শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২১ মে, ২০১৮, ০৭:৩২ সকাল
আপডেট : ২১ মে, ২০১৮, ০৭:৩২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘শরীর চলে না’ কাঙালিনীর, গাইতে হচ্ছে ‘জীবিকার তাগিদে’

বিনোদন ডেস্ক : পরানের বান্ধব রে, বুড়ি হইলাম তোর কারণে’ গানটি এক সময় মানুষের মুখে মুখে ঘুরত। দরাজ গলায় সেই গানটি গাওয়া কাঙালিনী সুফিয়ার ছবিটা ভেসে উঠত মনের অজান্তে। এরপর সময় পেরিয়ে গেছে বহু বছর। কাঙালিনীর বয়স বেড়েছে, গায়ের তেজটাও নেই আগের মতো। এরপরও গাইছেন। কিন্তু সেটা যতটা মন থেকে, তার চেয়ে বেশি জীবনের প্রয়োজনে।
রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারের জামসিংয়ের বাড়ি থেকে মুঠোফোনে প্রিয়.কমের কাছে এই কথাগুলো জানিয়েছেন কাঙালিনী সুফিয়ার একমাত্র মেয়ে পুষ্প।

২০ মে, রবিবার দুপুরে পুষ্প প্রিয়.কমকে জানান, লোক সংগীতের জনপ্রিয় শিল্পীর দিন আগের চেয়ে বেশ কষ্টে কাটছে। তারপরও জীবিকার তাগিদে এখনো অনুষ্ঠানে গাইতে যান। তা না হলে পাঁচ সদস্যদের সংসার চলবে না।
জামসিং এলাকায় তিন শতাংশ জমির ওপর একটি টিনশেড ঘরে মেয়ে পুষ্প ও নাতনিকে নিয়ে থাকেন এ শিল্পী। বার্ধ্যকের কারণে এখন আর খুব একটা বাড়ির বাইরে যান না। এ ছাড়া গান গাওয়ার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখন আর আগের মতো তার ডাকও পড়ে না। তাই সাভারের বাড়িতেই সময় কাটছে তার।

কাঙালিনীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে মেয়ে পুষ্প বলেন, ‘আছেন মোটামুটি, এখন বয়স হয়েছে। একটা শিল্পীর গান- বাজনা অনুষ্ঠান এগুলো যদি না থাকে, তাহলে তো আর তার মন ভালো থাকার কথা না। মন ভেঙে যায়। হাতে যদি পয়সা-কড়ি না থাকে, তাহলে তো আর মানুষের মন-মেজাজ ভালো থাকার কথা না। ভালো মানুষও তখন অসুস্থ হয়ে যায়। আমার মা’র অবস্থাও তাই। কোনোভাবে জীবন চলে যাচ্ছে। মা-ও সবকিছুই বোঝেন। কিন্তু কী করবেন?’

গত পয়লা বৈশাখে সর্বশেষ একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন কাঙালিনী। এরপর দীর্ঘদিন আর কোথাও গান গাওয়ার জন্য তার ডাক পড়েনি। এরপর একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে কাঙালিনী দুটি গান গেয়েছেন। সে জন্য তাকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। সে টাকা দিয়ে ধার শোধ করে টুকটাক করে সংসার চালাচ্ছেন।

পুষ্পর ভাষ্য, ‘দেনা ছিলাম। তা দিলাম। তা-ও পুরোপুরি না। দেনায় ডুইবা আছি। আরও মইরা যাইতাম, প্রধানমন্ত্রী যদি মাসে ১০ হাজার টাকা না দিত।’
‘তখন কাঙালিনী ঠিকই না খাইয়া মরত। অনেকেই মনে করে কাঙালিনী বুড়ি হইয়া গেছে, তাই আর সে কোনো গান-বাজনা আগের মতো করতে পারব না। কিন্তু একটা শিল্পী যতই বুড়া হোক না কেন, তার কণ্ঠ তো আর বুড়া হয় নাই। সেদিন একটি টিভি চ্যানেলে মা দুইটা গান গাইল। তখন তো দেখলাম, মা আগের মতোই গাইতে পারে। কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু মা’র তো আর আগের মতো ডাক পড়ে না’, বলেন পুষ্প।

কাঙালিনীর শরীরও আগের মতো এখন আর সাড়া দেয় না, যার কারণে বেশি দূরে যেতেও পারেন না। তার শরীর এই ভালো, তো এই খারাপ। কিন্তু পারিবারিক ব্যয় নির্বাহের জন্য নেওয়া ধারের টাকা তো শোধ করতে হবে। তাই যখন শরীর ভালো থাকে, তখন আর তিনি বসে থাকেন না। যেখানেই ডাক পান, সেখানেই ছুটে যান।

পুষ্প বলেন, ‘প্রায় চার লাখ টাকার মতো দেনায় আছি। আমার মায়ের তো কোনো ছেলে নাই যে, টাকা আয় করবে। আমাদের মোট পাঁচ সদস্যের সংসার। যে টাকাই আয় হয়, তা দিয়ে চলতে বেশ কষ্টই হয়।
আমি চাই আমার মা শেষ বয়সে যেন না খেয়ে মরে না। অন্তত ডাল-ভাত খেয়ে যেন মরতে পারে। এখন অনেক নতুন শিল্পী আছে। তাই পুরানো শিল্পীদের এখন আর কদর নাই। অথচ আমার মায়ের কত ভক্ত দেশ আর দেশের বাইরে রয়েছে! তারা তো মায়ের গান শুনতে চায়।’

রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির রামদিয়া গ্রামে জন্ম কাঙালিনীর, ১৯৬১ সালে। টুনি হালদার থেকে কাঙালিনী সুফিয়া হয়ে উঠার আগেই বাবা খোকন হালদার আর মা টুলু হালদারের ইচ্ছায় সুধীর হালদার নামের এক বাউলের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। কিন্তু সংসার করার স্বপ্ন কুঁড়িতেই শেষ হয়ে যায়।

বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে একমাত্র মেয়ে পুষ্পকে কোলে নিয়ে ঘর ছাড়েন কাঙালিনী। প্রথমে ভেবেছিলেন বাবার বাড়িতে যাবেন। কিন্তু অভিমান করে সেখানেও যাননি। বেছে নেন ভবঘুরে জীবন। এ সময় পরিচয় হয় বেলগাছির লালন সাধক দেবেন ক্ষ্যাপার সঙ্গে।

দেবেনের কাছেই গানের প্রথম তালিম নেন সুফিয়া। এটা ছিল অন্যরকম জীবনযুদ্ধ। তারপরই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
স্বাধীনতা যুদ্ধে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের রানাঘাটের লালগুলা ক্যাম্পে আশ্রয় নেন সুফিয়া। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে এলেও কপাল ফেরেনি তার। তাই বাধ্য হয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান।

প্রথমে হাইকোর্ট আর শাহ আলীর মাজারই ছিল কাঙালিনীর ঘরবাড়ি। এখানে-ওখানে গান গাওয়ার ডাক এলে ছুটে যেতেন। ওই সময় একদিন শিল্পকলা একাডেমির একটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে যান তিনি। সেখানে গিয়েই সুফিয়া হয়ে যান কাঙালিনী সুফিয়া। ঘুরে যায় শিল্পী জীবনের মোড়। সূত্র : প্রিয়.কম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়