সাইদুর রহমান: পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা অনেক পণ্যই এমন আছে যেগুলোর মধ্যে শুকর, মৃত পশু বা বিধর্মীদের হাতে জবেহকৃত পশুর চর্বির সংমিশ্রণ থাকে। সেসব পণ্য ব্যবহার করা যাবে কী কিংবা উক্ত চর্বিগুলো যদি সরাসরি সাবান ইত্যাদিতে ব্যবহার না করে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ভিন্ন পদার্থে রূপান্তরিত করার পর সাবানে ব্যবহার করা হয়, তাতে হুকুমের মধ্যে কোন পরিবর্তন হবে কিনা ?
এর সমাধান হলো, কোন বস্তুতে শুকরের চর্বি বা শুকর ব্যবহার করা হয়, তা হলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট ম্যানেজারের থেকে জেনে নেয়া উচিত। তবে আমরা যদি একটি ইসলামের মূলনীতি জেনে রাখি, তা হলে এসবের হুকুম আমরা নিজেরাই বের করে নিতে পারব। মূলনীতি হল- “হারাম কোন বস্তু যেমন শুকর ইত্যাদির যদি এমনভাবে রিফাইন করা হয় যে, এসবের কোন মৌলিকত্ব বাকি না থাকে, তা হলেও উক্ত বস্তু ব্যবহার করা জায়েয আছে।
আর যদি সেসব হারাম বস্তুর মৌলিকত্ব বাকি থাকে, তা হলে উক্ত বস্তু যাতে মিশ্রিত করা হবে, তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। -দেখুন-নিহায়াতুল মুহতাজ লির রামালি-৮/১২
আরেকটি মূলনীতি হলো, মদকে যখন লবণ বা অন্য কিছু দ্বারা ছিরকা বানিয়ে ফেলা হয়, তখন তা হালাল হয়ে যায়।-ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৪১০, মাজমাউল আনহুর-৪/২৫১, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৭/২১৮
এমনিভাবে সাবানের সাথে মিশ্রিত করার কারণে যদি চর্বির মৌলিকত্ব হারিয়ে যায় অর্থাৎ চর্বি পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন পদার্থের রূপ নেয়, তা হলেও একই হুকুম হবে। যেমন বিড়াল-ইঁদুর ইত্যাদি হারাম জন্তু লবণের খনিতে পড়ে যদি লবণে পরিণত হয়, তা হলে তা আর হারাম থাকে না।
আর এই মৌলিকত্ব পরিবর্তনের সীমারেখা হলো কোন বস্তুর মধ্যে তার নিজস্ব স্বভাবধর্ম অবশিষ্ট না থাকা। যেমন মদ ছিরকা হয়ে যাওয়ার পর উক্ত মদের মধ্যে তার নিজস্ব স্বভাবধর্ম যেমন মাদকতা ইত্যাদি বাকি থাকে না।
এরূপ পরিবর্তনকে রাসায়নিক পরিভাষায় কেমিক্যাল চেইঞ্জ বলে। এ পরিবর্তন কোন কেমিক্যাল মিশ্রিত করার কারণে কিংবা প্রাকৃতির কারণেও হতে পারে। উল্লেখ্য যে, ফিজিক্যাল চেইঞ্জ যেমন পানি বরফ হওয়া, বাষ্প হওয়া এটি মৌলিকত্ব এ মূলনীতির উপর ভিত্তি করে বুঝে নিন বিদেশী পণ্য ব্যবহার করার বিধান। যদি পরিবর্তনের অন্তর্ভুক্ত নয়।
শুকর বা অন্য কোন হারাম বস্তু মিশ্রিত হয়, আর মিশ্রিত করার আগে তাকে এমনভাবে প্রসেসিং করে যে, হারাম বস্তুটির মৌলিকত্ব বাকি থাকে না, তা হলে তা ব্যবহার করা জায়েয হবে, আর যদি মৌলিকত্ব বাকি থাকে তা হলে তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। আশা করি আপনিই প্রশ্নে উল্লেখিত সাবানসমূহের বিধান বের করে নিতে পারবেন। তথ্যসূত্রঃ ফাতহুল কাদীর ১/১৭৬, কিফায়াতুল মুফতী ২/২৮০-৮৪
আপনার মতামত লিখুন :