ওমর শাহ: ‘পবিত্র রমজান মাস বরকতের মাস। রমজান মাসের প্রধান ও প্রথম পালনীয় হচ্ছে রোজা। রমজানে দিনে রোযা রাখা ফরজ আর তারাবি পড়া সুন্নত। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানি চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে পরকালে প্রতিদান পাওয়ার আশায় রমজান মাসের রাতে কিয়ামুল লাইল করবে (তারাবি পড়বে) তার অতীত জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে’। রাসুল সা. এর হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে আমাদের নতুন সময়কে এভাবেই তারাবি পড়ার ফজিলত তুলে ধরেছেন কাতার হজ মিশনের সাবেক মুফতি ও কাতার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশি ইমাম ও খতিব মাওলানা মুশাহিদুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘তারাবির নামাজকে ফরজ করা হয়নি কিন্তু রমজানের কল্যাণ ও বরকত লাভ করতে হলে তারাবির নামাজ পড়া জরুরি। রাতে দীর্ঘ সময় ধরে দিনের ক্লান্তির উপেক্ষা করে তারাবির নামাজে নিমগ্ন থাকা আল্লাহ তায়ালার প্রতি একান্ত আত্মনিবেদরই বহিঃপ্রকাশ।’
মাওলানা মুশাহিদুর রহমান বলেন, ‘রমজান এলেই শুরু হয়ে তারাবির রাকাত সংখ্যা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক! নিঃসন্দেহে তারাবির নামাজ কিয়ামুল লাইলের অন্তর্ভুক্ত। এ ব্যাপারে সাহাবা, তাবেঈন, উম্মতের উলামা ফুকাহা, মুহাদ্দিসেনদের মতও অভিন্ন। তাহলে এই বিতর্ক কেন? আয়েশা (রা.) এর জীবদ্দশাতেই সাহাবা,তাবেঈন, বিশ রাকাত তারাবি পড়েছেন জামাতের সাথে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসও সহীহ। সাহাবারা তারাবির রাকাত সংখ্যা নিয়ে পরস্পরে মতবিরোধ, তর্ক-বিতর্ক বা কুতর্ক করেননি। অথচ আমরা তারাবির রাকাত সংখ্যা নিয়ে তর্ক বিতর্কে লিপ্ত।’
মাওলানা মুশাহিদুর রহমান তারাবির ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ‘সুন্নত ও নফল নামাজ সাধারণ নিয়মে জামাতে পড়া নিষিদ্ধ অথচ তারাবির নামাজ জামাতে পড়া বিধিবদ্ধ হয়েছে। রাসূল (সা.) নিয়মতান্ত্রিকভাবে তারাবির জামাতের ব্যবস্থা করেননি উম্মতের ওপর ফরজ হয়ে যাওয়ার ভয়ে। সালাতুত তারাবির বর্তমান নিয়মটি চালু হয়েছে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক (রা) সময় থেকে। এর আগে রাসূল (সা) ও হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) এর সময়ে এমনকি হজরত ওমর ফারুকের খেলাফতকালের প্রথম ভাগেও মুসলমানেরা রমজানের রাতগুলোতে এশার নামাজের পর অতিরিক্ত যে নামাজ আদায় করতেন, তা একাকি করতেন। এজন্য জামাত বা সম্মিলিত কোনো আয়োজন ছিল না। এক রাতে হজরত ওমর ফারুক (রা.) দেখলেন লোকেরা বিক্ষিপ্তভাবে ইবাদত করছে। হজরত ওমর (রা) এদের সবাইকে একজন তিলাওয়াতকারীর পেছনে জামাতের সাথে তারাবি পড়ার জন্যে একত্র করে দিলেন। এরপর একদিন আবারো বের হলেন, হজরত উবাই (রা) এর ইমামতিতে তখন তারাবিহর নামাজ চলছে। পরিবেশটি দেখে ওমর (রা) মুগ্ধ হলেন এবং বললেন, চমৎকার আবিষ্কার এটি।’
তিনি বলেন, রমজানের রাত গুলোকে জীবনের শেষ সুযোগ মনে করে বেশি বেশি কিয়ামুল লাইল পড়া উচিত আমাদের। নবী করিম (সা) রমজানে কিয়ামুল লাইল বা রাত জেগে ইবাদত-বন্দিগির বিশেষ উৎসাহ দিয়েছেন। তাই আল্লাহর বান্দাদের জন্য উচিৎ তারাবির প্রতি উদগ্রীব হয়ে থাকা। আট রাকাত বিশ রাকাত তর্ক পরিহার করা।
আপনার মতামত লিখুন :