মো: আবু তালহা তারীফ: সূরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর; যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী হতে পারো’। (সূরা বাকারা- ১৮৩)
উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে জানা যায়, রোজা শুধু আমাদের সময়ে নয়; পূর্ববর্তী নবিদের মাঝেও বিদ্যমান ছিল। তাদের রোজা পালনে ভিন্নতা থাকলেও মৌলিক রোজার বিধান সকল নবির শরিয়াতেই বিদ্যমান ছিল। আদি মানব হজরত আদম (আ.) সর্বপ্রথম রোজা রেখেছিলেন। সূরা আরাফের ১৯ নং আয়াতে আল্লাহ পাক আদম (আ.)-কে বলেন, ‘হে আদম! তুমি এ বৃক্ষের নিকট যেয়োনা’। ইহা এক প্রকারের রোজা। শয়তানের কুমন্ত্রণায় পড়ে তিনি গাছের নিকট গিয়ে ফল খেয়ে ফেলেন। অতঃপর জান্নাত থেকে বের হয়ে অনুতপ্ত হয়ে খাবার গ্রহন করেননি। সেই খাবার গ্রহন না করাও এক ধরনের রোজা। রোজা ভঙ্গ করার কাফফারা হিসেবে আদম (আ.) ৪০টি রোজা রেখেছিলেন। যে ফল খেয়েছিলেন তা তার পেটে ছিল ৩০ দিন। তাই উম্মতে মুহাম্মাদির শ্রেষ্ঠ সন্তানরাও ৩০টি রোজা পালন করে। যদিও রোজা ২৯ টি হলে মহান আল্লাহ ৩০টির সাওয়াব দিয়ে থাকবেন। তাছাড়া হজরত আদম (আ.) চাঁদের ১৩,১৪,১৫ তারিখে রোজা পালন করতেন। (কানযুল ওম্মাল ৮ম খন্ড ২৫৮ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ২৪১৮৮) হজরত নুহ (আ.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন বাদ দিয়ে সারা বছর রোজা রাখতেন। (ইবনে মাজাহ-২য় খন্ড, ৩৩৩ পৃষ্ঠা, হাদিস- ১৭১৪) হজরত ইদ্রিস (আ.)ও রোজা পালন করতেন। আল্লামা নিশাপুরী (রহ.) বলেন, হজরত ইদ্্িরস (আ.) সারা জীবন রোজা রেখেছিলেন। (আল আরাইশ- ৩৭,৩৮পৃষ্ঠা) যাবুর কিতাব অবতীর্ণ হয় হজরত দাউদ (আ.) এর উপর। তিনি একদিন পর পর রোজা রাখতেন। (মুসলিম-৫৮৪ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ১১৮৯) হজরত সোলাইমান (আ.) মাসের শুরুতে তিনদিন, মাসের মধ্যভাগে তিনদিন, মাসের শেষভাগে তিনদিন অর্থাৎ মাসে মোট ৯দিন রোজা রাখতেন।
(কানযুল ঊম্মাল, ৮ম খন্ড, ৩০৪ পৃষ্ঠা) হজরত মুসা (আ.) ৩০দিন রোজা রেখেছিলেন। তুর পাহারে যাওয়ার পর আল্লাহ পাক তাকে আরও ১০টি রোজা অতিরিক্ত রাখতে বলেন। তাই তিনি ৪০টি রোজা রাখতেন। হজরত মুসা (আ.)-এর মত ঈসা (আ.)ও ৪০ দিন রোজা রাখতেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ঈসা (আ.) সবসময় রোজা রাখতেন। (মুসলিম- ৫৮৪পৃষ্ঠা) হযরত কাতাদা (রা.) বলেন, মাসে তিনদিন রোজা রাখার বিধান হজরত নুহ (আ.) এর যুগ থেকে শুরু করে রাসুল (সা.) এর যুগ পর্যন্ত বলবৎ ছিল। লেখক: খতিব, রোহিতপুর বোডিং মার্কেট জামে মসজিদ, ঢাকা।