শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৬ মে, ২০১৮, ১১:৪৯ দুপুর
আপডেট : ২৬ মে, ২০১৮, ১১:৪৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে পাওয়া যাবে না জিআই সনদের প্রকৃত পাকা খিরসাপাত আম

মতিনুজ্জামান মিটু : রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ ও পঞ্চগড় ছাড়া দেশের বাকি সব আম উৎপাদনকারি জেলায় গোপালভোগ এবং গোবিন্দভোগ আমপাড়া শুরু হয়েছে। সাতক্ষিরা, খুলনা ও খাগড়াছড়িতে গাছ থেকে সংগ্রহ শুরু হয়েছে হিমসাগর ও খিরসাপাত আম। তবে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহের আগে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোথাও পাওয়া যাবেনা চাপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহি প্রকৃত পাকা সুস্বাদু ও সুমিষ্ট জিআই সনদের খিরসাপাত ও হিম সাগর আম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি তথ্য সার্ভিসের প্রচারিত জাতভিত্তিক আম পরিপক্কতার সম্ভাব্য সময়কালের হিসেবে চাপাইনবাবগঞ্জে আগামী ৪জুন থেকে গাছ থেকে খিরসাপাত ও হিম সাগর আমপাড়া শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। গাছ থেকে আম পাড়ার পর পেকে খাওয়ার উপযোগি হতে ৫দিন থেকে ৭দিন সময় লাগে। এদিকে বিগত দুই বছর হলেও এবার আম উৎপাদনকারি জেলাগুলোর কোখাও হয়নি গাছ থেকে আম সংগ্রহের অনুষ্ঠানিকতা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই ও কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) প্রচারিত জাতভিত্তিক আম পরিপক্কতার সম্ভাব্য সময়কালের দু’দিন আগেই গত বৃহস্পতিবার চাপাইনবাবগঞ্জে গাছ থেকে গোপালভোগ আম পাড়া শুরু হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটের টাক্স ফোর্সের সিদ্ধান্তের আলোকে ডিএই ও এআইএস গত ২৪ মে সংবাদ মাধ্যমে ওই জাতভিত্তিক আম পরিপক্কতার সম্ভাব্য সময়কালের তালিকা প্রচার করে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট(বারি) এর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন জানান, আমের গুনগতমান নিশ্চিত করতে এবং ভোক্তাদের চাহিদানুযায়ি নিরাপদ, বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্য সম্মত আম বাজারজাত করতে বিগত কয়েক বছর বিভিন্ন জেলায় আম সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করা হয়। চলতি মৌসুমকে ঘিরেও চাপাইনবাবগঞ্জসহ আম উৎপাদনকারি জেলা গুলোর জেলা প্রশাসন আম সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করে। এ বিষয়ে একটি সমন্বিত আম সংগ্রহের সময় নির্ধারণের তাগিদ থেকে কৃষি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট(বারি)কে নির্দেশনা দেয়। এই আলোকে বারি টাক্স ফোর্সের মাধ্যমে ওই জাতভিত্তিক আম পরিপক্কতার সম্ভাব্য সময়কালের তালিকা তৈরী করে। ফল পাকানোর জন্য অনুমোদিত মাত্রায় ইথিলিন বা ইথোফেন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ঢালাও ব্যবস্থা থাকলে হবেনা। এজন্য ফল উৎপাদনকারি ২২/২৩টি জেলায় ইথিলিন বা ইথোফেন চেম্বার গড়ে তোলা যেতে পারে। এসব চেম্বারে চাষিদের আম আনার ব্যবস্থা করে তাতে পরিমিত মাত্রায় ইথিলিন বা ইথোফেন স্প্রে করে দেয়া যেতে পারে। এতে ভোক্তা ও আম চাষি উভয়েরই কল্যাণ হবে। এক্ষেত্রে মনিটরিং ব্যবস্থাও জোরদার থাকতে হবে।

