচ্যগ্র মেদিনী

কাকন রেজা: বিশ্বকাপ ফুটবল চলছে। বিশ্বকাপে আমাদের বাতাসে যে পরিমাণ বিদেশি পতাকা উড়েছে, তা পুরা দুনিয়াতেই বিরল। ‘হুজুগে বাঙ্গাল’ এই প্রবাদটিকে ভুল প্রমাণ করার আগ্রহ আমাদের কোনো কালেই ছিল না। ‘অনারারি ডক্টরেট’ ডিগ্রির মতন, ‘অনারে’র সাথে এই প্রবাদটিকেও ‘ডিগ্রি’ ভ্রমে আমরা বয়ে চলেছি সযতনে। এ জিনিস আমাদের ‘জেনেটিক’, তাই লজ্জার বোধটি নিমজ্জিত হুল্লোড়ের সাগরে।

আর্জেন্টিনা হেরে গেলে, আমরা কান্নায় ভেঙে পড়ি। আরেকটু অগ্রসররা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেন, আরও দ্রুতগামীরা আত্মত্যাগ করতে গিয়ে নিজের জীবনটাই দিয়ে দেন। ব্রাজিল জিতলে আমরা মিছিল বের করি ‘জশনে জুলুস’ স্টাইলে। মিষ্টি বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনু্ষ্ঠান, পাড়ায় মহল্লায় সবার সঙ্গে কোলাকুলি, যা আমরা ঈদের দিনও করি না, চলে- আমাদের এইসব চলে।

এমন কি কোনো কারণে প্রতিপক্ষের সঙ্গে তর্ক হলে, এক পর্যায়ে শৌর্য-বীর্যের প্রমাণ দিতে রীতিমত ‘থার্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার’ শুরু। অতঃপর আহত হয়ে হাসপাতালে, বেশি হলে নিহত এবং কবরে। ‘কুছ পরোয়া’ নেই, ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচ্যগ্র মেদিনী’।

অথচ আমাদের মহাপরাক্রমী বীরদের নজর এড়িয়ে যায়, ঈদের দিন ন্যায্য দাবি নিয়ে রাজপথে উচ্চকিত ‘ভুখা মিছিল’। অন্তরীণ প্রিয়জনের হাজারো পরিবারের আনন্দহীন ঈদ উদযাপন! বাবা-ভাই হারা পরিবারের আনন্দ দিনে শোক উদযাপন!

যাক গে, এগুলো দেখার লোক রয়েছে। তারচেয়ে বরং আমরা বিশ্বকাপ উদযাপন করি। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় বিভক্ত করি দেশকে। নিজ ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করি, স্ত্রীর সঙ্গে খুনসুটি, প্রেমিকার সঙ্গে ‘ব্রেকআপ’- এসব করি। তাতেও না পোষালে প্রতিবেশী ভাই বেরাদারের সঙ্গে হালকা মারামারি, না হলে পাশের ‘আর্জেন্টিনা মহল্লা’র বিরুদ্ধে মিছিল করি। ‘ব্রাজিল পাড়া’র বিরুদ্ধে ‘মাল-পত্তর’ নিয়ে মহারণে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমাদের শৌর্য-বীর্য প্রদর্শনের এটাই মোক্ষম সময়, নপুংসক জীবনে পৌরুষত্ব দেখানোর এমন নিরাপদ সুযোগ ছাড়ি কীভাবে! আমরা বোকা নাকি!

‘জার্মার্নি’র প্রেমে কে যেন জমি বেঁচে কিলোমিটার হিসাবে পতাকা বানিয়েছেন, নামটা ভুলে গেছি। ব্রাজিল বাড়ি, আর্জেন্টিনা’র কী যেন, তাও মনে নেই। শুধু মনে আছে প্রিয় দেশটার নাম, বিস্মৃত হয়নি নিজ বাড়ির ইতিকথা। লাল সবুজ পতাকা ধারণ করে হৃদয়। এই পতাকা দৃশ্যমান হতে হবে, এমন কোনো শর্তে বিশ্বাস নেই। দেশপ্রেম প্রদর্শনের বিষয় নয়, প্রকাশের বিষয় এবং প্রকাশটা কর্মে।

