ডেস্ক রিপোর্ট : বাসে অগ্রিম টিকিট বিক্রির এলোমেলো খবরে বিভ্রান্ত হয়েছেন ঈদে অগ্রিম টিকিট প্রত্যাশী ঘর ফেরা মানুষ। সম্প্রতি পরিবহন মালিকদের বিভিন্ন সূত্র দিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যম ১ জুন থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে বলে খবর প্রকাশ করলেও আজ বুধবার (৩০ মে) থেকে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করে দিয়েছে পরিবহন মালিকরা। অগ্রিম টিকিট বিক্রির বিষয়ে এমন পরস্পর বিপরীত তথ্যে সাধারণ যাত্রীরা বিভ্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
টিকিট প্রত্যাশী সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে পরিবহন মালিক সমিতিগুলোর পক্ষ থেকে কোনও সঠিক তথ্য জানানো হয়নি। অগ্রিম টিকিট বিক্রির বিষয়ে তারা সংবাদ সম্মেলন ডেকে নির্ধারিত তারিখ নির্ধারণ করে দিতে পারতো। কিন্তু অজ্ঞাত কারণেই তারা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়ে যাত্রীদের হয়রানি করেছে। একারণেই যাত্রীদের অনেকেই বিভ্রান্ত হয়েছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘আমরা ১৭ জুনকে ঈদের সম্ভাব্য দিন ধরে নিয়ে আজ (৩০ মে) থেকে বাসের অগ্রিম টিকিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সকাল থেকে বাসের টিকিট কাউন্টারগুলোতে দীর্ঘ লাইন ছিল। তবে ফিরতি টিকিট কবে থেকে দেওয়া হবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
অগ্রিম টিকিট বিক্রির বিষয়ে বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনের সভাপতি মারুফ তালুকদার সোহেল কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
যাত্রীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বাস মালিকরা কোন দিন থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করবেন সে বিষয়ে কোনও সঠিক সিদ্ধান্ত আগে জানাননি। তারা একেক গণমাধ্যমে টিকিট বিক্রির বিষয়ে একেক তথ্য পেয়েছেন। কেই কেউ জেনেছেন পহেলা জুন থেকে, আবার কেউ কেউ জানেন ৩০ জুলাই থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে।
নাম প্রকাশে অনিশ্ছুক পরিবহন সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেছেন, তারা পহেলা জুন থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরে তা এগিয়ে এনে ৩০ মে থেকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই তথ্যটি অনেকেই গতকাল জেনেছেন। এ কারণে সমস্যাটি হয়েছে।
ঈদে অগ্রিম টিকিটের জন্য মিরপুর-১০ নম্বর থেকে গাবতলীর হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে আসেন কলেজ শিক্ষার্থী মো. সারোয়ার হোসেন। তিনি রংপুরের টিকিট কিনতে বুধবার ভোর ৫ টায় কাউন্টারের সামনে আসেন। চাহিদা অনুযায়ী ১৪ জুনের টিকিটও পেয়েছেন তিনি। তবে তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা অপর যাত্রী মামুন অর রশিদ তা পাননি। তারও চাহিদা ছিল ১৪ জুনের। কিন্তু তিনি পেয়েছেন ১৫ জুনের টিকিট। মামুন অর রশিদ জানান, পত্রিকার খবরের মাধ্যমে জেনেছি এক জুন থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করা হবে। কিন্তু গতরাতে হঠাৎ শুনি আজ থেকে টিকিট বিক্রি হবে। সকালে কাউন্টারে এসে দেখি টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। আমি আসার আগেই দীর্ঘ লাইন দেখেছি। যে পরিমাণ যাত্রী সে পরিমাণ টিকিট নেই। মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। সে কারণে কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাইনি।
এদিকে ঈদে ঘরফেরা মানুষের জন্য বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিন সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত টিকিট বিক্রির কথা থাকলেও সকাল ১০টার মধ্যে প্রতিটি রুটের টিকিট বিক্রি প্রায় শেষ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন বিভিন্ন বাসের কর্তৃপক্ষ। ফলে অনেক যাত্রী হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।
মোহাম্মদপুর থেকে গাবতলী টার্মিনালে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সানজিদা বলেন, মালিকপক্ষ যদি একটা সঠিক দিন নির্ধারণ করে দিতো তাহলে আর আমাদের এই ভোগান্তি হতো না। অন্তত পক্ষে আমরা সেই প্রস্তুতি নিয়েই আসতাম।
বিভিন্ন কাউন্টারে টিকিটের জন্য আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের অনেকেই সেহরির পর পরেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বিরক্তি অনুভব করেছেন অনেকেই। তবে সকাল ৭টার দিকে টিকিট পাওয়ার পর খুশি মুখে বাড়ি ফিরেছেন তারা।
ঝিনাইদহগামী পূর্বাশা, জেআর অথবা রয়েল পরিবহনের টিকেট প্রত্যাশী নিজাম উদ্দিন বলেন, সকাল ১০টার আগেই সব টিকিট শেষ। কাল এসে দেখি একটা টিকিট পাই কিনা।কাউন্টারগুলো থেকে জানানো হয়েছে, এখন ৭ থেকে ১৫ জুনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে ১৩ ও ১৪ জুনের টিকিটের চাপ বেশি। সবাই ১৪ জুনের টিকিট কিনতে চাইছে।
কাউন্টারে কথা বলে জানা যায়, আজ সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু যাত্রীদের চাপে সকাল ১০টার মধ্যেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। আগামী আরও ৩ থেকে ৪ দিন অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে।যাত্রীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন অন্যান্য দিনের তুলনায় এখন টিকিটের দাম একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে। প্রতি ঈদেই এভাবে বেশি নেওয়া হয় বলে জানান তারা। তবে এ বিষয়ে সরাসরি কোনও কথা না বললেও কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা বলছেন ঈদের আগে গন্তব্য থেকে ফেরার পথে তাদের বাসগুলোকে খালিই ফিরতে হয়। এক ডাউন যাত্রীর ভাড়ায় তারা ব্যয় পুষিয়ে নিতে পারেন না। এ কারণেই কিছু টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।
হানিফ পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক মো. মোশারফ হোসেন বলেন, আমরা ভোর সোয়া ছয়টা থেকেই টিকিট বিক্রি করা শুরু করেছি। কয়েক ঘণ্টা পর বিভিন্ন গন্তব্যের টিকিট প্রায় শেষ হয়ে গেছে। আজ ১৩ ও ১৪ জুনের টিকিটের চাহিদা বেশি ছিল। ১৪ জুনের টিকিট না পেয়ে অনেককেই ১৩ ও ১৫ জুনের টিকিট কিনেছেন।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর তিনটি বাস টার্মিনাল সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল করে থাকে। এবার ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে ১ জুন থেকে। তবে বিআরটিসি বাসের আগাম টিকিট বিক্রির ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
আপনার মতামত লিখুন :