শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ১১ জুন, ২০১৮, ০৭:৫২ সকাল
আপডেট : ১১ জুন, ২০১৮, ০৭:৫২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দেশের ক্ষতি বছরে ৫০০ কোটি টাকা

ডেস্ক রিপোর্ট : অনলাইন বিজ্ঞাপনের নামে বছরে ৫০০ কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া। দেশে সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছাড়াও বিলের ওপর ৪ শতাংশ উেস কর কাটা হয়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া বিজ্ঞাপন এখনো নিয়মের বাইরে রয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এসব প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু বিদেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের স্বীকৃত কোনো অফিস কিংবা লেনদেনের বৈধ মাধ্যম না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কর আদায় কিংবা হুন্ডি প্রতিরোধ কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে সরকার এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান।

আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের ৩৫ শতাংশ উেস কর নির্ধারণ করা হয়েছে। বত্তৃদ্ধতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভার্চুয়াল ও ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে প্রচুর আয় করছে, কিন্তু তাদের কাছ থেকে আমরা তেমন একটা কর পাচ্ছি না। ভার্চুয়াল ও ডিজিটাল লেনদেনের বিষয়টি তুলনামূলক নতুন বিধায় এসব লেনদেনকে করের আওতায় আনার মতো পর্যাপ্ত বিধান এত দিন আমাদের কর আইনে ছিল না।’

বাজেটের প্রস্তাব কিভাবে বাস্তবায়ন হবে জানতে চাইলে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান গতকাল শনিবার  বলেন, ‘গুগল, ফেসবুকের কোনো অফিস বাংলাদেশে এখনো চালু হয়নি। তারা আমাদের টেকনিক্যাল ধোঁকা দিয়ে আমাদের দেশ থেকে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এবার আমরা তাদের করের আওতায় এনেছি। আমাদের বাজেটের নির্দেশনা তারা মানতে বাধ্য। না মানলে চীনসহ অন্যান্য দেশের মতো আমরাও তাদের সাইট এ দেশে বন্ধ করে দেব।’

অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তারা আমাদের রক্ত চুষে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে কার্যক্রম থাকলে অবশ্যই তাদের কর দিতে হবে। বাজেট সংসদে পাস হওয়ার পর এটি আইন, তা মানবে তারা বাধ্য।’
ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, দুই বছর আগে অনলাইনে বিজ্ঞাপনের বাজার ছিল ২৫০ কোটি টাকার। চলতি বছর তা ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০ শতাংশ বিজ্ঞাপন সরাসরি পোর্টালগুলোতে বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে। বাকি ৮০ শতাংশ বিজ্ঞাপনের মধ্যে ফেসবুক পায় ৩০ শতাংশ, গুগল পায় ২৫ শতাংশ ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান জিঅ্যান্ডআর পায় ২০ শতাংশ। বাকি ৫ শতাংশ অন্যরা পায়। ফেসবুক ও গুগল অর্থ পায় মূলত হুন্ডির মাধ্যমে, কিছু দেওয়া হয় ব্যক্তিগত আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডে। এতে সহায়তা করছে কিছু নামসর্বস্ব বিজ্ঞাপনী সংস্থা। জিঅ্যান্ডআর দেশীয় প্রতিষ্ঠান বলে তাদের বিজ্ঞাপনদাতারা প্রচলিত নিয়ম মেনেই অর্থ পরিশোধ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য তাদের অনুমোদন নিতে হয় না। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো এজেন্ট বিজ্ঞাপনের ব্যয় পরিশোধের জন্য টাকা পাঠাতে চাইলে এই অনুমোদন লাগে। ‘কেস টু কেস’ ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ এই অনুমোদন দিয়ে থাকে। স্কয়ার গ্রুপের বিজ্ঞাপনী সংস্থা মিডিয়াকমকে এ রকম কয়েকটি বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য টাকা বিদেশে পাঠানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বাজেটের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য একটা ম্যাকানিজম ঠিক করতে হবে। এটা আমার কাছেও স্পষ্ট নয়, এটা কি ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের জন্য না কি ভাইবারে কল করার জন্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এবং কিভাবে আদায় করা হবে সে বিষয় নির্ধারণ করতে হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে।’

বড় বড় কম্পানির মধ্যে ডিজিটাল মিডিয়াতে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে বলে জানালেন বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অনেক ব্র্যান্ড আছে যারা তাদের ক্যাম্পেইন করছে শুধু সোশ্যাল মিডিয়াকেন্দ্রিক। বড় কম্পানিগুলো তাদের বিজ্ঞাপন বাজেটের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অনলাইন মিডিয়াতে খরচ করছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যয়ের কোনো স্বীকৃত পরিসংখ্যান নেই। কারণ এটি ব্যাংকিং, নন-ব্যাংকিং উভয় চ্যানেলেই হয়ে থাকে। কেউ বলেন ২০০ কোটি, কেউ বলেন ৫০০ কোটি টাকা বছরে এই খাতে ব্যয় হয়।’

