শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৩ জুন, ২০১৮, ০৯:৫০ সকাল
আপডেট : ১৩ জুন, ২০১৮, ০৯:৫০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঈদ আনন্দে মিশেছে ভোটের আমেজ

ডেস্ক রিপোর্ট : সারাদেশে জমে উঠছে ঈদ রাজনীতি। জাতীয় নির্বাচনের আরও ছয় মাস বাকি থাকলেও গ্রামে-গঞ্জে মানুষ ঈদ উদ্‌যাপন করবে নির্বাচনী আমেজে। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ঈদ উপলক্ষে সব দলের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাই ছুটে গেছেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়। দিনরাত সমানে চালাচ্ছেন গণসংযোগ। গরিব-দুস্থদের মধ্যে ব্যাপক হারে শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, সেমাই, চিনিসহ ঈদের বাজারের অনেক কিছুই বিতরণ করছেন তারা। গ্রামীণ অর্থনীতিও এতে অতীতের যে কোনো ঈদের সময়ের চেয়ে অনেক বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।

অবশ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতাই চোখে পড়ছে বেশি। ইফতার পার্টিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটিয়ে শোডাউন করছেন তারা। তবে রাজপথে আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও বসে নেই। দল এখনও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত না নিলেও মামলা-মোকদ্দমার ভয়-ভীতির মধ্যেই সীমিত পরিসরে তারা গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। আগের নির্বাচনে জামায়াতকে দেওয়া আসনেও এবার কাজ করছেন বিএনপি নেতারা।

অল্পসংখ্যক রাজনীতিবিদই সারা বছর নিজ নির্বাচনী এলাকায় মানুষের আপদে-বিপদে পাশে থাকেন। ঈদ, পূজাসহ শীতকালে গরিব-দুস্থদের মধ্যে নিয়মিত আর্থিক সহায়তা ও কাপড়-চোপড় দিয়ে থাকেন তারা। তবে বেশিরভাগ সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীই এলাকায় ছোটেন নির্বাচন এলে। সারা বছর নিজ এলাকা ও ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখলেও মনোনয়নের আশায় চষে বেড়ান স্থানীয় নেতাকর্মীদের বাড়িঘর। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। দুই মাস পর ঈদুল আজহা থাকলেও নির্বাচনী বছরের শেষ ঈদুল ফিতর ঘিরে জনগণের কাছাকাছি আসার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ উপলক্ষে কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা করার পাশাপাশি ভোটারদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। গত সাড়ে চার বছর নির্বাচনী এলাকায় না গেলেও এখন চষে বেড়াচ্ছেন গ্রামের পর গ্রাম। প্রার্থীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানানো ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টারে চেয়ে গেছে দলীয় কার্যালয়, গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দর। রমজান মাসজুড়ে ইফতার পার্টির মাধ্যমেও ব্যাপক জনসংযোগ করেছেন অনেক প্রার্থী।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম লীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান সমকালকে বলেছেন, সামনে নির্বাচন হওয়ায় এবারের ঈদে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা বেশি দেখা যাচ্ছে। ইফতার মাহফিল ছাড়াও দান-খয়রাত বেড়ে গেছে। এটা দোষের কিছু নয়। জনপ্রতিনিধি কিংবা মনোনয়নপ্রত্যাশীরা উৎসবের আয়োজনে অবশ্যই তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে থাকবেন- এটাই গণতন্ত্রের নিয়ম।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সমকালকে বলেন, নির্বাচনী বছরে ঈদ হওয়ায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন- এটাই স্বাভাবিক। একই সঙ্গে গরিব-দুস্থদের মধ্যেও জাকাতের কাপড়-চোপড় বিতরণ করা স্বাভাবিক। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে রাখায় একটি নিরানন্দ ঈদ উদযাপন করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে দলের গুম, খুন ও মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ নেতাকর্মীদের জন্য কষ্ট নিয়েই ঈদ করতে হচ্ছে তাদের।

