মাহমুদুল হক জালীস: রমজান আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নেয়ামতের মাস। সওয়াব অর্জনের বসন্ত মৌসুম। আত্মিক উৎকর্ষ ও পরকালীন কল্যাণ লাভের সুবর্ণ সুযোগ। পাপী-তাপীদের পাপমোচনেরর মহেন্দ্রক্ষণ। সারা বছর কাজকর্মে ব্যস্ত মানুষের সম্মুখপানে এগিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত মুহূর্ত। জান্নাত লাভের মহিমান্বিত মাস। সিয়াম সাধনার মাস। রোজা পালনের মাধ্যমে প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজের জাগতিক কামনা-বাসনা পরিহার করে। আত্মসংযমি ও নিজের কৃচ্ছ্রতা পরিত্যাগ করে আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত বান্দার হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করে। মৌলিকভাবে পবিত্র রমজান সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে। অন্তরে প্রবাহিত করে রহমত, বরকত, মাগফেরাতের ঝর্ণাধারা। মানুষের মাঝে জাগ্রত করে আত্মমর্যাদাবোধ।
ধ্বংস করে মনুষ্যত্বহীনতা। তৈরি করে পরষ্পরে মায়া-মমতা ও সহানুভূতি। পশুত্বের স্বভাবকে ধীরে ধীরে দূর করে। মানুষের মাঝে ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে লজ্জাশীলতা, আত্মসংযমতা, সত্যবাদিতা, সরলতা, ভদ্রতা, ধৈর্যশীলতা, সহনশীলাতা, সাহসিকতা, খোদাভীরুতা, মানবপ্রেমসহ বহু সৎকর্ম করার অভিপ্রায়। রোজা মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় অহংকার, কুপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্বকে জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয়। ইবাদতের প্রতি উৎসহ তৈরি করে। রোজা সম্পর্ক পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিলো। যাতে তোমরা সাবধান হয়ে চলতে পার। [বাকারা :১৮৩]
রোজার ফজিলত সম্পর্কে রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ইখলাস নিয়ে অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য রমজানে রোজা পালন করবে, তার অতীতের সব গুনা মাফ করে দেয়া হবে। [বুখারি:২০১৪] অন্য হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য) একদিন রোজা পালন করবে, তা দ্বারা আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে ৭০ বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তীস্থানে রাখবেন’ [মুসলিম :২৭৬৭]
রমজান মাস যেহেতু আত্মিক উৎকর্ষ ও পরকালীন কল্যাণ লাভের এক মহেন্দ্রক্ষণ, তাই এই মাসের বিশেষ যত্ম নিতে হবে। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আদম সন্তানের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, তবে রোজা ব্যতীত। কেননা রোজা আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দিবো। [বুখারি ও মুসলিম ] এমনিভাবে রাসুল সা. বলেছেন, যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে তখন একজন আহ্বানকারী আহ্বান করেন, হে কল্যণকামী এগিয়ে যাও! হে মন্দান্বেষী স্তব্ধ হও! [তিরমিজি]
তাই মাহে রমজানের অসীম কল্যাণ ও পরিপূর্ণ বরকত লাভের জন্য আমাদের রমজান মাসে রোজা, নামাজ, এবং অন্যান্য ইবাদত সময়মতো আদায় করতে হবে। বর্জনীয় কাজ পরিহার করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রমজানের হক আদায় করার তাওফিক দান করুক। আমীন। লেখক : কবি গল্পকার ও প্রাবন্ধিক । পুরানা পল্টন, মদিনা টাওয়ার, ঢাকা ।