শিরোনাম
◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে

প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০১৮, ১১:৫২ দুপুর
আপডেট : ২৩ মে, ২০১৮, ১১:৫২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ধামরাইয়ে ১৯ টি অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের নোটিশ!

মো. আল মামুন খান, ধামরাই: ঢাকার ধামরাইয়ে উর্বর জমিতে গড়ে উঠছে অবৈধ ইটভাটা। ফলে ধান, সরিষা, পাট, ভুট্টা, সবজিসহ নানা ফসলের আবাদ হয়, এমন উর্বর জমিতে গড়ে ওঠা এইসব অবৈধ ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে ফসলের।

ধামরাইয়ের আকাশে এখন কুণ্ডলী পাকানো কালো ধোঁয়ার আনাগোনা। বাতাসে বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে এই কালো ধোঁয়া। এই ধোঁয়াই জনজীবন বিপন্ন হওয়ার জন্য যথেষ্ট। ইট পোড়ানোর মৌসুম শুরু হওয়ায় ধামরাইয়ের এইসব ইটভাটার চিমনি দিয়ে বের হওয়া বিষাক্ত ধোঁয়াই লাখ লাখ মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।।

উপজেলার বায়ু দূষণের জন্য ৭০ শতাংশ দায়ী ইটভাটার এই বিষাক্ত কালো ধোঁয়া।
ধামরাইয়ে অধিকাংশ ইটভাটার বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও মাত্র কয়েকটি ইটভাটার সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নোটিশ প্রদান করেছেন উপজেলা প্রশাসন। নোটিশ প্রদানের অধিকাংশ ইটভাটা ৫-৭ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে।

নোটিশ পেয়ে যারা দেখা করেছেন তারা নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নোটিশের পর সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সাথে দেখা করলেই ইটভাটা বন্ধের আশঙ্কা দূর হয়ে যায়। ইটভাটা নির্মাণে স্থানীয়রা বাঁধা দিলে মালিকের পক্ষ থেকে চাঁদাবাজি মামলার ভয় দেখানো হয়। জনপ্রতিনিধিদের আপত্তি ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায় নতুন ইটভাটা নির্মাণের হিড়িক পড়েছে ধামরাইয়ে। চলতি বছরে ৩৮টি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানেও ফসলি জমিতে ১৫-২০টি ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, হাটিপাড়া ও ডেমরানে ৪টি, পাঁচলক্ষ্মিতে ২টি, বাস্তা ও সূত্রাপুরে ৪টি, বালিথা ও বারপাইকায় ৫টি, জালসায় ১টি, বাসনায় ১টি নতুন ইটভাটার নির্মাণ কাজ চলছে।

অবৈধ ইটভাটার মধ্যে বালিয়া ইউনিয়নের আর.বি.সি, কে.বি.এস, এ.আর.বি, কুশুরা ইউনিয়নে এম.আই.সি, হাসান ব্রিকস, এ.এম.এ ব্র্রিকস, সানোড়া ইউনিয়নের লামিয়া ব্রিকস, সুয়াপুর ইউনিয়নের এম.এন.বি, গোল্ড ব্রিকস, আমিন ব্রিকস, সূতিপাড়া ইউনিয়নের এশিয়া ব্রিকস, সোমভাগ ইউনিয়নের ঈগল ব্রিকস, সালাম ব্রিকস, মামা ব্রিকস, ক্যাপিটা অটো ব্রিকস, ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের লাকী ব্রিকসসহ ১৯টি ইটভাটার মালিককে সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নোটিশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। বন্ধ না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে বিভিন্ন নোটিশে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম জানান, পর্যায়ক্রমে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে নোটিশ প্রদান করা হবে। না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, কৃষি জমিতে ধামরাইয়ে প্রায় ২শ ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স নেই।

আরো একটি সমস্যা জানা গেছে স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে। ইদানিং ইটভাটার মাটির দালালদের অত্যাচারে ধামরাইয়ের কৃষকরা অতিষ্ট হয়ে পরেছে। উপজেলায় ৫০০'র ও বেশী ইটভাটার মাটির দালাল রয়েছে বলে জানা গেছে। আর দিনরাত তাদের অত্যাচারে কৃষকরা অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। এই দালালেরা নানা প্রলোভন দেখাচ্ছে কৃষকদের। এক ফুট মাটি কেনার কথা বলে কেটে নেয় দেড় থেকে দুই ফুট।এভাবেও সাধারণ কৃষকদের সাথে প্রতারণা করছে দালালেরা।

আর কোনো কৃষক মাটি বিক্রি করতে না চাইলে এরা ওই কৃষকের চারপাশের মাটি কিনে চার দিকে মাটি কেটে তার জমির ব্যপক ক্ষতি করছে। ফলে ধামরাইয়ের কৃষকদের ঘুম হারাম হতে চলেছে। মাটি বিক্রি না করলে নানা ধরণের হুমকি-ধামকি এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যহার সহ কৃষককে নাজেহাল করার ঘটনাও দিন দিন বেড়েই চলেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার কয়েকজন কৃষক নিজেদের অসহায়ত্বের কথা এভাবে জানিয়েছেন, 'ঘুমিয়ে থেকেও শান্তিতে নাই। কেননা ভেকু নিয়ে খেকুরা সবসময় প্রস্তত থাকে। কখন যে রাতের আঁধারে মাটি কেটে নিয়ে যাবে সে চিন্তায় আর ঘুম আসে না।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ক্রমবর্ধমান অবৈধ ইটভাটার আক্রণে ধ্বংস হচ্ছে ফলফলাদির গাছ। আর ধামরাইয়ের ১৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অনুমোদন (পরিবেশ ছারপত্র) না নিয়েই এসব ইট ভাটা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাচ্ছে। এসব ভাটায় ইট তৈরির জন্য জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে বিষাক্ত কয়লা। যা একাধারেমানূষ ও পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকারক।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী লাইসেন্স না নিয়ে ভাটা চালানো হলে জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া ইট তৈরির জন্য কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, পুকুর, খাল থেকে মাটি কেটে নিলেও জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তব অর্থে এসব আইনের কোনো ধারাই মানা হচ্ছে না ধামরাইয়ের ইটভাটার ক্ষেত্রে। প্রশাসনের নাকের ডগায় বছরের পর বছর ধরে চলছে এসব ভাটা। বিভিন্ন সময় স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা বিষয়টি প্রশাসনকে জানালেও দৃশ্যমান ও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি সরেজমিনে কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, ইট তৈরির জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৬ মাসের চুক্তিতে শ্রমিক আনা হয়েছে। যারা মাটি কাটা থেকে শুরু করে ইট তৈরি ও আগুন পুড়িয়ে তা বিক্রয়যোগ্য করছেন।

ইট তৈরির জন্য বিভিন্ন ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। বিধি লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ইট ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন হলেও এর ফল্প্রসূ কোনো প্রয়োগ এই এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহার করলে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং তিন লাখ টাকা জরিমানা, অথবা উভয় শাস্তি হতে পারে বলে জানা যায়। কিন্ত সকল কিছুই অমান্য করে চলছে এ সব। প্রশাসন নির্বিকার কেননা মাঝে মাঝে পরিদর্শণ করলে বিপুল পরিমান টাকা উঠানো যায়, তাই প্রশাসনের বিরুদ্ধে নজরদারির ব্যাপারে শৈথিল্যের অনেক অভিযোগ রয়েছে।

আরও উল্লেখ্য, অতিরিক্ত কয়লা পোড়ানোর ফলে নির্গত হচ্ছে ধূলিকনা, পার্টিকুলেট কার্বন, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার এবং নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ যা চোখ, ফুসফুস ও শ্বাসনালীতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়