শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ৩১ মে, ২০১৮, ০৮:৩৬ সকাল
আপডেট : ৩১ মে, ২০১৮, ০৮:৩৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভার্সিটি ও মেডিক্যাল ক্যাম্পাস মাদকের নিরাপদ স্থান

শিমুল : রাজধানী ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর ক্যাম্পাস ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক বেঁচাকেনার নিরাপদ স্থান। মাদক নির্মূলে দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযানের ছোঁয়া এখনো এসব স্থানে পড়েনি। তবে জড়িতদের শনাক্তে মাঠে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও হাসপাতাল ক্যাম্পাস (জরুরি বিভাগ ছাড়া) নিরিবিলি পরিবেশ থাকে। ওই সময়ে ইয়াবাসহ মাদক বেঁচাকেনা ও সেবন চলে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক শ্রেণির কর্মচারী ও শিক্ষার্থী ইয়াবা বেঁচাকেনা ও সেবনের সঙ্গে জড়িত। হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা এর সত্যতা স্বীকার করেছেন।

যুব সমাজকে কারা মাদকের বিষে ধ্বংস করে দিচ্ছে, সেটা জানতে গোয়েন্দারা সারাদেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনুসন্ধান চালিয়ে মাদক কারবারিদের তালিকা ইতোমধ্যে প্রণয়ন করেছেন। সরকার সেই তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে অভিযান চালাতে চায়। কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ মাদক কারবারে জড়িত শিক্ষার্থীদের সংশোধন হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য সময় চেয়ে নেয়। এর মধ্যে দফায় দফায় প্রতিবেদন চালাচালি হলেও সংশোধন বা অভিযানের কোনো সুরাহা হয়নি। কারবারিরা বহাল তবিয়তে আর শিক্ষাঙ্গনে ছড়িয়ে যাচ্ছে মাদকের বিষ। যারা সংশোধনের সুযোগ গ্রহণ না করে অবাধে মাদক সেবন ও ব্যবসা করে যাচ্ছে তাদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। ইত্তেফাক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তিন সহস াধিক মাদক বাণিজ্যে জড়িত। এর মধ্যে ৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদক কারবারে জড়িত ৫৬০ জনের তালিকা করেছেন গোয়েন্দারা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয় ও আটটি কলেজ রয়েছে।

জানা গেছে, শিক্ষার্থী, ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী, আশপাশের দোকানদার, এমনকি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারাও শিক্ষার্থীদের হাতে মাদকদ্রব্য তুলে দিচ্ছে। তালিকাভুক্ত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই অবাধে পাচার হচ্ছে মাদক। একটি ছাত্র সংগঠনের কতিপয় নেতা ও এক শ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তার মদদে সেখানে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা হয়। তালিকাভুক্তদের অনেকে পাস করে বের হলেও ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক অপকর্মে এখনো জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতাদের নাম তালিকায় থাকায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।

সূত্র জানায়, গত বছরের অক্টোবর থেকে তিন দফায় মন্ত্রণালয় থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে (ডিএনসি) তালিকা দিয়ে যাচাই করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। ডিএনসির কর্মকর্তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ও প্রক্টরকে তালিকার ব্যাপারে এরই মধ্যে জানিয়েছেন। বাকিগুলোতেও জানানোর প্রক্রিয়া চলছে। মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চাইছে ডিএনসি। বুয়েট, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের মাদক কারবারিদের তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমাদের নজরদারি বাড়ছে। কর্তৃপক্ষের দেওয়া সংশোধনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অভিযুক্তরা না শোধরালে জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা হবে।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ ছাত্রনেতার ছত্রছায়ায় চলছে মাদক ব্যবসা। শিক্ষার্থীদের টার্গেট করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে মাদকের কারবার চলছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, চানখাঁরপুল মোড়, পলাশী, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, বুয়েট, আনন্দবাজার, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, নীলক্ষেত, কাঁটাবন ও নিউ মার্কেট এলাকায় বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা। ফুটপাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে চলছে মাদক সেবন। প্রভাবশালী ছাত্রনেতাদের দোহাই দিয়ে টোকাইরাও মাদক বিক্রি করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সূর্যসেন হলের দুইজন ছাত্র জানান, ‘প্রভাবশালী একটি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা হলের ভেতরেও ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করে। বাইরের লোকজনও করে। তবে নেতাদের নাম ভাঙানোর কারণে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। পুলিশও এই সুযোগে নিয়মিত উেকাচ গ্রহণ করে। তারা কোনো অভিযান পরিচালনা করে না।’

পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক কারবারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ১০ জন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১০ জনই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন। তাঁরাও একটি ছাত্রসংগঠনের মদদপুষ্ট বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ক্যাম্পাসের অনেকেই তাকে মাদকসম্রাট বলে চেনে। এদিকে নিউ মার্কেট থেকে ঢাকা কলেজ এলাকা পর্যন্ত বেশ কয়েকজন মাদক কারবার করে। তবে কলেজকেন্দ্রিক কারবারের নিয়ন্ত্রক ৫ জন। ঢাকার হাজারীবাগের লেদার টেকনোলজি কলেজকেন্দ্রিক মাদক বাণিজ্য চালাচ্ছে ৭ জন। ধানমন্ডির ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিকেন্দ্রিক মাদক কারবার চালাচ্ছে ১৫ জন। সবচেয়ে বেশি মাদক কারবারি টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ জন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও আশপাশ মাদক ব্যবসায়ীদের অভয়ারণ্য। তালিকায় তৃতীয় সর্বোচ্চ হিসেবে নাম আছে ময়মনসিংহের ত্রিশালের কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২ জন। কিশোরগঞ্জের ঈশা খাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন, জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে ১৫ জন, মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে ৩২ জন, মুন্সীগঞ্জের সরকারি হরগঙ্গা কলেজে ৮ জন, নারায়ণগঞ্জের রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬ জন, গাজীপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩০ জন, সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ জন, গণবিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ জন, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ জন, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে ৪ জন, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটিতে ৪ জন, পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটিতে ২ জন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ৪ জন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে ৫ জন, চাঁদপুর সরকারি কলেজে ১০ জন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ জন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ জন, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫ জন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ জন, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ জন, খুলনার নর্থ-ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও নর্দান ইউনিভার্সিটিতে ১৫ জন, যশোরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন জন, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ জন এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ জনের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে মাদকের বিষ ছড়ানোয় অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়