মো. শহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম: বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি একাকার হয়ে টানা চার দিন ধরে পানিবন্দি নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলিতে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে আছে। পানি ঢুকে পড়েছে বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো মানুষ। বুধবারও ছিল জলমগ্ন।
নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর, চাক্তাই, চান্দগাঁও, মোহরা ও বাকলিয়ার হাজার হাজার বাড়িঘরে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাসা বাড়িতে জোয়ারের পানি ডুকে যাওয়ার কারণে রান্না করতে না পেরে হোটেল থেকে খাবার কিনে এনে সেহেরি খেতে হচ্ছে।
অন্যদিকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মসজিদে জোয়ারের পানি ঢুকে যাওয়া কারণে মুসল্লীরা নামাজ আদায় করতে পারছে না। এককথায় পানিবন্দী জনগণকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। নগরীর আগ্রবাদ এলাকায় মা ও শিশু হাসপাতালে জোয়ারের পানি ঢুকে যাওয়ায় চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে।
দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী স্বজনদের। পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তরের মোহাম্মদ ফরিদ জানান, বুধবার জোয়ারের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ০৯ মিটার। সর্বনিম্ন শূন্য দশমিক ৮২ মিটার। বিকেল ৩ টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৯৪ মিলিমিটার অর্থাৎ প্রায় ৪ ইঞ্চি। নগরীর আগ্রবাদ, হালিশহর, মুহুরীপাড়া, দাইয়াপাড়া, শান্তিবাগ, মুরাদপুর, ঘাষিয়াপাড়া, মোহাম্মদপুর,বাড়ইপাড়া, সিডিএ আবাসিক, বৃহত্তর বাকলিয়া. চান্দগাঁও, মোহারাতে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।
আগ্রাবাদ হাজিপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ জাফর জানান, রাস্তায় জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে গাড়ী চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে আমাদের। তিনি বলেন, শত শত ঘরের বাসিন্দাগণ প্রতিবেশীদের ঘরে সেহরী ও ইফতার করেছেন।চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ দোকান ও গুদামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, ভারী বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে উপজেলার হাট হাজারী, রাউজান, ফটিকছড়িতে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ দুই দিন ধরে পানিবন্দি।
জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে ভেসে গেছে পুকুর-দীঘির মাছ, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু। সড়কে পানি উটে যাওয়াতে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি রোড়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনে মানুষ রিকশাভ্যানেই চলাফেরা করেছেন বাধ্য হয়ে। রাউজানের বন্যাদুর্গত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমার জীবনে রাউজানে এত পানি দেখিনি। পুরো পৌরসভা একপ্রকার ডুবে গেছে। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক দুই দিন বন্ধ ছিল। ৫০ হাজার মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রাথমিকভাবে সরকারি ২০ টন চাল এবং বেসরকারিভাবে সাড়ে ৭ লাখ টাকা বন্যাদুর্গতদের সহায়তা করেছি আমরা। মাছচাষ, চাষাবাদ, পোলট্রি, গবাদিপশু সব শেষ। ৮০ লক্ষ টাকার মাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে। রাস্তাঘাট, সেতুসহ অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে সময় লাগবে।
আপনার মতামত লিখুন :