নিজস্ব প্রতিবেদক : রমজান মাসে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত লেনদেন চললেও ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাজ করতে হয় বিকেল ৪টা পর্যন্ত। অফিস ছুটির পর বাসায় ফেরার তাড়া থাকে সবার। রাস্তায় যানজট, বাসে ওঠার জন্য চলে প্রতিযোগিতা। ভিড় এড়াতে কেউ কেউ নিচ্ছেন বাড়তি পয়সা খরচ করে উবার, পাঠাওসহ বিভিন্ন ধরনের রাইড শেয়ারিং সেবা। এর পরও বিরাট একটি যাত্রীগোষ্ঠীর ভরসা পাবলিক বাস।
গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে অফিস শেষে অফিসপাড়া খ্যাত মতিঝিল থেকে অন্যান্য যাত্রীর সঙ্গে একটি বাসে উঠে পড়েন এ প্রতিবেদকও। উদ্দেশ্য অফিস শেষে ঘরে ফেরা মানুষের বাসযাত্রা পর্যবেক্ষণ।
ঠিক বিকেল ৩টা ৫৯ মিনিটে মতিঝিল বাস কাউন্টার থেকে যাত্রী নিয়ে চলতে শুরু করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস গ্রিন ঢাকা। বাসটি সিটি সেন্টারের সামনে দিয়ে বক চত্বর হয়ে রাজউক এভিনিউ পর্যন্ত আসতে সময় নেয় চার মিনিট। এরপর বাস আর চলে না। গুলিস্তানের জ্যাম এসে ঠেকেছে রাজউক কার্যালয় ছাড়িয়ে স্টেডিয়ামের পেছনের দিকের গেট পর্যন্ত। অন্যান্য গাড়ির পেছনে এসে দাঁড়াল বাসটি। কিন্তু এক চুলও এগোচ্ছে না। অগত্যা যাত্রীদের রোল উঠতে থাকে, ‘গাড়ি ডানে ঘোরাও, পল্টন দিয়ে যাও। গুলিস্তান দিয়ে গেলে বাসায় গিয়ে আর ইফতার করতে হবে না।’ যাত্রীদের চাপাচাপিতে চালকের সহকারী বাস কর্তৃপক্ষের কোনো একজন কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে কল দিলেন। কিন্তু ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কোনোভাবেই রুট পরিবর্তন করতে বারণ করলেন ওই কর্মকর্তা। একপর্যায়ে যাত্রীদের সঙ্গে ওই কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলেন চালকের সহকারী।
এক যাত্রী ফোন নিয়ে বলেন, ‘আমি পুলিশে চাকরি করি, রুট পরিবর্তন করলে ট্রাফিক পুলিশ যদি জরিমানা করে আমি এর দায় নেব।’ বিকেল ৪টা ৮ মিনিটে গাড়ি ডানে মোড় নিয়ে দৈনিক বাংলার দিকে রওনা হলেন চালক মো. ইছহাক। এই সিগন্যালেও পুরো সড়কে জ্যাম লেগে আছে। এর মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাসের সামনের গ্লাস দিয়ে শুধু সারি সারি প্রাইভেট কার এবং বাস দেখা যাচ্ছে। একটু একটু করে বাস এগোচ্ছে। বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে বাসটি বাঁয়ে মোড় নিয়ে পল্টন অভিমুখে যেতে শুরু করে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনের ওই সড়কটিতে সব সময়ই জ্যাম লেগে থাকতে দেখা যায়। গতকালও এর ব্যতিক্রম ছিল না। ৪টা ২৮ মিনিটে বাস মসজিদের সামনে থেকে পল্টন মোড়ের সিগন্যালে দাঁড়ায়। বৃষ্টি তখন অনেকটা বেড়েছে। গাড়ির গতির কোনো পরিবর্তন নেই। ৪টা ৩৭ মিনিটে বাস পল্টন মোড় পেরিয়ে বিজয়নগরের দিকে এগোতে শুরু করল। এর মধ্যে পল্টন কাউন্টার থেকে পাঁচ-ছয়জন যাত্রী উঠল বাসে। তখন বাসের সব আসনই পূর্ণ। যাত্রীরা দাঁড়িয়ে যেতেও রাজি। কালের কণ্ঠ
বিজয়নগরের ওই সড়কটিতেও পা ফেলার মতো কোনো ফাঁকা জায়গা নেই, যেন গাড়ি ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে চলছে। বাসের মিটারের কাঁটা তখনো পর্যন্ত ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটারের ঘর ছাড়ানোর সুযোগ পায়নি। ঠিক বিজয়নগর মোড়ে এসেও সিগন্যালে বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে ছিল বাসটি। ৪টা ৪৬ মিনিটে বাস বিজয়নগর মোড় পেরোলেও খুব একটা সুবিধা হলো না। কাকরাইল সিগন্যালের শেষ বাসটিও তখন বিজয়নগরের মোড়েই দাঁড়িয়ে ছিল। তিন মিনিট পর সামনের গাড়িগুলো নড়তেচড়তে শুরু করল। কাকরাইল মোড় পেরোতে বেজে গেল ৪টা ৫২ মিনিট।
আপনার মতামত লিখুন :