নিজ মাটি বিক্রি করে যে মানুষ অন্য দেশের পতাকার দাম চুকায়, তাকে আমার পক্ষে ‘মারহাবা’ বলা সম্ভব হয় না, এজন্য আমি খুশি মনে ‘দুঃখিত’। নিজ মাটিতে বাড়ি বানিয়ে যে অন্য দেশের পতাকার রঙে রাঙায় তাকে আমি ‘বাহবা’ দিতে পারি না, এ আমার আনন্দময় ‘ব্যর্থতা’।

কেউ যদি এমন কর্মে আনন্দিত হন, স্বাথর্কতা খুঁজে পান- তাদের প্রতিও কোনো অভিযোগ নেই, রয়েছে বিস্ময়। যে দেশের মানুষ নিজের পরিবারকে একটু ভালো রাখার জন্য অভিবাসী হন, নৌকায় সাগরপাড়ি দিতে পরপারে পাড়ি জমান। যে দেশের মানুষ প্রবাসে কারাগারের সেলের মতন একটি কন্টেইনারে বিপন্ন জীবন কাটান- শুধু নিজের পরিবারকে, নিজের দেশকে ভালো রাখতে। সেই দেশের মানুষ যখন অন্য পতাকার জন্য মাটি বেঁচে, অন্য পতাকার রঙে বাড়ি রাঙায় তখন তো বিস্মিত হবারই কথা। এমন বিস্ময়ের তুলনা কী হতে পারে, কী সে হতে পারে?

বলবেন, মানুষ আবেগপ্রবণ, এসব আবেগ সৃষ্ট কর্মকাণ্ড। আমি নিজেও ফুটবলপ্রেমী। দল হিসাবে ব্রাজিল প্রিয়, দ্বিতীয় ছিল ইতালি, এবার বিশ্বকাপে আসতে পারেনি, ভালো লাগেনি। ফুটবল পছন্দ করি, নেইমারের খেলায় মুগ্ধ হই, এমনকি মেসির গতিতেও। রোনালদোর ক্ষিপ্রতা ভালো লাগে। আমিও গোল হলে, গোল বলে চিৎকার করে উঠি। তারপরও ভুখা মিছিলের চিৎকার আমার কানে পৌঁছায়, ব্রাজিল হারলে যতটুকু কষ্ট পাই, তারচেয়ে বেশি কষ্ট পাই, বাপ-ভাই হারা প্রিয়জনের যাতনায়। ব্রাজিলের জয়ে যতটা হাসি দু’কান বিস্তৃত হয়, তারচেয়ে অনেক বেশি নোনা পানি ধরে ধরে দু’চোখ- সেই চিৎকারে- সেই যাতনায়। বলুন তো কোনটায় আবেগ বেশি? মানুষের আবেগ প্রবণতার প্রকাশ কোনটায় বেশি হওয়া উচিত?

অনেকে বলবেন, এসব ফাউ প্যাঁচাল। ঠিক তাই- তারচেয়ে চলেন, ড. মাহফুজুর রহমানের একক সংগীত সন্ধ্যা দেখি।

শেষ কথা.

এ লেখার শুরুর ইতিহাসটা শেষে বলে নেই, ‘শেষ কথা’র নামে। আমার জেলার বালিয়াচন্ডী নামে একটি গ্রামের আর্জেন্টিনা সমর্থক মতিন, এক টগবগে যুবক, সমর্থনের শৌর্য-বীর্য প্রকাশে কাঁঠাল গাছে উঠেছিলেন পতাকা টানাতে। বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে তার জীবনের ইতি ঘটেছে। কী অর্থহীন এমন যৌবন, কতটা অর্থহীন এতদিনের বেঁচে থাকা!

ঘটনাটি জানালেন আমার এক প্রিয়জন এবং দুঃখ করলেন। সেলফোনে কথা শেষ হতেই, মেজাজ ফরটি নাইন। ‘নাইন এমএম’ নাই, অপারগতায় তাই এই লেখার প্রয়াস।

সিনিয়র সাংবাদিক ও কলাম লেখক

সূত্র: প্রিয়.কম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়