আশিক রহমান : প্রস্তাবিত বাজেটে প্রকৃত অর্থে শিক্ষাখাতে কোনো ব্যয় বাড়েনি বলেই মনে করেন শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। আমাদের অর্থনীতির সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, শিক্ষাখাতে গতবারের তুলনায় এ বছর আড়াই হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, এর মধ্যে এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নতুন করে এমপিওভুক্ত হচ্ছে। সরকারের নির্বাচনকালীন প্রতিশ্রুতি এটা। এই এমপিওভুক্তির পেছনে প্রচুর অর্থ খরচ হবে। বছরের পর বছর ধরে বলছি, শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি আমরা। আসলেই কী তাই? আমার মনে হয় না। প্রকৃত অর্থে শিক্ষা খাতের বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ বাড়েনি, গতবছরের মতোই থাকছে।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীব্যাপী গৃহীত যে বাজেটের ২৫ শতাংশ অথবা জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করতে হবে। ২০০০ সালে আফ্রিকার ‘ডাকার’ ডিক্লেরেশনের ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছিল। সেখানে বলা আছে, পর্যায়ক্রমে জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়ে নিতে হবে। সেদিকে তো আমরা যাচ্ছিই না, বরং ২ শতাংশের আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছি। আর কোনো এক বছরে শিক্ষাখাতে বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ হয়েছিল, এখন আমরা নিচে নেমে আসছি। প্রযুক্তি ও শিক্ষাখাত মিলিয়ে ১৪.৬ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ শ্রমিক বিদেশে কাজ করতে যায়। অনেক কষ্ট তারা করেন। বিমানবন্দর, রাস্তাঘাট পরিষ্কারের মতো কাজগুলো করে থাকেন তারা। এই লাখো শ্রমিক মিলে বছরে ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠান, আর তার তিন ভাগের একভাগ ডলার নিয়ে যাচ্ছে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান থেকে আসা ম্যানেজাররা। কেন এমনটি হচ্ছে? কারণ এ দেশে কাজ করা বিদেশিরা অত্যন্ত দক্ষ। কিন্তু তাদের মতো সুদক্ষ ব্যবস্থাপক তৈরি করতে পারিনি আমরা। আমরা আমাদের নাগরিকদের না দিতে পারছি ভাষা জ্ঞান, না পারছি জাগতিক জ্ঞান দিতে। জগৎ ও জীবন দক্ষতাও আমরা আমাদের নাগরিকদের শেখাতে পারছি না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৭০ শতাংশের মতো মানুষ এখন শিক্ষিত। ২০৩০ বা ২০২৫ সালের মধ্যেই আমরা শতভাগ শিক্ষিত মানুষের জাতিতে পরিণত হবো। শিক্ষার উপর তখন যে চাপ পড়বে তা সামাল দেওয়ার জন্য এখন থেকেই আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষাখাতে প্রয়োজনীয় ব্যয় বরাদ্দ দিতে হবে। শিক্ষকের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ থাকতে হবে। একজন শিক্ষক যদি সুস্থির জীবন না পান তাহলে পাঠকক্ষে কীভাবে তিনি শিক্ষার্থীদের ভালো পাঠ দেবেন? শিক্ষা বরাদ্দ যেন যথাযথভাবে প্রয়োজনীয় জায়গায় ব্যবহার করা হয়, এটাও নিশ্চিত করা জরুরি বলেও মনে করেন এই শিক্ষাবিদ।
আপনার মতামত লিখুন :