শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২১ মে, ২০১৮, ১০:২৩ দুপুর
আপডেট : ২১ মে, ২০১৮, ১০:২৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দূষণে-দখলে মৃত দেশের অর্ধেক নদী

তারেক : দূষণে দখলে কাঁদছে নদীগুলো। দেশে প্রায় অর্ধেক নদী শুকিয়ে মরে গেছে গত ৪৭ বছরে। সরকারি তথ্যে নদ-নদীর সংখ্যা ছিল ৮০০-র মতো। শুকিয়ে এখন তার সংখ্যা নেমে এসেছে ৪০৫ এ। বেসরকারি তথ্যে এ সংখ্যা আরও কম ২৩০। উদ্বেগজনক এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন। গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর গড়ে দশটি নদী তার অস্তিত্ব হারাচ্ছে। ইতিমধ্যে দখল ও দূষণের কারণে বিলীন হয়ে গেছে ২৫টি নদী। বর্তমানে বিপন্ন নদীর সংখ্যা ১৭৪টি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নদীর পানির প্রবাহ ঠিক রাখা এবং দখল রোধের দায়িত্ব পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের। আর নদীর দূষণ ঠেকানোর দায়িত্ব পরিবেশ অধিদফতরের। সব মিলিয়ে নদী রক্ষার সঙ্গে জড়িত রয়েছে ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। নদীর অবৈধ দখল ও পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে তৈরি করা হয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন। বেসরকারি পর্যায়ে সংগঠনের সংখ্যাও কম নয়। তবুও দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নদী। এ পরিস্থিতিতে নদী রক্ষায় পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫ বছরে (২০১৫-২০৪০) ধাপে ধাপে কাজগুলো বাস্তবায়িত করা হবে। প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্পে বিভিন্ন স্থানে ২২০ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া নদী খননসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং নদীপথ সংরক্ষণের মাধ্যমে গড়ে ১৬ কিলোমিটার প্রশস্ততাকে ৭ থেকে ৮ কিলোমিটারে নামিয়ে এনে প্রায় ১ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার ভূমি পুনরুদ্ধার ও ৩৫০ কিলোমিটার নৌপথ সংরক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতেই (২৫ জানুয়ারি) নিজ কার্যালয়ে যমুনা-পদ্মা নদীর তীর নির্ধারণ, ভূমি পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন সংক্রান্ত এক প্রকল্পের রূপরেখা উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এসব বিষয় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নদীর গভীরতা বাড়িয়ে এবং প্রশস্ততা কমিয়ে ভূমি পুনরুদ্ধার করে সেখানে ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন বসতি ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী খনন এবং ক্রয়সংক্রান্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, নদী রক্ষায় নৌমন্ত্রণালয় ছাড়াও সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ কাজ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কাজ নদীর নাব্য রক্ষা করা।

তবে একসঙ্গে সব নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়, এক্ষেত্রে গুরুত্ব বোঝে আমরা কাজ করছি। সম্প্রতি নদী রক্ষায় সরকারের কাছে ১৬ সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-কৃত্রিম লেক, সমুদ্র সৈকতে ইঞ্জিনচালিত নৌকার পোড়া মবিল, তৈল, গৃহবর্জ্য, শহর, হাট-বাজার ও রাস্তা-ঘাটের ময়লা-আবর্জনা, প্লাস্টিক বোতল, পলিথিন ইত্যাদি ফেলা বন্ধের জন্য আইনগত পদক্ষেপ এবং জনসচেতনতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া।

নদীর সীমানা রক্ষায় স্থায়ী সার্ভে কমিটি গঠন করে ৩ মাস অন্তর অন্তর নদীর পাড় সরেজমিনে পরিদর্শন করে নৌমন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদফতর ও পরিবেশবাদী সংগঠনের কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়া এবং অবৈধ দখল থেকে নদী রক্ষায় দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু, কর্ণফুলি ও বংশি নদীর পানি রিসাইক্লিং করে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়া। সুপেয় পানির জলাধার সৃষ্টির জন্য ভরাট ও অর্ধভরাটকৃত মজা পুকুর এবং দীঘিগুলো খনন, পুনঃখননের আওতায় আনা, নদীবান্ধব অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুকল্পে নদী বন্দরগুলো পুনর্গঠন ও সংস্কার করা। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদি সুপারিশের মধ্যে রয়েছে শিল্পবর্জ্যের দূষণ থেকে নদী রক্ষায় শিল্পকারখানা ২৪ ঘণ্টা ইটিপি চালুর ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন হাওর-বাঁওড় ও বিলে পতিত নদী-নালাগুলোর উৎস মুখের বাঁধ অপসারণ করে নিম্নভূমিতে পানি প্রবাহ সচল রাখার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার সাদাত বলেন, বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে নদী দখল হচ্ছে, দূষণ হচ্ছে। ভরাট হচ্ছে। যারা এসব অবৈধ কাজ করছে, তারা অত্যন্ত ক্ষমতাশালী। যারা আইন অমান্য করছে, তাদের শাস্তির আওতায় না আনা হলে নদী বাঁচানো সম্ভব নয়। আইন সংশোধন করে কমিশনকে শক্তিশালী করা ও নদী আদালত গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন, আমাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নদী হারিয়ে যাচ্ছে। নদীকে বাঁচানো জরুরি। অন্যথায় অস্তিত্বের হুমকিতে পড়ব আমরাই।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, নদীর দখল, দূষণ ও অবকাঠামো নির্মাণ হলে তা ঠেকাতে শুধু সরকারের কাছে সুপারিশ করতে পারে নদী রক্ষা কমিশন। দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। এজন্য নদী রক্ষায় প্রয়োজন সমন্বিত আইন। দোষীরা যত শক্তিশালীই হোন না কেন, তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।।প্রতিদিন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়