সুশান্ত সাহা : কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ আহমেদ গত রবিবার জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গোপন রাখা হয়েছে। এর আগে ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেল থেকে কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে মুক্তি পেয়েছিলেন ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম সন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাস ওরফে বিকাশ।
সূত্রে জানা গেছে, জোসেফ বর্তমানে তার এক ভাইয়ের কাছে আছেন। আগামী সপ্তাহে মালয়েশিয়া যাবেন। এর আগে বিয়েও করার কথাও ভাবছেন।
জোসেফের মুক্তি পাওয়ার খবরের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জোসেফের যে প্রসঙ্গটা, তার যাবজ্জীবন কারাদ- হয়েছিল। তিনি অলরেডি ২০ বছর কারাভোগ করেছেন। ২০ বছর কারাভোগের পরই তিনি ডিউ প্রসেসে, যেভাবে প্রসেস হয় সেভাবে আবেদন করেছেন। সেই আবেদনটি মহামান্য (রাষ্ট্রপতি) পর্যন্ত যায়।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘তিনি (জোসেফ) আবেদন করেছিলেন ভয়ানক অসুস্থ, এক বছর না দেড় বছর বাকি ছিল (সাজা), এক বছর কয়েক মাস। সেটার জন্য তিনি মার্সি পিটিশন (ক্ষমা প্রার্থনা) করেছিলেন, সেটি খুব সম্ভব রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করেছেন। এক বছর কয়েক দিন, তার কিছু অর্থদ-ও ছিল। সেগুলো আদায় সাপেক্ষে তাকে বিদেশে চিকিৎসার পারমিশন (অনুমতি) দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি।’
সূত্র জানায়, ছয় মাস আগে থেকেই জোসেফ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার বিকালে জোসেফকে হাসপাতালের কেবিন থেকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। এরপর রবিবার বিকালে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
১৯৯৯ সালের একটি হত্যাকান্ডে জোসেফের মৃত্যুদন্ড হয়। হাইকোর্টও এ রায় বহাল রাখেন। পরবর্তী সময়ে আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন। এখনও সেই সাজা ভোগ করা বাকি আছে প্রায় ২০ বছর। তার সম্ভব্য মুক্তির তারিখ ছিল ২০৩৯ সালের ২৪ জানুয়ারি। ২০ বছর আগে জোসেফকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন তার নামে ঢাকার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, অবৈধ অস্ত্র বহনসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ১১টি মামলা হয়।
এর আগে ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি জেল থেকে অত্যন্ত গোপনে মুক্তিপান ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম বিকাশ কুমার বিশ্বাস ওরফে বিকাশ। মুক্তি পাওয়ার পর একটি পাজেরো গাড়িতে করে চলে যান যশোর সীমান্ত এলাকায়। সেখান থেকে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কলকাতায় আত্মগোপন করেন। পুলিশের একটি সূত্র জানায় জোসেফও কলকাতায় আত্মগোপন করেছেন। সেখানে তার বড় ভাই ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় ৫ নম্বর শীর্ষ সন্ত্রাসী হারিস আহমেদও আত্মগোপন করে আছেন। ১৯৯৪ সালের আদালত চত্বরে সাক্ষী দিতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা মোর্শেদকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলিবিদ্ধ মোর্শেদ আদালতের এজলাসে গিয়ে লুটিয়ে পড়েন। মোর্শেদ হত্যা মামলায় জোসেফকে ফাঁসি ও হারিসকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। মোর্শেদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে চলচ্চিত্র অভিনেতা খলিউল্লাহ’র ছেলে বাবুকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ ছিল। তবে এর আগে ১৯৮৯ সালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন হারিস ও জোসেফের আরেক ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু।
আপনার মতামত লিখুন :