এখন হাট-বাজার, হোটেল-রেস্তোঁরা, বাড়িঘর- সর্বত্র একই আলোচনা- আগামী নির্বাচন। কেমন হবে নির্বাচন? সবার মনে একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে- দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি কি এবার নির্বাচনে অংশ নেবে? দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়া যদি মুক্তি না পান এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি যদি পূরণ না হয়, তাহলে কোন পথে হাঁটবে দলটি? প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন বা পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র কিংবা জাতিসংঘে বিএনপি নেতাদের তৎপরতায় কি কোনো সুফল পাওয়া যাবে? নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার মধ্যে সারাদেশে চলছে এসব জল্পনা-কল্পনা।

এবারের ঈদ ভিন্নমাত্রা আনছে দেশের অর্থনীতিতে। রাজনৈতিক নেতাদের নির্বাচনী এলাকা সফর এবং ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উপহার বিতরণে চাঙ্গা হয়ে উঠছে গ্রামীণ অর্থনীতি। জাকাতের বড় অংশই এবার নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় খরচ করবেন নেতারা। এবার ঢাকার ইসলামপুর পাইকারি কাপড়ের বাজারেও কম মূল্যের জাকাতের কাপড়ই বেশি বিক্রি হয়েছে।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের বেশির ভাগ এবারও নিজ নিজ এলাকাবাসীর সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়বেন। অনেকে ঈদের পরদিন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের এ আয়োজনের পাশাপাশি রাজধানীতেও চলবে অনেক ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় পর্ব। রেওয়াজ অনুসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদের দিন গণভবনে দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এবার কারাগারে ঈদ করতে হচ্ছে। তার অনুপস্থিতিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র নেতারা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন নেতাকর্মী ও জনগণের সঙ্গে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের নানা আয়োজনেও থাকবে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়।

রাজধানীর ১৬টি সংসদীয় আসনসহ ঢাকার ২০টি আসনেই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা কমবেশি দেখা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এগিয়ে। বর্তমান এমপিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক নতুন প্রার্থীরা ব্যাপক গণসংযোগে নেমেছেন। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। অনেক জায়গায়ই তাদের ঈদ শুভেচ্ছার ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে।

ঢাকায় বিএনপি নেতাদের এমন তৎপরতা খুব প্রকাশ্য না হলেও ভেতরে ভেতরে সক্রিয় তারাও। সরকারি মহলের হামলা-মামলা এড়িয়ে অনেকটা গোপনে নির্বাচনী প্রস্তুতিও নিচ্ছেন অনেকে। গণসংযোগ করছেন, নীরবে-নিভৃতে দিচ্ছেন ঈদ উপহার। দলীয় নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণে তদবির-লবিংয়েও ব্যস্ত কেউ কেউ। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে পোস্টারের ওপর এখন শোভা পাচ্ছে ঈদ শুভেচ্ছার পোস্টার।

এবার চট্টগ্রামের ১৬ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রায় সব প্রার্থীই রমজান মাসের শুরু থেকেই ব্যতিক্রমী কিছু করে চলেছেন।

রাজশাহী জেলার ৫টি সংসদীয় আসনেই চলছে মাসব্যাপী ইফতার আয়োজন। একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় এই ইফতার আয়োজন নিয়ে পাল্টাপাল্টিও হচ্ছে অনেক স্থানে।

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় আওয়ামী লীগদলীয় বর্তমান সাংসদ ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকে ঈদের আগে থেকেই এলাকায় অবস্থান করছেন। অবশ্য এবার আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাপার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে অধিকাংশই নতুন মুখ।

সিলেট বিভাগের চার জেলার ১৯ আসনে শতাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে সক্রিয়। এ তালিকায় দুই ডজনের বেশি প্রবাসী রয়েছেন। তাদের অনেকেই নিয়মিত দেশে আসার পাশাপাশি সমর্থকদের মাধ্যমে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। বিতরণ করছেন ঈদ উপহার।

খুলনার ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে মহানগরীর বাইরের আসনগুলোয় নির্বাচনী তৎপরতা বেশি। রংপুরের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে বড় বড় ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে নিজেদের উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন।

ময়মনসিংহের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বড় বড় ইফতার পার্টি করছেন। এ আয়োজনে এক প্রবাসী প্রার্থী ৭৯৫টি মসজিদে দুবাই থেকে আনা আট টন খেজুর বিতরণ করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন।
সূত্র : সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়