শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৭ জুন, ২০১৮, ০৫:০০ সকাল
আপডেট : ১৭ জুন, ২০১৮, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাঙামাটি দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো জোড়াতালি দিয়ে চালু রাখা হয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট : রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের দূরত্ব ৭৪ কিলোমিটার। টানা বৃষ্টিতে ভেঙে গেছে সড়কের একাংশ । প্রবল বৃষ্টির কারণে এই সড়কের ওপরে ৬০টি স্থানে পাহাড় ধসে মাটি পড়েছে। ২০টির বেশি জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরনের ফাটল। পাহাড় ধসের পর সড়কটি জোড়াতালি দিয়ে চালু রাখা হয়েছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সংস্কার কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, সংস্কার কাজে সংশ্লিষ্টদের কোনও সমন্বয় নেই। কাজের মানেও সন্তুষ্ট নন স্থানীয়রা।

রাঙামাটি-বান্দরবান,রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি,রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের অস্থায়ী প্রতিরক্ষার জন্য ১০ থেতে ১১ জন ঠিকাদার কাজ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঠিকাদার বলেন, এই কাজের স্থায়ীত্বকাল ছয় মাসের। সড়ক বিভাগ পরিকল্পনা করতে করতে দিন পার করছে, এজন্য সড়কের এই বেহাল অবস্থা।

শালবল এলাকায় ধসে যাওয়া রাস্তা সংযোগ কাজের ঠিকাদার নিজাম উদ্দিন (নিশু) বলেন, বেইলি ব্রিজের পিলারের কাজ এবং নিচে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের কাজ করছি আমরা। এ কাজে বরাদ্দ ছিল ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। কিন্তু অফিস আমাকে দেয় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাকি টাকা ঢাকার অফিসের খরচ ও রাঙামাটির অফিসের খরচ বলে কেটে নেওয়া হয়েছে।’ এভাবেই সড়ক বিভাগের কাজের টাকা ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

রাঙামাটি শহরের রাস্তার অস্থায়ী রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেছিল নিউ রোজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কয়েকজন ঠিকাদার মিলে এ কাজটি করেন। তাদের একজন লিটন মাঝি বলেন, ‘চারটি প্যাকেজে মোট দুই কোটি টাকার কাজ ছিল। এর মধ্যে আমরা এক কোটি টাকা পেয়েছি। যেগুলো ভেঙে গেছে, সেগুলো বর্ষার শেষে কাজ করে দেবো।’

সড়কের ওপরে পাহাড় ধসপাহাড় ধসের পর জোড়াতালি দিয়ে চালু রাখা হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। রাঙমাটি-চট্টগ্রাম সড়কের দূরত্ব ৭৪ কিলোমিটার। এই সড়কের ৬০টি স্থানে পাহাড় ধস হয়ে সড়কের ওপর মাটি পড়ে। ২০টির বেশি জায়গায় বড় বড় ফাটল ধরে। দুইটি স্থানে সড়কের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গিয়েছিল। ধসের পর বড় বড় ফাটলের অংশে খুঁটি দিয়ে সড়ক ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়। আট দিন পর হালকা যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হলেও প্রায় দুই মাস পার ভারী যান চলাচল শুরু হয়। গত কয়েকদিনে টানা বর্ষণে বিভিন্ন জায়গায় সংস্কার করা রাস্তাটি ফের ভাঙনের কাবলে পড়ে। ফলে সড়ক বিভাগের এমন কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সাধারণ মানুষ। জানা গেছে, বি. আলম মাহমুব এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে রাস্তা সংস্কারের জন্য এক কোটি টাকা দিয়েছে সড়ক বিভাগ।

পাহাড় ধসে সড়কের বেহাল দশাপরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নেতারা বলছেন,গত বছর পাহাড় ধসের পর যে কাজ হয়েছে, তা সাময়িক। কিন্তু স্থায়ীভাবে কাজ না করলে এই বর্ষায় আবারও যদি পাহাড় ধস হয়, তাহলে সেই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা কঠিন হবে। পাহাড় ধসের এক বছরেও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট এবং স্থাপনা পুরোপুরি মেরামত করা হয়নি। এখানে কাজের সমন্বয়ের অভাব হয়েছে। সড়ক বিভাগ সব সময় নিজের মতো কাজ করে।

