আমিন মুনশি: রোজা এমন এক আত্মশুদ্ধিমূলক ইবাদত, যা মানুষকে ষড়রিপু ও কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে। শুধুমাত্র ভোররাত থেকে সন্ধ্যারাত পর্যন্ত না খেয়ে থাকার নামই রোজা নয়। বরং মানুষের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেরই রোজা রয়েছে। পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি চোখ, কান, জিহ্বা, হাত, পা’কে গোনাহ থেকে মুক্ত রেখে অন্তরকে যাবতীয় কুচিন্তা ও বৈষয়িক লোভ-মোহ থেকে মুক্ত করে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতে পারলেই উচ্চস্তরের রোজার আশা করা যায়। এমন রোজাই ঢাল হয়ে শয়তানকে প্রতিহত করতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- “যে মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না, তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই”। (বোখারি)
তিনি আরও বলেছেন, “অনেক রোজাদার ব্যক্তি রয়েছে, যাদের রোজার বিনিময়ে অনাহারে থাকা ব্যতীত আর কিছুই লাভ হয় না। আবার অনেক রাত জাগরণকারী রয়েছে, যাদের রাত জাগার কষ্ট ছাড়া আর কিছুই লাভ হয় না”। (মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ)
চোখের রোজা: চোখ হলো মনের আয়না। যে কোনো গোনাহের কাজ করার আগে চোখ প্রথমে তা দেখে এবং পরে মনকে প্রলুব্ধ করে। তাই চোখের হেফাজত করা মানেই মনের হেফাজত করা। অশ্লীল, হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে চোখের দৃষ্টিকে ফিরিয়ে রাখা এবং নেক ও ভালো কাজের প্রতি চোখ খুলে রাখা ও দেখাই হচ্ছে চোখের রোজা।
কানের রোজা : ভালো কথা, হেদায়েতের কথা, কল্যাণের কথা শোনা এবং মন্দ কথা, অশ্লীল গান-বাজনা যথাসম্ভব কানে প্রবেশ না করানোর চেষ্টা করাই হচ্ছে কানের রোজা।
পায়ের রোজা : পায়ের রোজা হচ্ছে পাকে বিপথগামী না করা। অর্থাৎ পাপাচারের পথে, খারাপ পথে পা না বাড়িয়ে শান্তি ও কল্যাণের পথে পা বাড়ানো।
হাতের রোজা: হাত দিয়ে কোনো পাপের কাজ বা মানুষের ক্ষতি হয় এমন কাজ না করাই হাতের রোজা। আল্লাহ হাত দিয়েছেন সৎ কর্ম করার জন্য, মোনাজাত করার জন্য। জিনিসপত্রে ভেজাল মেশাতে, ওজনে কম দিতে, মারামারি-খুনাখুনি করতে, অসৎ উপায় অবলম্বন করতে বা কলমের আঁচড়ে দুর্নীতি বা জুলুম করার জন্য নয়। দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই আল্লাহর পবিত্র আমানত। যার যথাযথ ব্যবহার করা প্রতিটি রোজাদারের ফরজ দায়িত্ব। নচেৎ আমাদের অন্যায় ও পাপাচারের জন্য রোজ হাশরে এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, যার পরিণতি হবে জান্নাত নয়; জাহান্নাম। পবিত্র রমজান মাসে আমরা যদি আমাদের মস্তিষ্ক, অন্তর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে সুন্দরভাবে সহিহ পথে পরিচালিত করার অভ্যাস তৈরি করি, তাহলে বছরের বাকি এগারো মাস আমরা সুন্দর ও শান্তিময় জীবনযাপন করতে সক্ষম হবো। আর সমাজকে উপহার দিতে পারবো পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত সুশৃঙ্খল ও আদর্শ সমাজ। সর্বোপরি আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করাও সম্ভব হবে সবার। এভাবে এক মাসের সিয়াম সাধনার অনুশীলনের মধ্য দিয়ে অস্তিত্বকে বাস্তব ও সত্য করে তুলে মানুষের জীবনকে পবিত্র করে মাহে রমজান।
আপনার মতামত লিখুন :