শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ৩০ মে, ২০১৮, ১০:৩০ দুপুর
আপডেট : ৩০ মে, ২০১৮, ১০:৩০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কারাগারে ইয়াবা!

নিজস্ব প্রতিবেদক:  ইয়াবাসহ নিষিদ্ধ মাদক ব্যবসা কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা অনুমান করা যায় কারারক্ষী ও পুলিশের পাহারায় কারাগারে বসে খোদ হাজতির মাদক ব্যবসার খবর থেকে। শুধু তা-ই নয়, কারাগার ওই মাদক ব্যবসায়ীর জন্য স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বললেও অত্যুক্তি হবে না। বিভিন্ন সময় কারা প্রশাসন, পুলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় সহায়তার অভিযোগ উঠেছে। এবার মাদক ব্যবসায়ী এক হাজতিকে উন্নত চিকিৎসার নামে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল ও পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে রেখে ইয়াবা ব্যবসা চালানোর সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কিছু কারারক্ষী এবং পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এমনকি চিহ্নিত ওই মাদক ব্যবসায়ী হাজতির সঙ্গে অবৈধভাবে তার স্ত্রীকেও হাসপাতালে রাখার সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, ইয়াবা-মাদকের ভয়াবহ থাবা থেকে তরুণ সমাজকে বাঁচাতে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত। কারণ এটি কেবল অবৈধ ইয়াবা ব্যবসার প্রশ্নই নয়, এর সঙ্গে কারা প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ও জড়িত।

কারাগার হলো সংশোধনের জায়গা। অথচ সেই কারাগারে বসেই চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও অপরাধীরা কারাগারে থেকে অবাধে চালাচ্ছে মাদক ব্যবসা। একই সঙ্গে তারা নিয়মিত মাদক সেবনও করে যাচ্ছে। মাদক সেবন ও ব্যবসায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন কারাগারগুলোতে দায়িত্বে থাকা শতাধিক কর্মকর্তা ও কারারক্ষী। এমন অভিযোগ ইতিমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এসেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের কারাগারগুলোতেও মাদক সেবন ও পাচারে জড়িতদের শাস্তি দিতে তদন্ত চলছে। কারাগারে বন্দিদের প্রায় ৬০ শতাংশ আসামি মাদক সংক্রান্ত মামলার আসামি।

এদিকে মাদক নির্মূলে সারাদেশে র‌্যাব-পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ১৩ হাজার ৫৩ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারী। নিহত হয়েছে ১১২ জন। উদ্ধার করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকার ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক। র‌্যাবের অভিযান শুরু হয় গত ৪ মে থেকে। র‌্যাবের অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ৪ হাজার ২৩ জন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৩ হাজার ২৭৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। মোট অভিযান পরিচালনা করা হয় ৭২৪টি। র‌্যাব ৫৯ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার করে। র‌্যাবের সঙ্গে গুলি বিনিময়কালে ২৫ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে অবাধে মাদক পাচার হলেও কারাগারে পাচার হওয়ার বিষয়টি অনেকের অজানা ছিল। কারাগারে বন্দিদের মাদক সরবরাহে বিভিন্ন কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নানা সময়েই উঠেছে। অভিযান শুরু হওয়ার পর আস্তে আস্তে সকল তথ্য বের হয়ে আসছে। মাদক সেবন ও পাচারে জড়িত থাকার অভিযানে ইতিমধ্যে কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত ও শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার তিনজনকে চাকরিচ্যুত এবং ১৪ জনকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। কারা অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মাদক সংরক্ষণ, সেবন এবং বন্দিদের সরবরাহ করার অভিযোগে ব্যবস্থা গত এক বছর ধরেই নিচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, বর্তমানে জেলার, ডেপুটি জেলার এবং কারারক্ষীসহ প্রায় শতাধিক কর্মকর্তারা বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে। এদের কেউ বন্দিদের কৌশলে মাদক সরবরাহ করেছেন, কেউবা আসক্ত, আবার কেউ নিজের কাছে সংরক্ষণ করে সময় ও সুযোগ মতো বিক্রি-সরবরাহ করে থাকেন। ইতিমধ্যে কারা কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ জনের সাময়িক বরখাস্ত করেছে। কারা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, কারা কর্তৃপক্ষ মাদকের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে। অপরাধ অনুযায়ী তাদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হবে।

কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ও আদালতে হাজিরা দিতে আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, কারাগারের ভেতরে ও বাইরে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি বড় সিন্ডিকেট রয়েছে। বন্দি মাদক ব্যবসায়ীদের লোকজন আদালত চত্বরে এসে তাদের হাতে ছোট ছোট মাদকের পুটলি তুলে দেয়। ওই মাদকদ্রব্য বহন না করলে কারাগারের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নির্যাতনের ভয়ে অনেকে মাদকদ্রব্য বহন করতে বাধ্য হন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সাত হাজার আসামির মধ্যে প্রায় ৫ হাজারই মাদক সেবন, ব্যবসা ও পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে বন্দি রয়েছে। কারাগারের ভেতরেও এসব আসামি জমজমাট মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বন্দিদের পাশাপাশি জমাদার ও কারারক্ষীদের একটি অংশ এ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অসাধু কিছু কারারক্ষী ও কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কয়েকজন দাগি কয়েদি মাদক ব্যবসার একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়