উম্মুল ওয়ারা সুইটি: মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অংসান সু চি বলেছেন, মিয়ানমার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ব্যবস্থা করছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমঝোতার ভিত্তিতেই মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন উৎসাহিত করার প্রতিশ্রæতিও দেন তিনি।
জাপানভিত্তিক সংবাদ সংস্থ আশাহি শিমবুনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে সু চি এই প্রতিশ্রæতি দেন। সাক্ষাতকারে এই প্রথমবারের মতো সু চি প্রত্যাবাসনে আইন বিশেজ্ঞসহ বিভিন্ন বিদেশি পরামর্শকদের সহায়তা নিতে দেশটির অনাপত্তির কথা জানিয়েছেন।
জাতিগত নিধন হয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে সু চি বলেন, কোনো জাতিগত নিধন হয়নি।একটা ঘটনাকে এক এক দিক থেকে দেখা যায়। যারা বলছে জাতিগত নিধন তারা মিথ্যা বলেছে। তারা তাদের মতো করে ব্যাখ্যা করেছেন। আমাদের অনুধাবন তাদের চেয়ে ভিন্ন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার আন্তরিক দাবি করে সু চি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে বলেছি রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে আগ্রহী করতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা জানিয়েছি, স্বেচ্ছায় যারা ফিরতে চায় তাদের প্রত্যেককে নেওয়া হবে।
নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠন প্রসঙ্গে সু চি বলেন, আমরা মনে করি তদন্ত কমিশনটি আমাদের পরামর্শও দিতে পারবে, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাখাইনে পরিস্থিতির উন্নয়নে সহায়ক হবে। সু চি বলেন, রাখাইনের বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অবিশ্বাস গড়ে উঠেছে। সেখানে শান্তি রাতারাতি অর্জন করা সম্ভব নয়। তবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন পরবর্তী নিরাপত্তার প্রশ্নে সু চি বলেছেন, আমাদেরকে সব নাগরিকদেরই নিরাপত্তা দিতে পারতে হবে, বিশেষ করে স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে। সেজন্য আমরা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি।
গত বছরের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো হওয়ার এক পর্যায়ে প্রত্যাবাসন চুক্তিতে বাধ্য হয় মিয়ানমার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৮ হাজার রোহিঙ্গার নাম প্রস্তাব করা হলেও মাত্র ৬০০ জনকে ফেরত নিতে চেয়েছে মিয়ানমার। এমন অবস্থায় অতীতের ধারাবাহিকতায় আবারও প্রত্যাবাসন চুক্তি মেনে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রæতি দিলেন সুচি।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দাবি, আইসিসির তৎপরতা জোরালো হওয়ার পর থেকেই মিয়ানমারের পূর্ববর্তী অবস্থান বদলাতে শুরু করে একটু একটু করে। মে মাসে রোহিঙ্গা নিধনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা আসে। ২ জুন প্রথমবারের মতো তারা সব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
সিঙ্গাপুরে আঞ্চলিক নিরাপত্তা সম্মেলন শাংরি-লা সংলাপে মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং তুন প্রতিশ্রæতি দেন, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৭ লাখ রোহিঙ্গার সবাই যদি স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে চায় তাহলে সবাইকে ফিরিয়ে নিতে রাজি মিয়ানমার।
আপনার মতামত লিখুন :