ডেস্ক রিপোর্ট : ইউক্রেইনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক নামকরা সাংবাদিক আরকাদি বাবচেঙ্কো গুলিতে নিহত হওয়ার খবর বেরোনোর পর তাকে টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে দেখা গেছে।
সেখানে হাজির হয়ে বাবচেঙ্কো বলেছেন, তাকে হত্যার ঘটনাটি একটি সাজানো নাটক ছিল। হত্যার চক্রান্ত থেকে তাকে বাঁচাতেই ইউক্রেইনের নিরাপত্তা বাহিনী তার ভুয়া মৃত্যু পরিকল্পনা করে।
হুমকির মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ৪১ বছর বয়সী আরকাদি বাবচেঙ্কোকে তার স্ত্রী বাসার প্রবেশপথে রক্তাক্ত অবস্থায় পান বলে মঙ্গলবার জানিয়েছিল কিয়েভ পুলিশ। তার মৃত্যুর জন্য রাশিয়াকে দোষারোপ করেছিল ইউক্রেইন।
কিন্তু তারপর বুধবারই সবাইকে চমকে দিয়ে ইউক্রেইনের টিভিতে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হন বাবচেঙ্কো।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তাকে যে হত্যার টার্গেট করা হয়েছে তা একমাস আগেই জেনেছিলেন তিনি।
ইউক্রেইনের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান বাসিল রাইসাক বলেন, “রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী বাবচেঙ্কোকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল। সে চেষ্টা ব্যর্থ করে দিতেই খুনের নাটক সাজানো হয়। দু’মাস ধরে এর পরিকল্পনা করা হয়েছে।”
ইউক্রেইনের মাটিতে রাশিয়ার বিশেষ বাহিনীর সন্ত্রাসী তৎপরতার প্রমাণ জোগাড়ের জন্য ইউক্রেইনের নিরাপত্তা বাহিনী এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে জানিয়েছে।
মঙ্গলবার ইউক্রেইনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইউক্রিনফর্ম জানায়, বাবচেঙ্কো পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে এম্বুলেন্সের ভেতরেই মারা গেছেন। তার বন্ধু ও সুপারভাইজারের বরাত দিয়ে একথা জানানো হয়।
ওদিকে, কিয়েভ পুলিশ বাসার বাইরে তাকে পাওয়া যাওয়ার কথা জানিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিকে খোঁজা হচ্ছে বলে ঘোষণা করে এবং সন্দেহভাজন হামলাকারীর একটি স্কেচও প্রকাশ করে।
খুনের এ খবর যারা বিশ্বাস করেছেন তাদের কাছে এবং নিজের স্ত্রীর কাছেও বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমা চেয়েছেন বাবচেঙ্কো। একইসঙ্গে জীবন বাঁচানোর জন্য ইউক্রেইনের নিরাপত্তা বাহিনীকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
বাবচেঙ্কো এদিন সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ঢোকার সময় সবাই হাততালি দিয়ে উঠে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।
তাদের সামনে হাজির হয়ে তিনি বলেন, “আমি অনেক সময়ই আমার অনেক সহকর্মী ও বন্ধুকে সমাহিত করেছি। সেই দুঃখের অনুভূতি কেমন তা আমি জানি। আপনাদেরকেও সেই অনুভূতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এজন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।”
চেচনিয়ার যুদ্ধে সেনা হিসেবে অংশ নেওয়া বাবচেঙ্কো পরে বেশ কয়েকটি রুশ গণমাধ্যমের যুদ্ধ বিষয়ক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিরিয়ার আলেপ্পোয় রুশ বাহিনীর বোমাবর্ষণ ও ইউক্রেইনে মস্কোর কর্মকাণ্ডকে ‘আগ্রাসন’ অ্যাখ্যা দিয়ে সরকারপন্থি রাজনীতিবিদদের চক্ষুশূলে পরিণত হন তিনি।
গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ফেইসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বাবচেঙ্কো দেশ ছাড়ার কথা জানান।
সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঠিকাদার পাঠানো এবং ২০১৪-র জুলাইয়ে ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলে মালয়েশীয় বিমান এমএইচ-১৭ ভূপাতিত করার ঘটনা নিয়েও তিনি প্রতিবেদন লিখেছেন।
গত সপ্তাহে পশ্চিমা একটি তদন্ত দলও এমএইচ১৭ বিধ্বস্তে রাশিয়ার দায় আছে বলে মন্তব্য করেছে।
তবে ইউক্রেইনের রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ওই এলাকায় মালয়েশীয় বিমানটি ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মস্কো।
সূত্র : বিডিনিউজ
আপনার মতামত লিখুন :