শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০১৮, ০১:৪৩ রাত
আপডেট : ২৩ মে, ২০১৮, ০১:৪৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খুলনার নির্বাচন স্বচ্ছ ছিল না : সুজন

রুহুল আমিন : খুলনার নির্বাচন স্বচ্ছ, কারসাজিমুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। কারণ ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেননি। উল্টো সিল-সইবিহীন ব্যালটকে বৈধ ভোট হিসেবে গণনা করা হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এ তথ্য প্রকাশ করেন।

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী আগামী ৩১ অক্টোবর ২০১৮ থেকে ২৮ জানুয়ারি ২০১৯-এর মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। মানুষের মধ্যে এমন একটি ধারণা রয়েছে যে, ২০১৮-এর ডিসেম্বরেই হতে পারে এই নির্বাচন। আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জনমনে আস্থা সৃষ্টি করতে হবে। অন্যথায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতিগতভাবে আমরা নতুন সংকটের মুখোমুখি হবে পারি ।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী কর্তৃক হলফনামায় প্রদত্ত তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরেন দিলীপ কুমার সরকার। নবনির্বাচিত প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে তিনি বলেন, নবনির্বাচিত সর্বমোট ৩৯ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ১৮ জনেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তাঁর নীচে। পক্ষান্তরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারীর সংখ্যা ১৫ জন ৩৯ জন নবনির্বাচিত জন প্রতিনিধির মধ্যে ৭ জন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গ-ি অতিক্রম করতে পারেননি। পেশা সম্পর্কে বলেন, নবনির্বাচিত সর্বমোট ৩৯ জন জনপ্রতিনিধির মধ্যে ২৭ জনই ব্যবসায়ী।

তিনি বলেন, একটি নির্বাচন কেমন হলো, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিছু মানদ-ের দিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। মানদ- গুলো হচ্ছে (ক) ভোটার হওয়ার উপযুক্ত সকল ব্যক্তি ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছেন (খ) যেসব ব্যক্তি প্রার্থী হতে আগ্রহী, তাঁরা প্রার্থী হতে পেরেছেন (গ) প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূূর্ণ নির্বাচনের ফলে ভোটারদের সামনে বিকল্প প্রার্থী ছিল (ঘ) ভোট প্রদানে আগ্রহীরা নির্বিঘেœ ও স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পেরেছেন এবং (ঙ) ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া ছিল সচ্ছ, কারসাজিমুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য।

খুলনা সিটি কর্পোরেশন গত ১৫ মে ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে দৃশ্যত ব্যাপক এলাকা জুড়ে বড় কোনো ধরনের অঘটন ও সহিংসতা ছাড়া অনুষ্ঠিত হলেও নির্বাচনের সচ্ছতা ও সুষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেননা, অনেক ভোট কেন্দ্রে বিরোধী দলের পোলিং এজেন্ট না থাকা, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান, সিল-স্বাক্ষর বিহীন ব্যালটে প্রদত্ত ভোটকে বৈধ ভোট হিসেবে গণ্য করা, কেন্দ্রের সামনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর কর্মী কর্তৃক জটলা সৃষ্টি করে কোনো কোনো ভোটারের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, অনেক ভোটার কর্তৃক ভোট দিতে না পারা, নির্বাচনের আগে থেকেই বিরোধী দলের প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের গ্রেফতার ও হয়রানী করা, রিটার্নিং অফিসারের ওপর যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে সহায়তাকারী হিসেবে নিয়োগ করা ইত্যাদি ঘটনাবলী এ নির্বাচনকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাড় করিয়েছে। একটি ভোটকেন্দ্রে শিশু কর্তৃক ভোট প্রদানের খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এর মাধ্যমে ঘটবে গণতান্ত্রিক বিকাশ। কিন্তু দিন দিন আমরা এই গণতান্ত্রিক বিকাশের চর্চা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে সকল প্রার্থীরা হলফনামার মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ছিল তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নেওয়া। নির্বাচনে যে সকল অনিয়ম হয়েছে তার জন্য কারও অভিযোগ দায়ের করার অপেক্ষা না করে নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা নেওয়াটা তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন্তু তা আমরা তাদেরকে করতে দেখিনি, যা সত্যিই হতাশাজনক।

সুজনের সাধারণ স¤পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুজন নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ না করলেও পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেছে। এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ, তথা সচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কমিশন প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করেনি এবং হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ছিল বলে তিনি মনে করেন।

সুজনের নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজন করার ক্ষেত্রে আমরা নির্বাচন কমিশনকে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ করতে পারি। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচনটা ছিল তাদের জন্য একটা পরীক্ষা, যাতে তারা তৃতীয় বিভাগে পাশ করেছে। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন আয়োজন করার ক্ষেত্রে তাদের যে সাহস দেখানো দরকার ছিল তা তারা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।

সুজনের নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন কে একটি নতুন মডেলের নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করা যায়। নির্বাচনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া বা সহিংসতা হয়তো ততটা দেখা যায়নি কিন্তু ভেতরে ভেতরে নানা ধরনের অনিয়ম ঠিকই হয়েছে। নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তার অভাব দেখা যায় এবং ভোটারদের এক ধরণের ত্রাসের মধ্যে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে তারাও তাদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারেনি কারণ তাদের সরকারের কাছ থেকে রেজিষ্ট্রেশন করে সংস্থা চালাতে হয়। তবে মিডিয়া এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। মিডিয়াগুলোকে অনেক বিশ্লেষনাত্বক প্রতিবেদন করতে দেখা গেছে, যা ইতিবাচক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়