শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ২১ মে, ২০১৮, ০৪:০৪ সকাল
আপডেট : ২১ মে, ২০১৮, ০৪:০৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিপুল সংখ্যক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধার সংখ্যা আনুমানিক দেড় লক্ষ। এই লক্ষাধিক মুক্তিযুদ্ধা ছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশেষ অবদান রয়েছে ৩০ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষের উপর বীরাঙ্গনা। তাছাড়া অস্বীকার করা যাবেনা সেই মা-চাচীদের অবদান, যারা রাতের গভীরে, হয়তো তখনো ছিল মাঘের কনকনে শীত অথবা বর্ষার ঝমঝমে বৃষ্টি-রান্নার খড়িগুলো বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। হয়তো তখন ছিল তার ঘরে শেষ সম্বল দেড়-কিলো চাউল, যিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাত রান্না করে অজানা-অচেনা মুক্তিযোদ্ধাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। অস্বীকার করা যাবেনা সেই বাবা-চাচাদের অবদান, যারা গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন, সাহায্য সহযোগিতা করেছেন।

সেই বোনটি, যার গলার হারটি মুক্তিযুদ্ধা ভাইয়ের হাতে দিয়ে দিয়েছেন- প্রয়োজনে খরচ করার জন্যে। সেই শিশুটি, যে হানাদার ও রাজাকারদের সঠিক খবরগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সরবরাহ করতো। সেই ছোটভাইটি, যার বাবা মারা গিয়েছেন, বড়ভাইটি যুদ্ধে গিয়েছেন, ছোটভাইটি তখনও হয়তো যথেষ্ট বুদ্ধিশুদ্ধিও হয়ে উঠেনি। বাবা-বড় ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে বিধবা মা, ছোটছোট ভাইবোনসহ সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে গেছেন। বাংলার সেই সব মানুষগুলো, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা শুশ্রুষা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করার জন্যে হয়তো তাদের ঘর পোঁড়া গিয়েছে, তাদের হত্যা করা হয়েছে, অপমানিত হয়েছে। সেই যুদ্ধ-শিশুটিকে কিভাবে ভুলে যাবেন? যার জন্ম একটি অনাকাঙ্খিতভাবে।

জন্মের আগেই বাবার পরিচয় নাই, জন্মের পর মায়ের দারিদ্রতা-অক্ষমতা-সামাজিক ভয় শিশুটিকে বাংলাদেশী হতে দেয় না। পোষ্য হয়ে অচিন দেশের অচিন লোকের সাথে অচিন জায়গায় চলে যায়। কঠিন এক জন্মের মাধ্যমে যে শিশুটি বাংলাদেশের জন্মে অবদান রাখে। অথচ জন্মের পর তার পরিবার-দেশ-সমাজ-ভাষা কিছুই সে উপভোগ করতে পারেনি। এটা ঠিক, মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন। এটাও ঠিক, মুক্তিযোদ্ধারা সফল হয়েছেন এসব সহযোদ্ধা আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার সহযোগিতার কারণে। এসব বিচারে রাজাকাররা বাদে বাংলাদেশের তৎকালীন সাত লক্ষ লোকের সবাই ই কম-বেশি মুক্তিযোদ্ধা।

সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার ব্যবস্থা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের আরো সুবিধা দেয়া হোক, তবে ৩০ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষাধিক বীরাঙ্গনাসহ অন্যসকলকে অস্বীকার করা কি অনুচিত নয়? যুদ্ধশিশুদের যারা বিদেশে আছেন তাদের সবাইকে তো শনাক্তই করা হয় নাই। তাদেরকে কি সম্মান স্বরূপ বাংলাদেশের পাসপোর্ট দেয়া যেত না? ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষাধিক বীরাঙ্গনা বা তাদের পরিবারের জন্যে কি করেছেন? আমাদের দেড় লক্ষ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তো বড় ধরনের ঘাপলা রয়ে গেছে। বিপুলসংখ্যক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, এমন কি রাজাকার এই তালিকাতে চলে এসেছে।

বহু প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্ধান পাওয়া যাই নাই বা মুক্তিযোদ্ধার তালিকাতে তাদের নাম আসে নাই। বর্তমান মুক্তিযোদ্ধার ৩০% কোটায় বীরাঙ্গনা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা নাতি-নাতনিদেরও অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি নয় কি? যদি নীতিনির্ধারণ করা হয়, দেড় লক্ষ সশ¯্র মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-নাতি-নাতনির সাথে আড়াই লক্ষ বীরাঙ্গনা আর ৩০ লক্ষ শহীদদের সন্তান বা নাতি-নাতনিদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তবে সার্বিক অবস্থাটা কি দাঁড়াবে?

বর্তমানে যে বীরাঙ্গনা ও শহীদদের সন্তান বা নাতি-নাতনিরা কোনো কোটা সুবিধা পাচ্ছেননা তা-কি অবিচার হচ্ছে না? বর্তমান অবস্থায় কোটার ৫৫% বাদ দিয়ে বাকি ৪৫% এ সাধারণ জনতাসহ বীরাঙ্গনা ও শহীদ সন্তান বা নাতি-নাতনিদেরও মেধার প্রমাণ দিতে হয়। তাই বীরাঙ্গনা ও শহীদদের প্রতি সম্মান রেখে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটার সংস্কার জরুরি ।

পরিচিতি : চাকরিজীবী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী/ মতামত গ্রহণ : নৌশিন আহম্মেদ মনিরা/ সম্পাদনা : জাফরুল আলম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়