আজ ২৬ বছর আগে ১৯৯২ সালের ২২ মে ঢাকায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় আমি আহত হই। তখন আমার বয়স ৩৬ বছর। পঙ্গু হাসপাতালে অপারেশন করা হয়। সে অপারেশনের পরিণতিতে আমার ডান পা স্ট্রেইট যায়, আর কখনো তা ভাঁজ করতে পারিনি। তাই ডান পা টেনে হাঁটতাম। ধর্মপ্রাণরা বলতেন - আল্লাহ আপনার ঈমান পরীক্ষা করছেন। পরিচিতরা বলতেন, এ আপনার পাপের কাফফারা। আমি জ্ঞানমতে জীবনে একটিই পাপ করেছি। তার জন্য বড় মাপের অর্থদন্ড দিয়েছি। যাহোক, ২০০২ সালে দু’পায়ে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হল। স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে না পারায় ক্র্যাচ নিতে বাধ্য হলাম। তারপর টাকা যোগাড় করে মাদ্রাজে গিয়ে অপারেশন করালাম।
তারা বললেন, ভালো যাবেন। হলাম না। জীবিকার প্রয়োজনে দু’টি ক্র্যাচ নিয়ে কষ্টকর বেদনার্ত জীবনের পথ চলা শুরু হল। দু জায়গায় দু’বেলা কাজ করি। নিয়মিত আরেকটি অনিয়মিত। কতবার পড়ে গেছি। অন্য কেউ টেনে তুলেছে। ধর্মপ্রাণরা বলতেন - আল্লাহ ঈমান পরীক্ষা করছেন। পরিচিতরা বলতেন, এ আপনার পাপের কাফফারা। ২০০৯ সালে ক্র্যাচ নিয়ে হাঁটাও বন্ধ গেল। ইনকিলাবের ২৩ বছরের চাকুরি ও বেতন গেল। কনসোলিডেটেড পে-র চাকরি। এক টাকাও পাইনি। ধর্মপ্রাণরা বললেন - আল্লাহ ঈমান পরীক্ষা করছেন। পরিচিতরা বললেন, এ আপনার পাপের কাফফারা।
২০০৯ সাল আজ ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছর বিছানায় শুয়ে আছি। আকাশ দেখি না, সূর্য দেখি না। ২০১৩ সালে সরকারের সমালোচনামূলক লেখার জন্য আওয়ামী লীগের অন্ধ ভক্ত ডিজি এত দুঃখ পেলেন যে, সেজন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ৩২ বছরের চাকুরিও গেল। গ্রাচ্ইুটি-প্রভিডেন্ট ফান্ডের ১ টাকাও দিল না। দেবেও না। ধর্মপ্রাণরা বললেন - আল্লাহ ঈমান পরীক্ষা করছেন। পরিচিতরা বললেন, এ আপনার পাপের কাফফারা। এখন আমার বয়স ৬২ পেরোতে চলেছে। বিছানায় শুয়েই প্র¯্রাব পায়খানা খাওয়া। উঠে বসতেও পারি না। ধর্মপ্রাণরা বলছেন - আল্লাহ ঈমান পরীক্ষা করছেন। আখিরাতে পুরস্কার পাবেন। পরিচিতরা বলছেন, এ আপনার পাপের কাফফারা। ঈমানের এত পরীক্ষা! এক পাপের কাফফারা আর কত দিতে হবে? বেহেশতের আশায় যে দুনিয়ার দিনগুলো চলে না, চলতে চায় না!
পরিচিতি: সিনিয়র সাংবাদিক ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল/ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :