শিরোনাম
◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ নির্বাচনের মাঝেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১২ জুন, ২০১৮, ০৯:৫৪ সকাল
আপডেট : ১২ জুন, ২০১৮, ০৯:৫৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঢাকা ছাড়তেই যত দুর্ভোগ

ডেস্ক রিপোর্ট: ঈদযাত্রায় ঢাকা ছাড়তে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। ব্যস্ত প্রবেশপথগুলো পেরোনোর পর রাজধানীর উপকণ্ঠের যানজটপূর্ণ মহাসড়কে মহাদুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। ঈদযাত্রার মূল স্রোত শুরুর আগেই রাজধানী ছাড়তে ও উপকণ্ঠ এলাকা পেরোতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। ভিড় বাড়লে সময় আরও বেশি লাগবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজধানী থেকে বেরোনোর চার পথ- টঙ্গী সেতু, গাবতলী সেতু, বাবুবাজার সেতু ও কাঁচপুর সেতু। টার্মিনালগুলো থেকে নগরীর সীমানা চিহ্ন হিসেবে পরিচিত এ সেতুগুলোতে যেতেই এক ঘণ্টার মতো সময় লাগছে। সেতু পেরোনোর পরও স্বস্তির পরিবেশ নেই; বরং শিল্পঘন উপকণ্ঠে দুর্ভোগ আরও বেশি। কাঁচপুর থেকে মেঘনা সেতু এবং ভুলতা, টঙ্গী সেতু থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা, গাবতলী সেতু থেকে চন্দ্রা মোড়, বাবুবাজার থেকে মাওয়া- এই পাঁচ পথ রাজধানীকে ৬৩ জেলার সঙ্গে যুক্ত করেছে। ঢাকা ছাড়ার এই পাঁচ পথে যানবাহনের চাপ সারাবছর ধরেই থাকে। গাড়ি চলে ধীরে। ঈদের ব্যস্ত সময়ে কখনও কখনও যানজটে স্থবির হয়ে যায় এই পাঁচ রাস্তা। উন্নয়নকাজ, রাস্তার দু'পাশজুড়ে অবৈধ বাজার, শিল্প এলাকার পার্কিংয়ের কারণে পথচলা দায়। উন্নয়নকাজ ৮ জুন থেকে বন্ধ থাকলেও টানা বৃষ্টি দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম সোমবার সওজের গণশুনানিতে এ চিত্র তুলে ধরেন। সড়ক পরিবহন সচিব নজরুল  ইসলাম ও সওজের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসানও স্বীকার করেছেন, ঢাকার উপকণ্ঠের পথগুলো ব্যস্ত, ভাঙাচোরা। খোরশেদ আলম বলেন, ঢাকা থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত কোনো মহাসড়কের পাশে এক ফুট জায়গা ফাঁকা নেই। শিল্পকারখানা, বাজার, দোকানপাট, বাড়িঘর, পার্কিং গড়ে উঠেছে। রাস্তা থেকে বৃষ্টির পানি নেমে যেতেও নেই কোনো জায়গা। এরপরও ভালো সড়কের আশা করাই বোকামি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক :সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর সীমানা পেরিয়ে উপকণ্ঠ এলাকায় সড়কে দুরবস্থা লেগেই রয়েছে। স্বস্তি নেই কাঁচপুর সেতু পেরিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতু পর্যন্ত। শিল্পঘন এলাকায় রাস্তার দু'পাশে পার্কিং, গাড়ির চাপ ও দুই লেনের সেতুর কারণে ব্যস্ততম এ মহাসড়কে যানজট লেগেই আছে। কাঁচপুর থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার পথে সময় লাগছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। দাউদকান্দি সেতু এলাকাও যানজটপ্রবণ একই কারণে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট নিরসনে গত ২৭ মে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি সভায় জানান, মেঘনা ও গোমতী সেতুতে সমস্যা রয়েছে। সেগুলো আধুনিকায়ন প্রয়োজন।

গত ৯ মের সভায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাতটি পয়েন্টকে যানজটপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর পাঁচটিই ঢাকার উপকণ্ঠ অংশে। রাজধানী থেকে বেরিয়েই এসব পয়েন্টে যানজটে পড়তে হয়। সড়ক পরিবহন সচিব জানিয়েছেন, যানজটপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবারের ঈদে যানজট সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে তিনি আশাবাদী।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী সমকালকে বলেছেন, যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার থেকে কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত রাস্তা আট লেনে উন্নীত করা হয়েছে। তারপরও যানজট লেগে আছে। এর কারণ, সড়কে শৃঙ্খলা নেই। সেতু দুই লেনের, এ কারণে সেতু পার হতেই ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। সেতুর পর রাস্তা চার লেনের হলেও তাতে বারোয়ারি যান চলে মহাসড়কে। রিকশা, অটোরিকশা, ইজিবাইক- সব চলে মহাসড়কে। এ কারণে যানজট লেগেই লাগে।

