ইমদাদ ফয়েজী: মহিমান্বিত রমজানের অফুরন্ত কল্যাণ, রহমত ও বরকতময় দিনগুলো একে একে শেষ হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুমিন নর-নারী তাকওয়া অর্জনের গভীর অনুশীলন করছেন। বস্তুত, মহান প্রভু তাঁর অনুগত বান্দাদেরকে সুযোগ করে দেন- তাকওয়া অর্জনের জন্য সিয়াম সাধনার। পবিত্র কোরআনের ভাষায়- 'হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা আলবাকারা : ১৮৩)
আমরা জানি, সাওম বা সিয়াম বলা হয়- সুবহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাকে। সাওম-সিয়াম শব্দ দু'টি সমার্থক। সিয়াম শব্দটি বহুবচন, সাওম একবচন। পবিত্র কোরআনে উভয় শব্দের ব্যবহার রয়েছে। অবশ্য এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা সিয়াম শব্দটি (বহুবচন) চয়ন করেছেন। মুফাসসিরিনে কেরাম বলেন- পানাহার এবং যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি- হাত, পা, চক্ষু, কান, নাক, জিহ্বা, ঠোট, অন্তর ও মস্তিষ্ক তথা শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে যাবতীয় পাপকাজ থেকে মুক্ত রেখে সিয়াম আদায়ের মাধ্যমে, তাকওয়া অর্জনের অনুশীলন করতে হবে। উক্ত আয়াতের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যও তাই।
মন্দ বিষয়াদি ও পাপকাজ থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমেই যে, সিয়াম সাধনা করতে হয়, এ কথার কঠোর নির্দেশ সংবলিত অনেক সুস্পষ্ট হাদীস রয়েছে। এ বিষয়ে দু'টি হাদীস পেশ করা হলো। আবূ হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেন- আল্লাহ ইরশাদ করেন, সাওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম আমার জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সায়িম। যার হাতে মুহম্মাদের প্রাণ, তাঁর শপথ! অবশ্যই সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহ্র নিকট মিসকের গন্ধের চাইতেও সুগন্ধি। সায়িমের জন্য রয়েছে দু’টি খুশী- যা তাঁকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে। (বুখারী শরীফ: ১৯০৪)
এ হাদীসে রোজাকে ঢাল আখ্যায়িত করা হয়েছে। ঢাল বলা হয়, যোদ্ধা নিজের সুরক্ষার জন্য যা ব্যবহার করে। সুতরাং হাদীস থেকে একথা স্পষ্ট যে, রোযাদারের রোযা হতে হবে ঢালস্বরূপ, যা তাকে সকল অনর্থক ও গোনাহের কাজ থেকে রক্ষা করবে। বস্তুত, মনুষ্য জাতির মাঝে পূণ্য অর্জনের শক্তির পাশাপাশি রয়েছে অপরাধ প্রবণতা। এ কারণে বারেবার আমরা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হই, গোনাহের কাজে জড়িয়ে যাই। এসব গোনাহের কলুষতা থেকে মুক্ত করে মহান প্রভু আমাদেরকে আবার তাঁর পথে ফিরিয়ে নিতে, আমাদের জন্য দু'টি বৈধ বিষয় অবৈধ করে দিয়ে কাজ দুটি থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি মূলতঃ তাঁর যাবতীয় বিধিনিষেধ মেনে চলার তথা তাকওয়ার প্রশিক্ষণ প্রদান করেন- যাতে করে আমরা ত্যাগ, আত্মসংযম ও আত্মসংশোধন এর অনুশীলন করে তাকওয়ার ভূষণে আমাদের জীবনকে সাজাই, আলোকিত করি, পূণ্য ও কল্যাণের দিকে ফিরে আসি। সর্বোপরি, জীবনের অবশিষ্ট সময়টুকুতে তাকওয়ার অনুশীলন বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে নিজেকে একজন সফল মুমিন হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। অবশ্য, রোজার দাবীও তাই।
আপনার মতামত লিখুন :