স্বপন কুমার দেব, মৌলভীবাজার: গত দুইদিনে চরম আতঙ্কের পর জেলার কুলাউড়া ও কমলগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে বন্যার পানির স্রোতে ভেসে যাওয়া শিশু, বাবা-ছেলেসহ ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া এক নারীসহ আরো বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন। কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দশটি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক লোক এখনও পানিবন্দি রয়েছেন। পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার কার্যক্রমে রোববার থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা তৎপরতা শুরু করেছেন। বন্যায় আক্রান্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জল, স্যানিটেশন এর অভাব রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ কার্যক্রম বিতরণ চলছে।
গত দুইদিনে পানির স্রোতে ভেসে যাওয়া নিহতরা হচ্ছেন-আলীনগর ইউনিয়নের বস্তির পরিবহন শ্রমিক সেলিম মিয়া (৩৮), শমশেরনগর ইউনিয়নের ভাদাইরদেউল গ্রামের মানসিক প্রতিবন্ধী রমজান আলী (৪০), ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঠালকান্দি গ্রামের পিতা সাত্তার মিয়া (৫৫) ও তার ছেলে করিম মিয়া (২০) এবং রহিমপুর ইউনিয়নের প্রতাপী গ্রামের মিছির মিয়ার ১৮ মাসের শিশুপুত্র ছাদির মিয়া।
গত ২৪ ঘন্টায় উজানে ভারতীয় অঞ্চলে তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধলাই নদী ও কুলাউড়ার শরীফপুরে মনু নদের পানি কমতে শুরু করে। ফলে কমলগঞ্জে বন্যা বিভিন্ন সড়ক থেকে ও বাড়ি ঘর থেকে বন্যার পানি নেমে যেতে শুরু করায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। একইভাবে কুলাউড়ার সীমান্তবর্তী শরীফপুরেও পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। কমলগঞ্জের নিম্নাঞ্চল পতনউষার ইউনিয়ন, মুন্সীবাজার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের আংশিক এবং কুলাউড়ার শরীফপুরে আটকা পড়া পানিবন্দি মানুষজনদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর বিশেষ তৎপরতা শুরু হয়েছে। এদিকে শরীফপুরে শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোষ্ট সড়কে কালভার্টটি ভেঙ্গে পড়ায় শরীফপুরের মানুষজনের চলাচলের জন্য সড়ক জনপথ বিভাগ বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
মুন্সীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা জুনেল আহমদ তরফদারের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি নৌকা পতনঊষার ইউনিয়নের বন্যাক্রান্ত লোকদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে কাজ করছে।
এছাড়া মুন্সীবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. সালাউদ্দিনের ব্যক্তিগত অর্থায়নে পতনঊষার, রহিমপুর ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রোববার দিনভর প্রায় তিন সহস্রাধিক লোকের মধ্যে খিঁচুড়ি বিতরণ করা হয়।
রোববার সকালে কমলগঞ্জের শমশেরনগর-কমলগঞ্জ ও মুন্সীবাজার-কমলগঞ্জ সড়ক থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও শমশেরনগর-মৌলভীবাজার এবং শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে এখনও পানি থাকায় সরাসরি যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। রোববার সকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল দুটি স্পীডবোট নিয়ে কমলগঞ্জের পতনউষার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে পানিবন্দি মানুষজনদের উদ্ধার করতে শুরু করে। এদিকে গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে সেনাবাহিনীর ২টি দল স্পীডবোট নিয়ে কুলাউড়ার শরীফপুরও হাজীপুর ইউনিয়নে পানিবন্দি মানুষজনদের উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে।
এদিকে মৌলভীবাজার ৪ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো.আব্দুস শহীদ এমপি ও মৌলভীবাজার ২ আসনের এম পি আব্দুল মতিনের উদ্যোগে কমলগঞ্জ ও কুলাউড়ার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ও কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌ. মো. গোলাম রাব্বীর নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসনের অফিসারগন ২টি উপজেলার বিভিন্ন বন্যা দুর্গত এলাকায় শুকনো খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রাখছেন। এছাড়া কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো: জুয়েল আহমদ ও ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা দুর্গতদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক গত দুইদিনে কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বন্যায় পানির স্রোতে ভেসে আসা ৫ জনের লাশ উদ্ধার ও বেশ কয়েকজন নিখোঁজের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :