সুশান্ত সাহা : রাজধানীর ভাটারা এলাকায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শরিফুল ইসলাম (২৮) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশের ভাষ্য, নিহত শরিফুল গত বছর বনানীতে জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী সিদ্দিক মুন্সি (৫৫) এবং এ বছর বাড্ডার মাছ ব্যবসায়ী আবুল বাশার ওরফে বাদশা (৩২) হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন।
গত রবিবার রাতে ভাটারা থানার ১০০ ফিট গরুর হাট এলাকায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ এই ঘটনা ঘটে। তবে ওই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ওই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ব্যাপারে সোমবার ভোর ছয়টার দিকে ভাটারা থানার এসআই মোবারক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এ ঘটনার পর ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের বিস্তারিত জানানো হয়নি। নিহত যুবকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা রয়েছে কি না, তাও জানা নেই। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রবিবার গভীর রাতে চিকিৎসকরা শরিফুলকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বন্দুকযুদ্ধের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপকমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান। তিনি জানান, শরিফুল মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। এ ছাড়া তিনি জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী সিদ্দিক মুন্সি ও মাছ ব্যবসায়ী আবুল বাসার ওরফে বাদশা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সিদ্দিক মুন্সি হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার আসামিরা ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার ঘটনায় শরিফুলের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছিলেন।
ডিবি উপকমিশনার দাবি করেন, মাদকবিরোধী অভিযানে শরিফুল গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু ঈদের আগ মুহূর্তে বিকাশে টাকা ছিনতাই, চাঁদাবাজি, হত্যার মতো ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল তার।
মশিউর রহমান বলেন, টার্গেট কিলিং বা পরিকল্পিত হত্যার জন্য কয়েকজন ভাড়াটে খুনি জড়ো হয়েছে এমন খবর পেয়ে ডিবির একটি দল রবিবার গভীর রাতে বাড্ডা এলাকায় যায়। সেখানে একটি টং ঘর থেকে বেরিয়ে ওই সন্ত্রাসীরা দ্রুত দৌড় দেয়। এ সময় ডিবির দলকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা গুলি ছোড়ে। ডিবিও পাল্টা গুলি চালায়। পরে গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত অবস্থায় একজনকে পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তার পরিচয় শরিফুল ইসলাম বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি গুলি ও একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।
গত বছরের ১৪ নভেম্বর রাজধানীর বনানীতে এস মুন্সি ওভারসিজ নামে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন সিদ্দিক মুন্সি। ওই সময় দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত হন প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মচারী। পুলিশ ওই হত্যাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকা-’ বলে উল্লেখ করেছিল। কারণ, সিদ্দিক মুন্সি কারও কাছ থেকে টাকা নেননি। তার কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায়নি। স্বজনেরা দাবি করেছিলেন, চাঁদা না দেওয়ায় সিদ্দিক মুন্সিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মেরুল বাড্ডার মাছ বাজার এলাকায় দিনে-দুপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন মাছ ব্যবসায়ী আবুল বাসার ওরফে বাদশা। তাকে হত্যা করে অজ্ঞাতপরিচয় চারজন সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় নুরুল ইসলাম ওরফে নুরী (৩৫) নামের একজনকে জনতা ধাওয়া করে হাতিরঝিলে অস্ত্রসহ ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। এর পরদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে বাড্ডার সাতারকুল এলাকায় নুরুল ইসলাম ডিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। নুরুল ইসলাম জনশক্তি রপ্তানিকারক সিদ্দিক মুন্সি হত্যায়ও জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছিল পুলিশ।
আপনার মতামত লিখুন :