তিনি জানান, বড় কম্পানিগুলো সাধারণত তাদের ডিজিটাল মিডিয়া বায়িং এজেন্সির মাধ্যমে এসব ব্যয় করে থাকে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেয়। তাদের নিয়মের মধ্যে এনে রাজস্ব আদায় করা কঠিন হবে না। কিন্তু সমস্যা হবে যারা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছে না তাদের নিয়ে। যারা ১০ ডলার, ২০ ডলার করে ব্যয় করছে তাদের সংখ্যা বিপুল, কিন্তু তাদের হিসাবের মধ্যে আনা বড় চ্যালেঞ্জ।

গ্রে অ্যাডভার্টাইজিং বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা অংশীদার সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন বলেন, ‘দেশে ডিজিটাল মিডিয়া বায়িং কত টাকার হচ্ছে এটা বলা মুশকিল। আমি যতদূর জানি, ফেসবুক ঢাকায় কার্যালয় চালু করতে যাচ্ছে।’ মেঘনা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (বিপণন) আসিফ ইকবাল বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল মিডিয়াতে খুব একটা বিজ্ঞাপন দিই না। ন্যূনতম উপস্থিতি রাখতে আমরা যেটুকু করি তা আমাদের এজেন্সির মাধ্যমে করি। তবে এই খাতে রাজস্ব আদায় করার উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’

গুগল, ইউটিউব এ দেশে কার্যালয় স্থাপন নিয়ে তারা কাজ করছে জানিয়ে এই মার্কেটিং এবং ব্র্যান্ড প্রফেশনাল বলেন, ‘বাংলাদেশ তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজার। যেকোনো সময় তারা বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে। কিন্তু ইউটিউব থেকে আমাদের ফ্রিল্যান্সারদের যে রেটে পেমেন্ট দেওয়া হয় তা এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় খুবই কম। অথচ এখানে তাদের প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে ইউটিউবের ব্যবহার বিশ্বের সর্বোচ্চ। শুধু তাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ই নয়, বাংলাদেশের রেট বাড়ানোর জন্যও সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।’
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ‘ফেসবুক, ইউটিউবসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াকে সরাসরি ট্যাক্সের আওতায় আনা যাবে না, কারণ বাংলাদেশে তাদের কোনো উপস্থিতি নেই। যারা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে কিংবা যাদের মাধ্যমে দিচ্ছে, তাদেরকে হয়তো করের আওতায় আনা হবে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের হিসাব রাখা যত সহজ, অনলাইন মিডিয়াতে বিজ্ঞাপনের হিসাব রাখা কঠিন। সব বিজ্ঞাপন সবাই দেখতে পাবে না। এ জন্য তাদেরকে বাংলাদেশে অফিস চালু করতে বাধ্য করা যেতে পারে।’

এদিকে বছরে ডিজিটাল বায়িংয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে উল্লেখ করে মিডিয়াকম লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) অজয় কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবের কাছ থেকে কর আদায় কঠিন নয়। আমরা তাদের প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপনের জন্য যে ডলার পাঠাই তা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে যায়। আমরা মাসিক বিজ্ঞাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুমোদনের জন্য আবেদন করি। তারা অনুমোদন দেওয়ার সময়ই ট্যাক্সটা ইমপোজ করে দিতে পারে। আমরা সে অনুযায়ী টাকা নেব। কেউ কেউ ব্যক্তিগত ক্রেডিট কার্ড, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠায়। কিন্তু আমরা অন্য কোনো মাধ্যমে টাকা পাঠাই না। গুগল, ফেসবুকের কাছে আমরা ৩০ দিনের ক্রেডিট সুবিধা পাই। তারা পরবর্তী মাসের ২ তারিখের মধ্যে বিল সাবমিট করে। তখন আমরা পেমেন্ট দিই। এই সময়টা আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের জন্য লাগে।’
দেশের মধ্যে বিদেশি মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করার দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছে দেশের সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নোয়াব। ২০১৬ সালের শেষ দিকে দেশের বিজ্ঞাপনশিল্প ও অভিনয়শিল্পীরা আন্দোলন শুরু করেছিলেন ভারতীয় কিছু সম্প্রচার মাধ্যমে বিজ্ঞাপন বন্ধের। ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি বাংলাদেশে ডাউনলিংককৃত বিদেশি টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের নির্দেশ দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। তবে ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকরাকরা নিজেরাই ওই সব বিজ্ঞাপন প্রচার করায় সেখানকার সম্প্রচার মাধ্যমে বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন বন্ধ করা যায়নি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা বলছেন, গুগল, ফেসবুক বা ইউটিউব যেহেতু বিজ্ঞাপন সেবা দিয়ে অর্থ উপার্জন করছে সেহেতু তাদেরকেই ওই আয়ের ওপর কর পরিশোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে তারা যখন বিজ্ঞাপনী এজেন্টের কাছ থেকে বিজ্ঞাপন প্রচার বাবদ টাকা নিচ্ছে তখনই কর ও ভ্যাট হিসাব করে সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা। আর এ কাজটি ব্যাংকের মাধ্যমে হলে ব্যাংক এই কর ও ভ্যাটের টাকা কেটে রেখে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে বাকি টাকা জমা করে দেবে। কিন্তু ব্যাংকে এ ধরনের কোনো বিজ্ঞাপন প্রচারের বিপরীতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অর্থ নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। সূত্র : কালের কণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়