শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১০ জুন, ২০১৮, ০৬:৩১ সকাল
আপডেট : ১০ জুন, ২০১৮, ০৬:৩১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রোজায় দেশব্যাপী ইফতার মাহফিলগুলোতে নির্বাচনী বাতাস বইছে

উম্মুল ওয়ারা সুইটি : ডিসেম্বরে একাদশ সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের আগে এটি শেষ রোজা এবং ঈদ। সে হিসেবে নির্বাচনের বাকি মাত্র সাত মাস। দেশে বইছে নির্বাচনী বাতাস। তাই রাজনৈতিক দলগুলো ইফতারকে নির্বাচনী প্রচারণার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে। প্রতিদিনই কোন না কোন দল ও সংগঠন আয়োজন করেছে এবং শেষদিন পর্যন্ত চলবে ইফতার পার্টির। আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনীতিক, কূটনীতিক, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশাজীবীর মানুষজনরা। নিজ দলের নেতাকর্মীদের বাইরেও অংশ নিচ্ছেন সমমনা দল ও সংগঠনের নেতারাও।

এসব ঈফতার আয়োজনে এবার যুক্ত হয়েছে আলোচনা সভা সেমিনারসহ বিভিন্ন স্মরণ সভার মতো কর্মসূচি। রাজনীতিকরা বিশেষ করে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এসব অনুষ্ঠানে নিজের দলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও প্রতিশ্রুতির বানে ভাসিয়ে দিচ্ছেন বলে সংশ্লিস্টরা বলছেন। আলোচনায় উঠে আসছে জাতীয় নির্বাচন ও দলের নির্বাচনী প্রচারণা। ফলে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল, সংগঠন বা ব্যক্তিবিশেষের ইফতার পার্টির ওপরও। কে কার পার্টিতে যোগ দিচ্ছেন, তার হিসাব যেমন রাখা হচ্ছে; তেমনি কে কোথায় কি বক্তব্য রাখছেন, আলোচনা হচ্ছে তা নিয়েও। এসব ইফতার পার্টির ও পার্টিতে দেওয়া বক্তব্য ধরে পরস্পরবিরোধী বক্তব্যও দিচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা।

শুধু রাজধানীতেই নয়, ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও জমে উঠছে নির্বাচনী রাজনীতি। স্থানীয়ভাবে নেতাকর্মীরা আগামী নির্বাচনের গণসংযোগের মাধ্যম হিসেবে ইফতার পার্টিকে কাজে লাগাচ্ছেন। আর মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নেতারা এতে বিশেষভাবে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন তৃণমূলে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে চাইছে দলগুলো; তেমনি নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে এমন মহলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ও সমঝোতার বোঝাপড়াটাও সেরে নেওয়ার কৌশল নেওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মূলত দলের ঐক্য সুদৃঢ় করা, ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়ানো ও কর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা চলছে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রের পাশাপাশি মহানগর, জেলা, উপজেলা এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়ে চলছে ইফতার পার্টির আয়োজন।

বিশেষ করে ইফতার পার্টি নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় কাটছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ইতোমধ্যেই একাধিক ইফতার কর্মসূচি সম্পন্ন করেছেন। তালিকায় রয়েছে আরো কিছু ইফতার পার্টি। অন্যদিকে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়াই দলটি এরই মধ্যে কয়েকটি ইফতার পার্টি সম্পন্ন করেছে।

বিএনপিসহ সংসদের বাইরে থাকা অন্য দলগুলোর নেতাদের একই পার্টিতে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে। জোট রাজনীতির বৈঠকগুলো হচ্ছে ইফতার পার্টি কেন্দ্রিক। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার আমন্ত্রণে দলটির ইফতার পার্টিতে অংশ নেন সংসদের বাইরে থাকা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কিছু নেতারা। এরমধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টি বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা ডা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল প্রমুখ। ওই ইফতার পার্টির আগে ‘গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই’ শীর্ষক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় সরকারের সমালোচনা করা হয়।