তিনি জানান, রাজধানী থেকে গোমতী সেতু পর্যন্ত সড়ক ব্যস্ত এলাকা। শিল্প এলাকার গাড়ি রাস্তার পাশে রাখা হয়। এতে দুর্ভোগ হচ্ছে। মহাসড়ক চার লেনের হলেও সেতুগুলো দুই লেনের। এ কারণে টোল প্লাজায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সচিব নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যমান দুই লেনের সেতুর পাশে নতুন তিনটি সেতুর কাজ শেষ হবে। কাজ শেষ হলে আর দুর্ভোগ থাকবে না।

ঢাকা-উত্তরবঙ্গ :গাবতলী সেতুর পর থেকে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের আমিনবাজার থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত রাস্তায় ভাঙাচোরা না থাকলেও সড়কে গাড়ির চাপ অনেক বেশি। চন্দ্রার পর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। এ কারণে এ অংশে যানজটের দুর্ভোগ লেগেই রয়েছে। এ পথই উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলাকে ঢাকার সঙ্গে যুক্ত করেছে। গত ঈদে এ মহাসড়কে ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট ছিল। চার লেন ও ফ্লাইওভারের কাজ শেষ না হওয়ায় এবারও একই রকম ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে।

ঢাকা-রংপুর পথের 'আগমনী পরিবহন'-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, গাবতলী থেকে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত রাস্তা খারাপ নয়। তবে শিল্প এলাকার পার্কিং ও গাড়ির চাপে বাস ধীরে ধীরে চলে। চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত নির্মাণাধীন চার লেনের কারণে ঢাকা থেকে রংপুর যেতে ১০ ঘণ্টা সময় লাগে। গাবতলী থেকে চন্দ্র হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটারে লাগে পাঁচ ঘণ্টা। চাপ বাড়লে ১০ ঘণ্টাও লাগে।

ঢাকা-দক্ষিণবঙ্গ :দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ বাস ঢাকা থেকে গাবতলী সেতু হয়ে সাভার পেরিয়ে মানিকগঞ্জের আরিচা হয়ে চলাচল করে। উত্তরবঙ্গের মতো সাভার পর্যন্ত একই দুর্ভোগ সইতে হয় দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের। এরপর আরিচা ঘাটে পদ্মা নদী পারাপারে ফেরি পার হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। কখনও কখনও সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে শুধু ফেরির সিরিয়াল পেতেই। গত শুক্রবারও ১০ কিলোমিটার যানজট ছিল ঘাট এলাকায়।

বরিশাল বিভাগসহ দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের একটি বড় অংশ বাবুবাজার সেতু হয়ে মাওয়া ঘাট দিয়ে ঢাকা ছাড়ে। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। এ মহাসড়কের পাশে শিল্প এলাকা নেই। পার্কিং সমস্যা নেই। কিন্তু নির্মাণকাজ ও স্থানে স্থানে বাজারের কারণে গাড়ির গতি কম। ঘাটে অপেক্ষার ভোগান্তিও রয়েছে।

ঢাকা-সিলেট :ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রীদেরও কাঁচপুর সেতু পেরিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা হয়ে যেতে হয়। কাঁচপুর থেকে ভুলতার দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার। কিন্তু পুরো পথের দু'পাশেই শিল্প এলাকা। সিলেটের যাত্রী ও চালকরা জানিয়েছেন, ব্যস্ত সড়কে এমনিতেই গাড়ি চলে ধীরে। ভুলতায় ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজের কারণে গাউছিয়া মার্কেটের সামনে ব্যস্ত সড়কে দুই লেনে যান চলাচল করে। তাতে ১১ কিলোমিটার পথ যেতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ আপাতত বন্ধ থাকলেও কাঁচপুর থেকে ভুলতা পর্যন্ত গাড়ির গতি বাড়েনি। ভুলতায় যানজটেও উনিশ-বিশ হয়নি। ঈদযাত্রায় গাড়ির চাপ বাড়লে যানজট বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ :টঙ্গী সেতুর পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা অংশে প্রতিবছরই দুর্ভোগ হয়। টঙ্গী থেকে চৌরাস্তা ১৩ কিলোমিটার পথ পার হতে এখনই সময় লাগছে তিন থেকে চার ঘণ্টা। গতবার ঈদের সময় আট ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে। এবারও একই আশঙ্কা রয়েছে। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণের কাজ চলছে এই ১৩ কিলোমিটার পথে। দু'পাশে ড্রেন নির্মাণকাজ চলছে। মাটির কাজ আপাতত বন্ধ থাকলেও যানজট লেগেই আছে টঙ্গী থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত। কখনও কখনও পুরো রাস্তায় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। জলাবদ্ধতাও যানজটের একটি কারণ।সূত্র: সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়