কে ধরিয়ে দিয়েছিল অ্যান ফ্রাঙ্ককে?
বাঁধন : দ্বিতীয় বিশ্বজুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নেদারল্যান্ডসের অ্যামস্টারড্যামের একটি ওয়্যারহাউজে আশ্রয় নেওয়া ইহুদি বালিকা অ্যান ফ্রাঙ্ককে ধরিয়ে দেওয়া নিয়ে নতুন এক তত্ত্ব বেড়িয়ে এসেছে। নতুন এই তত্ত্বটি সেসময়ের ডাচ রেসিস্ট্যান্স আর্মির সদস্যের পুত্র জেরার্ড ক্রেমারের বইটিতে উঠে আসে।
জেরার্ড ক্রেমারের বইটিতে তিনি বলেন, নাৎসির সঙ্গে হাত মিলিয়ে অ্যান ফ্রাঙ্কের পরিবার সহ আরও ১২ টি পরিবারকে ধরিয়ে দেন এক ইহুদী নারী।
তার এই দাবি করার পেছনে রয়েছে তার বাবার বলা আত্মকথা এবং সকল ঘটনার বর্ণনা। তার বইটিতে বলা হয়েছিল, অ্যান্স ভ্যান ডিক নামক সেই ইহুদী নারী নিজের মুক্তি দাবি করে নাৎসিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। এসময়ে তিনি নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন এলাকায় লুকিয়ে থাকা ১৪৫ জন ইহুদীদের ধরিয়ে দিতে সাহায্য করেন, যার মধ্যে তার নিজের ভাই এবং পরিবারও ছিল। তবে তা করেও শেষ রক্ষা হয়নি তার - তাকে সবশেষে ১৯৪৮ হত্যা করা হয়।
এই বইয়ে আরও বলা হয়, জেরার্ড ক্রেমারের পিতা ক্রেমার সিনিয়র অ্যামস্টারড্যামের ওয়েস্টারমার্কেটের একটি অফিস ভবনের কেয়ারটেকার ছিলেন। তার অফিসের ঠিক দুই তলা উপরেই জার্মান সৈন্য এবং ডাচ নাৎসি সৈন্যরা অবস্থান করেছিল। সেসময়ে তিনি লক্ষ্য করেন, ১৯৪৩ সালে অ্যান্স ভ্যানের আটকের পর থেকে তিনি নাৎসিদের জন্য কাজ করা শুরু করেন। এরপর থেকেই তিনি একজন নিয়মিত গুপ্তচর হয়ে ওঠেন।
১৯৪৪ সালে অগাস্টের প্রথম দিকে প্রিনসেনগ্রাখট শহরে লুকিয়ে থাকা ইহুদীদের ব্যাপারে নাৎসি সৈন্যদেরকে তথ্য দেন অ্যান্স ভ্যান, যা ঘটনাচক্রে দরজার বাইরে থেকে সিনিয়র ক্রেমার শুনে ফেলেন। এই প্রিনসেনগ্রাখট শহরেই অ্যান ফ্র্যাঙ্ক এবং তার পরিবার লুকিয়ে ছিল।
গবেষকেরা বলেছেন, ১৯৪৪ সালের ১০ মার্চ থেকে পরের কয়েক দিন ধরে ডায়েরিতে অ্যান ফ্রাঙ্ক তাদের কাছে গোপনে রেশন কুপন সরবরাহ করতেন এমন দুই ব্যক্তির গ্রেপ্তারের কথা বেশ কয়েকবার লিখেছে। প্রিনসেনগ্রাখটের যেই ওয়্যারহাউজে অ্যান ফ্রাঙ্করা লুকিয়ে ছিল, সেখানে গ্রেপ্তার হওয়া ওই দুই ব্যক্তি বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। ১৪ মার্চ অ্যান তার ডায়েরিতে লেখে, ‘বি (মার্টিন ব্রুভার) এবং ডি (পিটার ডাটজিলার) গ্রেপ্তার হয়েছে। তাই আমরা আর কুপনও পাচ্ছি না।’
১৫ বছর বয়সি এই কিশোরীর লেখা ডায়রিতে ১৯৪২ সাল থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত তাদের লুকিয়ে থাকার সকল ঘটনা বর্ণিত রয়েছে।
ডেথ ক্যাম্পে বন্দী থাকা অবস্থায় অ্যান ফ্রাঙ্ক টাইফাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তার বয়স তখন মাত্র ১৫। যে আটজন ইহুদিকে ওই কুঠুরি থেকে ধরে নেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে একমাত্র অ্যানের বাবা অটো ফ্রাঙ্ক জীবিত অবস্থায় ফিরতে পেরেছিলেন। অ্যান ফ্রাঙ্কের ডায়েরিতে হিটলারের কুখ্যাত নাৎসি বাহিনী অধিকৃত নেদারল্যান্ডসে ইহুদিদের ওপর নির্যাতনের মর্মস্পর্শী বর্ণনা রয়েছে। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান