শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৫ জুন, ২০১৮, ০৬:৪১ সকাল
আপডেট : ১৫ জুন, ২০১৮, ০৬:৪১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আমার যত ঈদ ও বৈষম্যের উৎসব

অজয় দাশগুপ্ত, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া থেকে: আমার কাছে ঈদ মানে এক বিরল অনুভূতি। বড় হয়ে ওঠার বয়সে বাংলাদেশে ঈদ হতো শীতকালে। নামাজ পড়তে জানি না বলে সেটি ছাড়া আর সবকিছুই উপভোগ করতাম। মজা আনন্দ খাবার এমনকি ঈদের পাওনাও বুঝে নিতাম। আমার মনে আছে একসময় নতুন জামাও কিনেছি। বন্ধুরা সব নতুন কাপড় পরে ঘুরে বেড়াবে আর আমি পুরোনো পোশাকে? সেটি হবার নয়। জানি না কি বদলেছে, কেন বলেছে, কতটা বদলেছে। এটুকু জানি আমরা নাগেলে অনেক বন্ধুর বাসায় ঈদ শুরু হতো না। সালাম করার পর যেসব বন্ধুর মায়েরা জড়িয়ে ধরে বা মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে দিতেন তারাও জননী ছিলেন আমাদের। তারা কোনো রাজনীতি বা অন্ধত্ব বুঝতেন না। তাদের কাছে অজয়, সনজীব, শহীদ,ফারুক,খালিদ বা আবু মুসায় কোনো তফাৎ ছিল না।

আমি তেমন ঈদ দেখে বড় হওয়া মানুষ যেখানে সুবীর নন্দী, তপন চৌধুরী বা এন্ড্র কিশোর মূল নায়ক, মূল গায়ক। তখন এবং এখনো দেশের সাধারণ মানুষ এগুলো নিয়ে কলহ করেনি। মাঝখানে এসে জুটেছে রাজনীতি। এটা মানি অন্ধতা ঢুকেছে। ধর্মের নামে সংস্কার এর নামে মৌলবাদ ঢুকেছে। কিন্তু একবার ভাবুন, এই যে বিশ্বকাপ ফুটবল আমরা কাদের জন্য পাগল? কত মুসলিম দেশই তো খেলে। কই তাদের পতাকা তাদের দল নিয়ে মাথা ঘামায় কেউ? মদ শুকর আর ধর্ম যদি বিষয় হতো আর্জেন্টিনা ব্রাজিল জার্মানি নিয়ে পাগল হতাম না আমরা। তাদের পতাকা তাদের খেলোয়াড় ও খেলা নিয়ে এমন মাতামাতি বলে দেয় আমরা মূলত অসাম্প্রদায়িক।

কদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান ও ভূতপূর্ব ভিসি আবদুল মান্নান লিখেছেন, কলকাতায় তারকাখচিত হোটেলেও জায়গা নেই। বাজার হাটে গিজগিজ করছে বাংলাদেশিরা। ভারত বিরোধিতার রাজনৈতিক বটিকা যদি কাজ করত সে দেশের পোশাক গহনা বা প্রসাধন জুতায় ঈদ হতো? হতো না।

এই কারণেই আমি ঢালাওভাবে বিরোধিতা করি না। এখনো আশাও সম্ভাবনা দেখি। এখনো মনে করি আমাদের দেশের সাধারণ মানুষরাই দূর করবে বিভেদ। আজকের বাংলাদেশে মগজ ও মেধা বড় সংকটে। মগজ উড়িয়ে দেওয়ার নেশায় উন্মাদেরা আছে তৎপর। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লড়াই থামেনি। থামেনি লুটপাট। ডাকাতি চুরি এগুলোও চলছে সমানে। দুর্নীতি ও পুকুর চুরির কারণে সমতার ঈদ আসে না। আসে বৈষম্যের উৎসব। যেদিন কেউ জাকাত নিতে এসে পদদলিত হবে না, যেদিন মজুরের ছেলেটি নতুন পোশাকে ঝলমল করবে যেদিন পোশাককর্মী দিদি বা আপা ব্র্যান্ডের কাপড় গায়ে বেরিয়ে আসবে সেদিন আমাদের ঈদ হবে সর্বজনীন। আমি একক ঈশ্বরে আস্থাশীল। তিনি যদি করুণাময় না হতেন কবেই তলিয়ে যেতো সব। না সংস্কার না আচরণ না প্রথা কিছুই কিছু না, যদি তার কাছে না পৌঁছুতে পারা যায়। তেমন কেউই একদিন বাংলাদেশে সবার মঙ্গল করবেন, যা রাজনীতি পারবে না। শুভ ঈদ।
লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়