আশার কথা শোনালেন রাঙামাটি সড়ক বিভাগের দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘স্থায়ীভাবে রাস্তাগুলো টেকসই করার জন্য আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে কাজ শুরু করা যাবে। ’

রাঙমাটি সড়ক বিভাগের দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন জানান, সড়ক বিভাগের সাতটি সড়ক অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সাতটি সড়কের ১৪৫টি স্থানে পাহাড় ধস হয়। তিনটি স্থানে রাস্তা একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ১১৩টি স্থানে সড়কের পাশের অংশ ভেঙে পড়েছে। এর কারণে সড়কগুলো ভারী যান চলাচনের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সে জন্য অস্থায়ী রক্ষণাবেক্ষণ শুরু করেছি। এর জন্য ব্যয় হয়েছে ১৪ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, ‘স্থায়ী রক্ষণাবেক্ষণ কাজ আমরা শুরু করেছি। তার জন্য সড়ক বিভাগের বিশেষজ্ঞ টিম এসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন শেষে গত জানুয়ারিতে আমাদের একটি নকশা দিয়েছেন। আমরা এপ্রিলে তা মন্ত্রণালয়ে তা পাঠিয়ে দেই। যাচাই-বাছাই শেষে মে মাসের শেষদিকে অভ্যন্তরীণ যাচাই কমিটির সভার সিন্ধান্ত অনুযায়ী জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে এটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হলে আগামী শুষ্ক মৌসুমে কাজ শুরু করতে পারবো। তখন সব সড়ক ঝুঁকিমুক্ত করা যাবে। প্রকল্পে সড়ক বিভাগের ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি রাস্তার মোট ১২৮টি স্থানে চার হাজার ৭২৫ মিটার রিটেনিং ওয়াল করার পরিকল্পনা আছে। ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী, এর ব্যয় দাঁড়াবে ২০০ কোটি টাকা।

এই ব্রিজের নির্মাণ মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্নরাঙামাটি লঞ্চ ও বাস মালিক সমিতির সভাপতি মাঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘দীর্ঘ এক বছর পর রাস্তার যা কাজ হয়েছে, তা স্থায়ী কোনও কাজ হয়নি। গত বছরের মতো যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে এই রাস্তা টিকবে না। সরকারের কাছে দাবি করবো, যেন স্থায়ীভাবে রাস্তাটি রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘এখানে কাজের সমন্বয়ের অভাব হয়েছে। সড়ক বিভাগ সব সময় নিজের মতো কাজ করে। জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করলে কাজটি আরও সহজভাবে করা যেত। সড়ক বিভাগ এত টাকার কাজ যে করলো, তা কোনও স্থায়ী কাজ না। এবারও যদি গত বছরের মতো বৃষ্টি হয়, তাহলে আবারও রাঙামাটিতে ভয়াবহ অবস্থা হবে।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য এবং সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) রাঙামাটির সহ-সভাপতি বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, ‘রাঙামাটি সড়ক বিভাগের সুনাম ভালো না। ১৪ কোটি টাকা খরচ করে রাস্তার কাজ করার পরও টানা দুই দিনের বর্ষণে অনেক জায়গায় ভেঙে গেলো। এর দায় কে নেবে? তাদের কাজ নিয়ে সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট না।’

রাঙামাটি প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সুনীল কান্তি দে বলেন, ‘আমার মনে হয় না ১৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। গত এক বছরে রাস্তাঘাটের তেমন কোনও পরিবর্তন দেখা গেল না। এটা খুবই দুঃখজনক। পার্বত্য অঞ্চলে যোগাযোগের জন্য এটাই মূল সড়ক। আর এই সড়কের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কঠিন পরিস্থিতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তাই দ্রুত সড়কটি স্থায়ীভাবে ঠিক করা হোক। ’

প্রসঙ্গত, গত বছর প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে রাঙামাটিতেই চার সেনাসদস্যসহ ১২০ জন নিহত হন। আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। ব্যাপক ক্ষতি হয় পুরো জেলায়। সে সময় তিন মাস আশ্রয়কেন্দ্রে ছিল প্রায় তিন হাজার মানুষ। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়