ওই তালিকানুযায়ি বান্দরবান ও রাঙামাটিতে জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বারি আম-৩ এবং জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে রারি আম-৮ গাছ থেকে সংগ্রহ করা যাবে। সাতক্ষিরা, খুলনা ও খাগড়াছড়িতে ১০মে গোপালভোগে ও গোবিন্দভোগ, ২০মে খিরসাপাত ও হিমসাগর, ২৮মে লক্ষণভোগ, বারি আম, ল্যাংড়া ও মোম্বাই, ১২ জুন ফজলি, বারি আম-৩ এবং রারি আম-৮ গাছ থেকে পাড়া যাবে। যশোর, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা ও কৃষ্টিয়ায় ১২ মে গোপালভোগ, ২০ মে হিমসাগর ও খিরসাপাত, ৩জুন লক্ষণভোগ, বারি আম, ল্যাংড়া ও মোম্বাই, ১৫ জুন ফজলি, ১৮ জুন বারি আম-৩ এবং রারি আম-৮ সংগ্রহ করা যাবে। পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ ও রাজশাহীতে ২৫ মে গোপালভোগ, ৩০ মে হিমসাগর ও খিরসাপাত, ০৭জুন লক্ষণভোগ, বারি আম, ল্যাংড়া ও মোম্বাই, ১৭ জুন ফজলি, ২২ জুন বারি আম-৩ এবং রারি আম-৮ ও ১০ জুলাই আশ্বিণা আম গাছ থেকে পাড়া যাবে। চাপাইনবাগঞ্জ, নওগাঁ(পোরেশা সাপাহার) জেলায় ২৭ মে গোপালভোগ, ০৪জুন খিরসাপাত ও হিমসাগর, ১২ জুন লক্ষণভোগ, বারি আম, ল্যাংড়া ও মোম্বাই, ২০ জুন ফজলি, ২৫ জুন বারি আম-৩ এবং রারি আম-৮ ও ১৫ জুলাই আশ্বিণা আম গাছ থেকে পাড়া যাবে। ২৯ মে’র আগে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ ও পঞ্চগড়ে কোনো জাতের আম পাকে না। এই জেলাগুলোতে ২৯ মে গোপালভোগ, ৭ জুন খিরসাপাত ও হিমসাগর, ১৪ জুন লক্ষণভোগ, বারি আম, ল্যাংড়া ও মোম্বাই, ২২ জুন ফজলি, ২৭ জুন বারি আম-৩ এবং রারি আম-৮, ১৫ জুন হাড়িভাঙ্গা ও ২০ জুলাই আশ্বিণা আম গাছ থেকে সংগ্রহ করা যাবে। আবহাওয়াগত পরিবর্তনে জাতগুলো সংগ্রহের সময় কিছুটা তারতম্য হতে পারে। নির্ধারিত তারিখের আগে আম পরিপক্ক হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষি কর্মকর্তাকে অবহিত করে আম সংগ্রহ ও বাজারজাত করা যাবে।

বারি’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বাবুল চন্দ্র সরকার বলেন, জাতভিত্তিক আম পরিপক্কতার সম্ভাব্য সময়কাল নির্ধারণ এবং প্রচারের ফলে গাছ থেকে আম সংগ্রহ এবং বাজারজাত করার ক্ষেত্রে শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত হবে। গাছ থেকে পাখিতে ২/১টি পাকা আম খেয়ে মাটিতে ফেললে, আমের আপেক্ষিক গুরত্ব ১.০২ হলে বা পানিতে ডুবে গেলে এবং বোটার কাছে সামান্য হলুদ হলে ধরে নেয়া যায় ওই গাছের আম পেকেছে। একই আম গাছে শুরু হওয়ার পর থেকে এক মাস ধরে ফুল ধরতে পারে। তবে তাতে আম বতি হওয়ার ক্ষেত্রে তেমন একটা তারতম্য হয়না। গাছ থেকে আলাদা আলাদাভাবে হলুদ বা বতি আমপাড়া বানিজ্যিকভাবে লাভজনক নাও হতে পারে। বতি হলে আম এক সঙ্গেই গাছ থেকে পেড়ে ফেলা হয়। বতি আম গাছ থেকে পাড়ার পর পাকতে সময় লাগে পাঁচ দিন থেকে সাত দিন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়