লিহান লিমা: ওয়ালমার্ট কোম্পানির মধ্যম পর্যায়ের একজন কর্মীর গড় বাৎসরিক বেতন ১৯ হাজার ১৭৭ ডলার। আর ওই কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ডগ ম্যাকমিলানের ২০১৭ সালে বেতনের পরিমাণ ছিল ২২.২ মিলিয়ন ডলার। দেখা গিয়েছে, ওয়ালমার্টের মধ্যমানের ওই কর্মীর ২২.২ মিলিয়ন ডলার আয় করতে হাজার বছরেরও বেশি একটানা কাজ করে যেতে হবে । অর্থাৎ হাজার বছর কাজ করেও ম্যাকমিলানের এক বছরের সমান আয় করতে পারবেন না ওই কর্মী।
কনসার্ট ও টিকেটিং কোম্পানি ‘এট লাইভ ন্যাশন এন্টারটেইনমেন্ট’ এর কর্মীর গড় আয় ২৪ হাজার ৪০৬ ডলার। প্রধান নির্বাহী মাইকেল র্যাপিনো ২০১৭ সালে আয় করেছেন ৭০.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই টাকা অর্জন করতে হলে একজন কর্মীর কাজ করতে হবে ২ হাজার ৮৯৩ বছর।
‘টাইম ওয়ার্নার’ কোম্পানির কর্মীদের আয় কিছুটা সন্তোষজনক। সেখানে একজন কর্মী আয় করেন গড়ে ৭৫ হাজার ২১৭ ডলার। প্রধান নির্বাহী জেফরি বকেস এর ১২ মাসের আয় ৪৯ মিলিয়ন ডলার। তার এক বছরের সমপরিমাণ টাকা আয় করতে ওই কর্মীর সময় লাগবে লাগবে ৬৫১ বছর।
সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত শীর্ষ ২০০ সিইও’দের সঙ্গে সাধারণ কর্মীদের বেতনের ফারাক দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায়িক ইতিহাসবিদ অধ্যাপক লুইস হ্যামেন বলেন, ক্রমবর্ধমান এই ফারাক খুবই অন্যায্য। বেশিরভাগ আমেরিকানদেরই কোন জমাকৃত অর্থ নেই। চাকরি হারানোর সঙ্গে সঙ্গে তারা সবকিছু হারিয়ে ফেলেন। অন্যদিকে প্রধান নির্বাহীরা যেন বছরের পর বছর ধরে লটারি জিতেই চলেছেন। এই বিষয়ে ‘লাইভ ন্যাশন’ ও ‘টাইম ওয়ার্নার’ কোন মন্তব্য না করলেও ‘ওয়ালমার্ট’ জানায়, তারা কম বেতনের কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস আরো জানায়, যে সব কোম্পানির শাখাসমূহ বিদেশে আছে, প্রধান শাখার কর্মীদের চেয়ে ওই শাখার একই পদের কর্মীদের অনেক কম বেতন দেয়া হয়। খেলনাপ্রস্তুতকারক কোম্পানি ‘ম্যাট্টেল’ এর বিদেশে অনেক ফ্যাক্টারি আছে এবং এশিয়ার হাজার হাজার কর্মী যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরতদের চেয়ে অনেক কম বেতন পান।
ফর্ডহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক জেনিফার গর্ডন বলেন, কম বেতনের কর্মীরা স্বাস্থ্য বিমা, শিশুদের যতœ ও বাড়িভাড়া দিতে হিমশিম খান। এই বেতনে সামলাতে না পারায় তারা বাধ্য হয়ে দুই-তিনটা চাকরি করেন। ফলে তারা পরিবারকে, সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিতে পারেন না। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়ানোর সময় তাদের হয় না। অন্যদিকে নির্বাহীদের বেতন মাঝে মাঝে সমালোচকদের চোখও কপালে তুলে দেয়।২০১৭ সালে প্রথবারের মত দুই সিইও এর বেতন ১০০ মিলিয়নের ও বেশি রেকর্ড করা হয়। ‘ব্রডকম’ এর প্রধান নির্বাহী হক টান পান ১০৩.২ মিলিয়ন এবং ফাস্ট ডাটা'র সিইও ফ্রাঙ্ক বিসিগানো আয় করেন ১০২.২ মিলিয়ন ডলার । গর্ডন বলেন, ‘সিইওসহ কোম্পানির উর্ধ্বতম ব্যক্তিরা হলেন রাজা ও রাণীর মত, আর কর্মীরা হচ্ছেন ভৃত্য। আমাদের এমন একটি সমাজ নির্মাণ করা উচিত নয় যেখানে সমতা এবং স্বচ্ছতা শুধু লোক দেখানোর বিষয় হয়।’ নিউ ইয়র্ক টাইমস।
আপনার মতামত লিখুন :