শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২৭ মে, ২০১৮, ০৬:৫৫ সকাল
আপডেট : ২৭ মে, ২০১৮, ০৬:৫৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বলা ও না-বলা কথা

কামাল আহমেদ : ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, তাতে উভয় দেশের শীর্ষপর্যায়ের নেতৃত্বের যেকোনো সফরই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পশ্চিমবঙ্গ সফরও যে একধরনের তাৎপর্য বহন করবে, সেটাই স্বাভাবিক। যদিও এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সফর নয়। কিন্তু সফরের যে প্রধান উদ্দেশ্য, দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বিশেষ আয়োজন, তার একটিতে আচার্য হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও উপস্থিত ছিলেন। আর দুই দেশের, বিশেষ করে বন্ধুরাষ্ট্রের দুই নেতার মধ্যে দেখা হবে, অথচ একান্ত আলোচনা হবে না এমনটি ধারণারও অতীত।

আলোচনার বিবরণ অবশ্য বাংলাদেশ বা ভারত—কোনো তরফেই সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়নি। কলকাতার বাংলা কাগজ আনন্দবাজার অবশ্য জানিয়েছে, ‘শুক্রবার বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের পর সেখানেই মোদির সঙ্গে বৈঠকে হাসিনা জানিয়েছেন—তাঁর সরকার উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের দেশছাড়া করেছে, ট্রানজিট দিয়েছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বরাবর দিল্লির পাশে থেকেছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের বছরে এবার তাই ভারতের সহযোগিতা চাই।’ পত্রিকাটি আরও লিখেছে, ‘তাঁর দপ্তরের এক সূত্র জানায়, হাসিনার বার্তা—মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে সরাতে, বাংলাদেশকে ফের পাকিস্তান বানানোর চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে পশ্চিমে আর পুবে—দুদিকেই পাকিস্তান নিয়ে ঘর করতে হবে ভারতকে। তাই ভারতের উচিত বাংলাদেশের বর্তমান সরকারই যাতে ক্ষমতায় ফেরে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা।’
আনন্দবাজার যেভাবে লিখেছে, আলোচনায় সে রকম কথাবার্তা হয়েছে কি না, আশা করি সরকার তা অচিরেই স্পষ্ট করবে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে প্রতিবেশীদের আগ্রহ থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। বাইরের অনেক দেশেরই আগ্রহ আছে। ক্ষমতায় রদবদল হলে সম্পর্ক ঝালাই করে নেওয়ার প্রয়োজন হয় বলেই এ ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়। তবে, শীর্ষ বৈঠকের আগে বিশ্বভারতীর যে অনুষ্ঠান দূরদর্শনে সরাসরি সম্প্রচার করেছে, তাতে আমরা দেখেছি, প্রধানমন্ত্রী মোদি স্পষ্ট করেই বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে নিজেদের উন্নত দেশে উত্তরণ ঘটাতে শেখ হাসিনার স্বপ্ন বা দৃশ্যকল্প (ভিশন) বাস্তবায়নে ভারত তাঁকে পূর্ণ সমর্থন দেবে। এত জোরালো প্রকাশ্য আশ্বাসের পর নির্বাচনের জন্য আলাদা করে সহায়তা চাওয়ার আর অবকাশ থাকে কি?
ভারতের বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেল এনডিটিভি লিখেছে, দুই প্রধানমন্ত্রী শান্তিনিকেতনে একই মঞ্চে চার ঘণ্টা সময় কাটালেও তাঁরা দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নীরব ছিলেন। এই নীরবতাই সবচেয়ে জোরালো ছিল (ইন দ্য এন্ড, সাইলেন্স স্পোক দ্য লাউডেস্ট)। তাঁদের কথায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তার ‘টি’ শব্দটি যেমন উচ্চারণ করেননি, তেমনই প্রধানমন্ত্রী মোদি রোহিঙ্গা সমস্যা সম্পর্কে ছিলেন নীরব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ষোলো কোটি মানুষের বাংলাদেশে এগারো লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। তারা যখন এসেছে, তখন আমরা আমাদের সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা চাই রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন হোক। মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবতে হবে। আমাদের উভয় দেশকেই এদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মিয়ানমারকে বলতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতায় বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে আট শ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়া এবং যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও আরও বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বললেও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এসব শিরোনামের কোনো কিছুই বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তেমন একটা প্রাধান্য পায়নি। ধারণা করি, সরকারি ভাষ্য না পাওয়ার কারণেই আমাদের এই দৈন্য। কিন্তু, ২০৪১-এর স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি প্রধানমন্ত্রী মোদির সমর্থনের খবরটি সরাসরি সম্প্রচার হওয়া তথ্য, এই আশ্বাসের গুরুত্ব বুঝতে তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
সংবাদমাধ্যমে অন্য আরেকটি বিষয়ও উপেক্ষিত হয়েছে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির পুনর্জাগরণের নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানে অতিথি সরকারপ্রধানের ভাষণের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ উচ্চারণ। ভারতের সাম্প্রতিক মুসলিমবিরোধী আবহের পটভূমিতে এটি কি বিশেষ কোনো বার্তা বহন করে? এসব বলা ও না-বলা কথা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের রসায়ন অনুধাবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কামাল আহমেদ, সাংবাদিক।
সূত্র : প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়