আসাদুজ্জামান সম্রাট : কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছেনা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কোন্দল। তৃণমূল নেতাদের নিয়ে একের পর এক বৈঠক এবং সাংগঠনিক সফরের পরও জেলায় জেলায় কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলে এমন বিবাদমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল ভাবিয়ে তুলেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। গত মঙ্গলবার বিবাদমান দু’গ্রুপ নিয়ে বৈঠকে বসেও বিরোধ মেটানো যায়নি।
একটানা প্রায় সাড়ে ৯ বছর দল ক্ষমতায় থাকায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায়ই বেশ কিছু আওয়ামী লীগ নেতা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। ফলে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায়ই একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী তৈরি হয়েছে। এ নিয়েই শুরু হয়েছে তৃণমূলের কোন্দল। এতোদিন যেটা স্থানীয় প্রভাব, সরকারি কাজ কর্মের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ ছিল সেটা এখন নির্বাচন কেন্দ্রীক মনোনয়ন নিয়ে শুরু হয়েছে।
সর্বশেষ শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল নিয়ে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণি ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বৈঠক করেন শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক, সংসদ সদস্য ফজলুল হক চানসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে। সেখানে নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন্দল নিরসনের অনুরোধ জানানো হয়। বলা হয়, এভাবে বিরোধে জড়ালে নির্বাচনে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হবো।
গত ২০ মে শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে প্রত্যাহার ও শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল হক চাঁনসহ পাঁচ নেতাকে বহিষ্কার করে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এই সিদ্ধান্তের পর শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হুইপের পদ থেকে আতিউর রহমান আতিককে অপসারণের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল করেন দলের একাংশের নেতাকর্মীরা। এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার শেরপুরের আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
বৈঠকে অংশ নেয়া ঝিনাইগাতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএমএ ওয়ারেজ নাঈম এ প্রতিবেদককে বলেন, ড. আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত পূনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, নির্বাচন সামনে। এ সময়ে বিরোধে জড়ালে দলের জন্য ক্ষতি হবে। বৈঠকে শেরপুরে অস্থায়ী আওয়ামী লীগ কার্যালয় বন্ধ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির রুমানের বহিস্কারাদেশ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
শুধুমাত্র শেরপুরই নয়, কমপক্ষে দু’ডজন জেলায় কোন্দলের খবর রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। গত সাংগঠনিক সফরে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোন্দল নিরসনের পরিবর্তে তা আরও তীব্র আকার ধারন করেছে। এমনি পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে নিজেদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিরোধ রয়েছে খুলনা মহানগরীতেও। বরগুনা ও সাতক্ষীরায় দু’পক্ষের কোন্দল বিস্ফোরন্মেুখ পরিস্থিতিতে রয়েছে। নাটোরে কেন্দ্রীয় নেতারা কয়েক দফায় বসেও সমাধান করতে পারেনি। রাজশাহী, নওগা ও জয়পুরহাটের কোন্দল নিয়ে বসেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। হবিগঞ্জ ও ব্রা²নবাড়িয়ায় ইতিমধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে। হামলা থেকে বাচেননি সংরক্ষিত আসনের সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীও। জামালপুরেও কোন্দল তীব্র হচ্ছে। ইতিমধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে ফরিদপুরে। নরসিংদী ও নড়াইলের কোন্দলের সমাধান করা যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আওয়ামী লীগের মতো একটি বড়ো দলের নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই। কিন্তু এ নিয়ে কোনো কোনো এলাকায় মাত্রা ছাড়াচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি নিজেদের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে। নির্বাচনের আগে দলের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে তা দলের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। মঙ্গলবার আমরা শেরপুর জেলা নিয়ে বসেছিলাম। সেখানে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছি। তারাও নিজেদের মধ্যে বিরোধ মিটিয়ে চলার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :