ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতে জ্বালানি তেলের দাম সর্বকালীন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। তাতে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ডিজেলের দামে বিরাট ফারাক তৈরি হয়েছে। ফলে সীমান্ত এলাকায় ডিজেলের চোরাচালান আচমকাই বেড়ে গেছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ যদিও দাবি করেছে ডিজেল পাচারের ঘটনা এখনও ততটা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছয়নি, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন কিন্তু এই চোরাচালানের ফলে এর মধ্যেই বিপুল রাজস্ব হারাতে শুরু করেছে - এবং সীমান্ত এলাকার পেট্রোল পাম্পগুলোতে তারা মনিটরিংও শুরু করেছে। - খবর বিবিসি
ভারতেও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারত যতদিন না জ্বালানি তেলে শুল্ক ও করের পরিমাণ কমাবে ততদিন এই পাচারের সমস্যা থেকেই যাবে। ভারতে ডিজেলের দাম এখন প্রায় প্রতিদিনই পুরনো রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে। বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের আসাম বা পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে ডিজেল বিকোচ্ছে প্রতি লিটার ৭১ রুপিতে, যা ৮৮ বাংলাদেশি টাকার সমান।
সেই জায়গায় বাংলাদেশের ভেতরে ডিজেলের দাম মাত্র ৬৫ টাকা লিটার - আর ঠিক সেই কারণেই সীমান্ত এলাকায় হঠাৎ করে বেড়ে গেছে জ্বালানি তেলের চোরাকারবার।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বা বিপিসি-র চেয়ারম্যান আকরাম আল হোসেনও এদিন জানিয়েছেন, তারা এই সমস্যা সম্পর্কে অবহিত। ওই সংস্থার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা মহম্মদ আবু হানিফও জানাচ্ছেন তাদের ভর্তুকি-দেওয়া ডিজেল যে ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে।
তিনি বলছিলেন, ‘আমাদের প্রতি লিটার ডিজেলে প্রায় বাইশ-তেইশ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। এখন আমাদের সীমান্ত এলাকার পাম্পগুলোতে ডিজেলের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে কি না বলা মুশকিল - তবে আমরা আমাদের সব তেল কোম্পানিকে বলেছি তারা যেন ওখানকার সব পাম্পে ভাল করে যাচাই-বাছাই করে তার পরেই তেল দেয়।’
‘আরও একটা ব্যাপার আছে। বেনাপোল বা বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে যে সব ট্রাক আসে তারা কিন্তু ট্যাঙ্ক প্রায় খালি করে ঢোকে আর যাওয়ার সময় তারা ট্যাঙ্ক পুরোটাই ভর্তি করে নিয়ে যায়। প্রতিদিন এভাবে একশো থেকে দেড়শো ট্রাকও কিন্তু একরকম সস্তার ডিজেল পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে বলতে পারেন’, বলছিলেন মি হানিফ। তবে ট্রাক ভর্তি করে ডিজেল ভারতে নিয়ে যাওয়া হলেও - ফেন্সিডিল বা এমন কী গরুর মতো অত সহজে এই দাহ্য পদার্থটি পাচার করা যায় না বলেই দাবি করছে বিএসএফ।
আসামের ধুবড়িতে বিএসএফ কমান্ড্যান্ট আর কে দুয়া বিবিসিকে বলছিলেন, ‘যে কোনও স্মাগলড জিনিস অনেক হাত ঘুরে যায় - তাদের সবাইকে খুশি রাখতে হয়।এমন কী ভারতে ডিজেলের দাম বাংলাদেশের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি হলেও এই মার্জিনটা তত লোভনীয় নয়। ‘একটা গরুর দাম ভারতে দশ হাজার আর বাংলাদেশে ২৫ হাজার, কাজেই সেটা পাচার করা হয়তো পোষায় - কিন্তু সীমান্তে দুই পারে ডিলার-এজেন্ট-দালাল-কুরিয়ার সবাইকে খুশি করে ডিজেল পাচারে ততটা কিন্তু মুনাফা করা সম্ভব নয়!’
তারপরেও ভারত-বাংলাদেশের মধ্যেকার চার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সীমান্ত দিয়ে ছোট ছোট জ্যারিকেন বা কন্টেনারে করে ডিজেল পাচারের ঘটনা সম্প্রতি খুব বেড়ে গেছে - আর সেটার কারণ ভারতে আকাশছোঁয়া দাম।
গবেষক অর্পিতা মুখার্জি বলেন, ডিজেলে বাংলাদেশের ভর্তুকি নয় - বরং ভারতের বসানো শুল্ক আর করই এই সমস্যার মূলে। ‘অন্য কোনও দেশ তেলে ভর্তুকি দিলে আপনার কিছু করার নেই। কিন্তু আমরা যেটা দেখতেই পারি, বাড়তি কর বা শুল্ক চাপিয়ে আমরা দামের ফারাকটাকে আরও বেশি বাড়িয়ে দিচ্ছি।
আপনার মতামত লিখুন :