প্রথম রোজায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচটি ইমাম ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ইফতার করেছেন জাতীয় পার্টির আমন্ত্রণে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইফতার করেন আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডি কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে। শুধু ঢাকায় নয় ঢাকার বাইরেও চলছে দলবদ্ধ রাজনৈতিক ইফতার। একই দিন দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত দোয়া ও ইফতার মাহফিলে অংশ নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এর বাইরেও দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতারাও নিজ নিজ এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ইফতার করছেন।

দলীয় সূত্র মতে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ইফতার আয়োজন না করলেও দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ছয়দিন ইফতার কর্মসূচি রেখেছেন। এরমধ্যে ২১ মে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, এতিম, প্রতিবন্ধী শিশু ও আলেমদের সঙ্গে; ২৩ মে বিচারপতি, কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তা (সামরিক-বেসামরিক) ও  পেশাজীবীদের সঙ্গে ইফতার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২ জুন আত্মীয়-পরিজন, ৪ জুন রাজনৈতিক নেতা এবং ৬ জুন আইনজীবীদের সঙ্গে ইফতার করবেন প্রধানমন্ত্রী। এসব কর্মসূচিতে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও উপস্থিত থাকছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মাসব্যাপী ইফতারের আয়োজন থাকবে মহানগর আওয়ামী লীগ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটভুক্ত দলগুলোও ইফতার কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, রমজান মাসে রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও দলের নেতাকর্মীদের আয়োজনে বিভাগীয়, জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ইফতারের আয়োজন করা হয়। এর মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি অনির্ধারিত আলোচনায় দলের বর্তমান অবস্থার চিত্র পাওয়া যায়। রমজানে রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও ইফতারে অংশ নিয়ে আমরা দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করব।

এদিকে বিএনপি রমজান মাসকে নির্বাচনী ও দলীয় রাজনীতিতে কাজে লাগাতে চায়। এজন্য দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা ইফতার আয়োজনের দিকে নজর দিয়েছেন। দলের নেতারা বলছেন, প্রকাশ্যে কোন সভা সমাবেশ অয়োজন করতে না পারলেও রমজান মাসে সেরকম বাধা পাচ্ছেন না। তাই ইফতারকে উপলক্ষ্য করে দলের কর্মী যোগাযোগ ও নির্বাচনী রাজনীতির গ্রান্ডক ওর্য়াক করে রাখতে চায়। এজন্য দলের প্রত্যেক মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা দলের প্রতিটি ইউনিটে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করছে। দলের মাঠ পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ইফতার অয়োজনের মাধ্যমে কর্মী যোগাযোগ বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে রোজার আগেই।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, দল ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন সবচেয়ে কঠিন কাজ তা গত দুই বছরে আঁচ করা গেছে। বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ নিয়েও সাংগঠনিক পুনর্গঠন শেষ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এখন আর সময় নেই। রমজানের পরে চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতেই হবে। এ জন্য সব জেলা কমিটি ও অঙ্গ দলের বিশেষ করে আন্দোলন সফল করার হাতিয়ার হিসিবে পরিচিত সংগঠনগুলোর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে রমজান মাসেই। তাই অন্য যে কোন রমজান মাসের চেয়েও এবারের মাসটি বিএনপির জন্য একটি ব্যস্ত সাংগঠনিক মাস। কারণ এ মাসে দলটি সেরে নিচ্ছে আন্দোলনে নামার যাবতীয় প্রস্তুতিও।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, রমজান মাসে সবাই রাজনীতিটাকে একটু দূরে রেখে ধর্মকর্ম করতে চান। তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের দল। নেতাকর্মীরা রোজায় সব সময়ই এলাকায় মানুষের সঙ্গে ইফতার এবং ঈদ করে থাকে। আর নির্বাচনকে ঘিরে তো মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এবার বেশি সরব হবে এটাই স্বাভাবিক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়