ডেস্ক রিপোর্ট : নিকারাগুয়াতে প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগা ও সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অস্ত্রবিরতি চুক্তির কয়েক ঘণ্টার মাথায় আবারও সহিংসতা ও প্রাণহানি হয়েছে। শনিবার (১৬ জুন) প্রচণ্ড গোলাগুলি ও অগ্নিসংযোগে নতুন করে আটজন নিহত হয়। ঘটনায় সরকারকে দায়ী করে এর নিন্দা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারের নেতারা। তবে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ারও অঙ্গীকার করেছেন তারা। নতুন সহিংসতা নিয়ে সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। দ্য নিকারাগুয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, দুই মাস ধরে চলা এ সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কমপক্ষে ১৭০ জন নিহত হয়েছে।
১৯৯০ সালে নিকারাগুয়ার গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এবার সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আছে নিকারাগুয়া। গত ১৬ এপ্রিল নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল ওর্তেগা অবসরোত্তর ভাতা ও এর তহবিল পুনর্গঠনের ঘোষণা দেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শ মেনে দেওয়া এই ঘোষণায় পেনশন তহবিলে ব্যক্তির অংশ বাড়ানোর পাশাপাশি ভাতার পরিমাণ কমানো হয়। নিকারাগুয়ার পেনশন তহবিলের একাংশ বিনিয়োগ করা হয় ওর্তেগা সরকারের কর্তাব্যক্তিদের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানে। আগামী আগস্টেই দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের। সেবাখাত সংকোচনের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই ফুঁসে ওঠে শিক্ষার্থীরা। ডাক দেয় বিক্ষোভের। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অন্যরাও সরকারবিরোধী আন্দোলনে শামিল হয়। আন্দোলনকারীদের ওপর সরকারি বাহিনর সশস্ত্র হামলা চলতে থাকে। বিক্ষোভকারীরাও পাথর আর হাতে তৈরি মর্টার দিয়ে পাল্টা হামলা চালাতে থাকে।
সংঘাত নিরসনে শুক্রবার (১৫ জুন) সরকারের সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয় বিক্ষোভকারীরা। এর কয়েক ঘণ্টা পরই শনিবার (১৬ জুন) সকালে আবারও সংঘর্ষ ও প্রাণহানি হয়েছে।
কৃষিজাত পণ্য প্রস্তুতকারকদের সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মাইকেল হ্যালি শনিবার একটি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় দুই শিশুসহ ছয় ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়ী করেছেন। মানাগুয়াতে একটি বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার পর ওই ছয়জন নিহত হয়। আর গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় আরও দুইজন।
হ্যালি বলেন, ‘আমরা শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে ঘুমাতে চাই। যেভাবে এ পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু হয়েছে, তাদেরকে যেভাবে পুড়িয়ে মারা হয়েছে তা খুব কষ্টকর। সরকার চায় আমরা আলোচনার টেবিল থেকে সরে আসি। তবে আমরা তা হতে দেব না। সংকট নিরসনের জন্য এটাই একমাত্র উপায়।’
পুড়িয়ে দেওয়া ভবনটির মালিকের চাচা মারিয়া হারনান্দেজ বলেন, ‘এটা হত্যাকাণ্ড। এটা বর্বরতা। আমার ভাতিজা পুলিশকে বাড়ির ছাদে স্নাইপার স্থাপন করতে না দেওয়ায় তারা বাড়িটি ঘেরাও করে এবং তা জ্বালিয়ে দিয়েছে।’
আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নির্ধারিত দিনক্ষণেই আলোচনা চলবে। সরকার ও স্থানীয় সরকারের নেতারা গণতান্ত্রিক সংস্কারসহ অন্যান্য প্রস্তাব নিয়ে কার্যনির্বাহী দল গঠনে রাজি হয়েছে। সোমবার (১৮ জুন) আলোচনা শুরু হবে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, পুলিশ ও ওর্তেগাপন্থী মুখোশধারী বন্দুকধারীরা সড়ক অবরোধ করে রাখা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুড়েছে। আগুন নেভানোর সময় দমকলকর্মীরা ‘মুখোশধারী’ দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, আগুনের উৎস অনুসন্ধান করা হবে। ঘটনা সম্পর্কে জানতে রয়টার্স সরকারপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পায়নি।
সূত্র : বাংলাট্রিবিউন
আপনার মতামত লিখুন :